সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক। প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন গণ–আন্দোলনে রূপ নিল, ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষকরাজনীতির সংকট, গত সাড়ে তিন দশকে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতাসহ নানা প্রসঙ্গে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া
গত কয়েক দিন দেশে যা ঘটে গেল, তাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: যা ঘটেছে, তা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়েছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনটি শুরুতে ছিল কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ও শান্তিপূর্ণ। তাদের দাবিগুলো ছিল যৌক্তিক এবং আমার ধারণা ছিল, যেহেতু তারা কোটাপদ্ধতির সংস্কার চেয়েছে, বিলুপ্তি নয়; দাবিগুলো নিশ্চয় মেটানো হবে। কিন্তু শুরু থেকেই যেভাবে এই শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ বিবেচনা করা হয়েছে এবং শক্তি প্রয়োগ করে আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে তাদের বিক্ষোভের মাত্রাটিই শুধু বেড়েছে।
সরকারি দলের নেতৃত্ব শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও আবেগকে বুঝতে পারেনি এবং আন্দোলনটি যে এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে, তা–ও ধারণা করতে পারেনি। আদালতের রায় শেষ পর্যন্ত দ্রুতই পাওয়া গেল, অথচ শুরুতে এর জন্য সময়ক্ষেপণ করা হলো। ফলে আন্দোলনটি তীব্র হলো এবং একপর্যায়ে তা শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। এরপর যা ঘটল, তা স্তম্ভিত করার মতো। এগুলোর যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন।
সমাজের সচেতন মহল এটা মনে করে যে কোটা সংস্কার–সংক্রান্ত পরিস্থিতি সহজেই সামাল দেওয়া সম্ভব ছিল। আন্দোলনটি ছিল শান্তিপূর্ণ, এর এমন পরিণতি হওয়ার কথা ছিল না। এর দায় কার?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: পরিস্থিতি অবশ্যই সহজেই সামাল দেওয়া যেত। আন্দোলনটির পেছনে শুধু মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের দাবিটি ছিল তা নয়, ছিল দীর্ঘদিনের জমে থাকা অনেক ক্ষোভ ও হতাশার বিষয়টিও। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু বৈষম্য বেড়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে দারিদ্র্য এখন ব্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের মুক্তচিন্তা প্রকাশের পথগুলো অবরুদ্ধ। তাদের ভিন্নমত প্রকাশের উপায় নেই। যেসব স্বভাবসিদ্ধ গুণ ও প্রকাশ তারুণ্যকে অপ্রতিরোধ্য করে, সেগুলো অবহেলা করা হয়েছে।
এর ফলে তাদের বিক্ষোভ যে একসময় অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে, তার লক্ষণগুলোও পরিষ্কার ছিল, কিন্তু সেসব সঠিকভাবে পড়ার কোনো প্রচেষ্টা সরকারের নেতৃত্ব নেয়নি। দায়টা তাই প্রধানত সরকারের। তবে যেসব ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ঘটেছে, তার জন্য তারুণ্যের বিক্ষোভকে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে, দায়টা তাদেরও। তবে এই দলগুলো যে এ সুযোগটা নেবে, এ বিষয় তো অবধারিতই ছিল, সরকার কেন এটি বুঝতে অপারগ হলো?
বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক গণ-আন্দোলন ও গণবিক্ষোভ হয়েছে, কিন্তু এই মাত্রায় বলপ্রয়োগ ও মৃত্যু আগে কখনো ঘটেনি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কী গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে বা কোন রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে একটি সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন আচরণ করতে পারে?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই যে এর আগে কোনো গণবিক্ষোভে এত প্রাণ ঝরে পড়েনি, এত রক্তপাত হয়নি। এর একটি কারণ সাড়ে তিন দশক ধরে চলে আসা রাজনীতির ক্রমাগত গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। আমাদের নির্বাচনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ, তাতে বহুদলীয় অংশগ্রহণ নেই, ফলে একটি সক্রিয় সংসদ নেই। এই রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি অনুপস্থিত। এর দায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের, তবে প্রধানত যাঁরা সরকার পরিচালনা করেন, তঁাদের। আমাদের রাজনীতিতে তারুণ্যের অংশগ্রহণ নেই, এই রাজনীতি প্রবীণসর্বস্ব। তারুণ্যকে বুঝতে এই রাজনীতি অক্ষম।
তা ছাড়া লাগামহীন দুর্নীতি, বিচারহীনতা, লুটপাটের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, বাজারজুড়ে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ, অতিকেন্দ্রিকতা এবং স্বার্থচিন্তা রাজনীতিকে বিপথগামী করে। এই রাজনীতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করায়।
আপনি একজন শিক্ষক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর প্রশাসন ও শিক্ষকদের বড় অংশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অভিযোগের শেষ নেই। আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশ বা ছাত্রলীগের হামলা থেকে রক্ষা করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এমন পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষক বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায় আসলে কতটুকু?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অনেক হতাশার মধ্যে আমার আশাবাদের জায়গাটা হচ্ছে তারুণ্য। যে অভিযোগগুলো শিক্ষার্থীরা করছে, তা সঠিক, তবে তাদের পাশে তরুণ এবং প্রতিবাদী অনেক শিক্ষকও দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু সার্বিকভাবে তঁাদের সব দাবির পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ ও প্রশাসন যে দাঁড়াবে, সেই সম্ভাবনাটুকু শেষ হয়ে গেছে ‘গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের’ পর দেশ পরিচালনায় সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আয়োজন শুরু হলে। উপাচার্যদের নিয়োগ দেওয়া শুরু হলো রাজনৈতিক বিবেচনায়। শিক্ষক নিয়োগেও তার ছায়াপাত ঘটল।
উপাচার্যরা সরকারের সব সিদ্ধান্ত মেনে নিতে শুরু করলেন, শিক্ষক সমিতিগুলো তাদের স্বাধীনতা ও প্রতিবাদী চরিত্র হারাল। সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনগুলো সব হলে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করল। ডাকসু-চাকসু হিমাগারে গেল। এখন কেউ আশাও করে না, প্রশাসন বা শিক্ষক সমিতি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে, যা সরকারকে অখুশি করবে। ১ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কিছু দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করলেন। একই সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলো। শিক্ষকেরা যদি শিক্ষার্থীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন, তাদের সমর্থন দিতেন, অনেক আগেই আন্দোলনটি নিষ্পত্তি হতো, শিক্ষকেরাও তাঁদের হারানো মর্যাদা অনেকটাই ফিরে পেতেন।
একজন প্রবীণ শিক্ষক হিসেবে আমিও এই অভিযোগগুলোর দায়ভার বহন করি।
দেখা গেছে, একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন হলের দখল নিয়ে সেখান থেকে ছাত্রলীগকে বের করে দিয়েছে এবং তাদের রুম ভাঙচুর করেছে। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ, গণরুম, টর্চার সেলের প্রতিক্রিয়াতেই কি এসব ঘটেছে? সে ক্ষেত্রে এসব চলতে দেওয়ার দায় তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে। এই কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছে বলে মনে করেন কি?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বটে, কিন্তু এর পেছনে আরও কারণ আছে, যেমন তাদের অধিকারহীনতা, তাদের রাজনৈতিক পরিসর ক্রমশ সংকুচিত হওয়া ও হলগুলোতে তাদের ওপর নানা নিয়ন্ত্রণ এবং অবশ্যই আপনি যেসব কারণ উল্লেখ করেছেন, সেগুলো। এই সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের, সরকার বদল হলেও ক্যাম্পাসে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন একই ভূমিকায় নামে। ক্রমে এর বিস্তৃতি বেড়েছে, অপ্রতিরোধ্য হয়েছে।
যত দিন সরকার কোনো উদ্যোগ না নেবে, কোনো প্রশাসনই একে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না। শিক্ষার্থীরা যেসব অমানবিকতার শিকার হয়, তা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে, কিন্তু এগুলো নিরসনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা শিক্ষকেরা যেদিন থেকে দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছি, সেদিন থেকেই আমাদের স্বাধীনতা এবং নৈতিক অবস্থানটিও হারিয়েছি। তবে আমি আশাবাদী, এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।
এই আন্দোলনে পুরো পর্বে আপনি দেশের বাইরে ছিলেন। সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে পুরো দেশকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। উত্তর কোরিয়া বা মিয়ানমারের মতো দেশগুলো এমন করে থাকে। দেশের বাইরে অবস্থান করে এ সময় দেশ নিয়ে আপনার কী মনে হয়েছে? বিদেশিরাই বা বিষয়টিকে কীভাবে দেখছে?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হলে যা হয় তা–ই হয়েছে, একটা রুদ্ধশ্বাস সময় গেছে, শঙ্কা ও উদ্বেগ কাজ করেছে। আমি বুঝেছি, সরকার এই আন্দোলনও পুরোনো পথেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবে, ফলে এটি সহিংসতার দিকে যাবে, কিন্তু তা যে এত আত্মঘাতী হবে, এত মানুষ প্রাণ হারাবে, তা ভাবতে পারিনি। যে বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের এত গৌরব, তা কী করে এমন তারুণ্য-অবান্ধব হতে পারে। আমি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। সে দেশের মানুষ বাংলাদেশ সম্পর্কে সামান্যই জানে। আর তাদের সংবাদমাধ্যম এখন ব্যস্ত নানা ব্রেকিং নিউজ নিয়ে। বাংলাদেশ নিয়ে যেটুকু সংবাদ চোখে পড়েছে, তাতে সহিংসতার বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে।
কোটা সংস্কার হওয়ায় দৃশ্যত শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হয়েছে। কিন্তু অনেকেই বলেছেন, এত মৃত্যুর পর বিষয়টি আর সেখানে নেই। আপনি কী মনে করেন?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: এটা তো এখন স্পষ্ট যে শিক্ষার্থীদের মূল দাবিগুলোর সঙ্গে এখন অনেক নতুন দাবি যুক্ত হয়েছে এবং যত দিন যাবে, দাবির তালিকা লম্বা হবে। তবে শুরু থেকেই যে আন্দোলনটি শুধু কোটা সংস্কারকেন্দ্রিক ছিল তা তো নয়, এর সঙ্গে যুক্ত ছিল শিক্ষার্থী হিসেবে, নাগরিক হিসেবে তরুণদের নানা অধিকার আদায়ের বিষয়গুলোও। শিক্ষার্থীরা তাদের হারানো রাজনৈতিক এবং আত্মপরিচয়ের জায়গাটা পুনরুদ্ধারের জন্যও আন্দোলনে নেমেছে। এগুলো এতটা স্পষ্ট যে এদের পড়তে না পারার কোনো কারণ তো নেই।
সরকার তাহলে কী করবে? আপনি কি মনে করেন সরকার শিক্ষার্থীদের বর্তমান দাবিগুলো মেনে নেবে?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: সব দাবি যে মেনে নেবে, তা মনে হয় না। তবে সরকারের বোঝা উচিত, এই শিক্ষার্থীরা প্রতিপক্ষ নয়। এরা তারুণ্যের কণ্ঠস্বর, দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের ওপর আস্থা রেখে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। তাদের দাবিগুলো মানলে বাংলাদেশ এগোবে, আরও গণতান্ত্রিক এবং মানবিক হবে। আমি আশা করি, সরকার আন্তরিকভাবেই আলোচনার সূত্রপাত ঘটাবে, তবে তার আগে মাঠটা সমান করতে হবে, আটক সবাই মুক্তি পাবে, তাদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো তুলে নেওয়া হবে। যারা প্রকৃত অপরাধী, আগুন–সন্ত্রাসী, তাদের বিচার অবশ্যই হবে, কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোনোক্রমেই যেন নিগ্রহের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকার এতগুলো মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টো মামলা হচ্ছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। আবু সাঈদ কীভাবে মারা গেছেন, তা সবাই দেখেছে। কিন্তু সেই হত্যা মামলায় ১২ দিন আটক ছিল একটি কিশোর। আপনি কি মনে করেন, সরকার সত্যিই এসব মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত ও বিচার করবে?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: আমার মনে হয় না আন্দোলনটি সরকার শুরুতে যতটা হালকাভাবে নিয়েছিল, এখন সে রকম নিচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, সরকার আন্দোলনটি মোকাবিলা করছে একটা নির্দিষ্ট ছকে, সেই পুরোনো ‘প্লেবুক’ অনুযায়ী, যাতে আছে দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার, তুলে নেওয়া। বাংলাদেশকে যদি আমরা ভবিষ্যতের রাজপথে তুলতে চাই, তাহলে এই প্লেবুক ফেলে দিয়ে নতুন একটি চর্চার সূত্রপাত ঘটাতে হবে, যার ভিত্তি হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা ও সহনশীলতা। এই চর্চা শুরুর একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি যদি কাজে লাগানো না যায়, তাহলে হতাশাই আমাদের সঙ্গী হবে।
তদন্ত কমিশনের যিনি প্রধান, তাঁর বক্তব্য শুনলাম। কমিশন যদি সত্যিকার আন্তরিকতা এবং বিচারিক নিরপেক্ষতা দেখাতে পারে, তাহলে নতুন চর্চার পথটা খুলবে। যদি না পারে, আমরা যে তিমিরে আছি, সেই তিমিরেই থাকব। সেই কিশোরকে জামিন দেওয়া হয়েছে। আমি চাই তাকে নিঃশর্তে মুক্তি এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।
এতগুলো মৃত্যু ও সরকার যেভাবে এই আন্দোলন দমন করেছে, তাতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের মধ্যে প্রবল ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবাদ বিস্তৃত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের তদন্ত ও বিচারের প্রতি মানুষ আস্থা পাচ্ছে না। এর পরিণতি তাহলে কী?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সাধারণ মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন। বিএনপি দীর্ঘদিন আন্দোলন করছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ তাতে অংশ নেননি। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর তাঁদের আস্থা নেই। এই শিক্ষার্থীরা অনেক দিন পর দলীয় রাজনীতির বাইরে এক অরাজনৈতিক আন্দোলনের সূত্রপাত করায় এত দ্রুত তাদের প্রতি সমাজের সমর্থন তৈরি হয়েছে। এখন সরকারের উচিত বিষয়টি অনুধাবন করা, আত্মবিশ্লেষণ করা এবং শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা। সরকার যদি গতানুগতিকভাবে এগোয় এবং তদন্ত ও বিচার সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হয়, তাহলে যে ক্ষতি হবে, তা শেষ পর্যন্ত হবে দেশের। এ তিন সপ্তাহের আন্দোলনে অর্থনীতি ও শিক্ষা মুখ থুবড়ে পড়েছে। আশা করি, সরকার দেশ ও মানুষের কথা মাথায় রেখে সময়োপযোগী কিছু পদক্ষেপ নেবে।
দেশের বর্তমান এই সংকটময় পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষক ও অভিভাবক হিসেবে সরকার ও জনগণের প্রতি কোনো আহ্বান বা অনুরোধ রাখতে চান কি?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: ২০১৮ সালের জুলাই-আগস্টে যখন স্কুলছাত্ররা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নামে, তাদের একজনের হাতে একটা ব্যানার দেখেছিলাম, যাতে লেখা ছিল, ‘রাষ্ট্রের মেরামত চাই’। প্রথম আলোতে একটি লেখায় আমি সরকারকে বলেছিলাম, এই শিশুদের দাবি মেনে রাষ্ট্র মেরামতে যেন হাত লাগানো হয়। সেই মেরামত শুরু হলে আজ এই আন্দোলন হতো না। সেই সুযোগ আবার এসেছে। এখন সবাইকে অনুরোধ করব, এটি কাজে লাগান।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।