কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তী সংঘর্ষ–সহিংস পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই ২০২৪) সন্ধ্যার পর থেকে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই ২০২৪) রাত থেকে সীমিত আকারে ইন্টারনেট চালু করা হয়। এ কয়দিনের প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকার অভিমত–বিশ্লেষণ পাতার লেখা ও সাক্ষাৎকার ধাপে ধাপে অনলাইনে প্রকাশ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই ২০২৪) এ লেখা ছাপা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
প্রায় ১৫ মাস ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরে সহিংসতা ও সংঘাত চলছে। এ অবস্থায় সেই রাজ্যের পরিস্থিতি কীভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল ইম্ফল রিভিউ অব আর্টস অ্যান্ড পলিটিকস-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং দৈনিক ইম্ফল ফ্রি প্রেস-এর সাবেক সম্পাদক প্রদীপ ফানজৌবামের কাছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের নির্বাচন থেকে শুরু করে মণিপুরের অস্থিরতা, মিয়ানমারের পরিস্থিতি ও দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের শক্তি বৃদ্ধির মতো একাধিক সাম্প্রতিক ও জটিল বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভজিৎ বাগচী
উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের মধ্যে চার রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বা তার শরিকেরা ২০১৯ সালে যেখানে ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটি পেয়েছিল, সেখানে এবার কিছুই পায়নি। আপনার কি মনে হয় মণিপুরে সহিংসতার কারণেই এমনটা হলো?
প্রদীপ ফানজৌবাম: এটা একটি কারণ, কিন্তু অন্যান্য কারণও রয়েছে। উত্তর-পূর্বের প্রতিটি রাজ্য নিজস্বভাবে ভিন্ন। একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল যে বিজেপি খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে। এটি মিজোরাম ও মেঘালয়ে হারের অবশ্যই একটা কারণ। নাগাল্যান্ডে ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী নেইফিও রিওর দলকে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার হাওয়া বা অ্যান্টি-ইনকামবেন্সির ধাক্কা সামলাতে হয়েছে। মিজোরামে কখনোই খুব একটা শক্তিশালী বিজেপি ছিল না।
সে ক্ষেত্রে আপনি কি মনে করেন যে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা যে কথা বলেছেন, খ্রিষ্টানরা বিজেপির বিরুদ্ধে সমষ্টিগতভাবে ভোট দিয়েছেন, তা কি ঠিক?
প্রদীপ ফানজৌবাম: তাঁরা খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে নানা কথা বলেছেন। এর ফলে খ্রিষ্টানদের মনে হয়েছে যে তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তারা বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।
* আত্মরক্ষার নামে সবাই অস্ত্র তুলে নিয়েছেন। এর একটা কারণও আছে। প্রত্যেকেই আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। * মিয়ানমারের পরিস্থিতি উত্তর-পূর্বের রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে। মণিপুরে অস্ত্র এবং মানুষ প্রবেশ করছে। এ ছাড়া রয়েছে মাদক ব্যবসা। * চীন যদি কোনো একটি অঞ্চল নিয়ে আগ্রহ দেখায়, তাহলে পশ্চিমাদের, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সেই অঞ্চল সম্পর্কে আগ্রহ বেড়ে যায়।
গির্জা ও উপাসনার স্থান আক্রমণ করা হয়েছে। এটা কেন?
প্রদীপ ফানজৌবাম: মণিপুরে ব্যাপারটা একটু আলাদা। মিডিয়া থেকে আমরা যা জানতে পারছি, তা বাস্তব থেকে একটু ভিন্ন। সব নাগা গির্জা দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কুকি চার্চ ভাঙা হয়েছে। সুতরাং এটি ধর্মচালিত হওয়ার পরিবর্তে বেশি জাতিগত বিরোধ।
মণিপুরে ভোটের ধরনও অনেকটাই আলাদা। মণিপুরে দুটি লোকসভা আসন রয়েছে। একটি উপত্যকায়—ইনার মণিপুর এবং অন্যটি পাহাড়ে—আউটার মণিপুর। মণিপুর উপত্যকায় (ইনার মণিপুর) বিজেপির হারের কারণ অ্যান্টি-ইনকামবেন্সি এবং সাম্প্রতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের অক্ষমতা।
আউটার মণিপুরে অর্থাৎ পাহাড় অঞ্চলে প্রবল ক্ষোভ ছিল। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোট দেওয়া হবে। ফলে ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন একেকজন প্রার্থী। দক্ষিণ মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর জেলায় যেখানে প্রবল সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে এ ধরনের ভোটের কারণে কোনো কোনো পোলিং বুথে একজন প্রার্থী প্রায় ১০০ শতাংশ ভোটও পেয়েছেন। অর্থাৎ সমষ্টিগতভাবে ভোটিং হয়েছে।
তবু চূড়াচাঁদপুরে ধর্ম একটা ফ্যাক্টর নয়। সেখানে অধিকাংশ বিধায়কই বিজেপির। গত নির্বাচনে তাদের আলাদা প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাদের রাগ ছিল। মণিপুরের দুটি জেলায় কুকিরা রয়েছেন। এর মধ্যে একটি জেলায় কুকিরা নির্বাচন বর্জন করে, শুধু নাগারা ভোট দেয়। তাই ভোট কিছুটা ভাগাভাগি হয়েছে।
মণিপুরে নতুন কেন্দ্রীয় সরকারের অবিলম্বে কোন সমস্যা নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত?
প্রদীপ ফানজৌবাম: একেবারে প্রথমেই দেখতে হবে কীভাবে এই শত্রুতা ও সহিংসতা বন্ধ করা যায়। তারপর অন্য কথা। প্রথম সপ্তাহের (হিংসার) পরেই গত বছরে কেন্দ্রের বলা উচিত ছিল যে রাষ্ট্র আইন নিয়ন্ত্রণ করবে, সবাইকে নিরাপত্তা দেবে। সেটা হয়নি। এখন আইন বিলুপ্ত বা বলা যায়, আত্মরক্ষার নামে সবাই অস্ত্র তুলে নিয়েছেন। এর একটা কারণও আছে। প্রত্যেকেই আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রাষ্ট্র সবাইকে সুরক্ষা দিতে পারলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতো।
এখন এখানে এত বেশি সেনা যে মানুষ সন্দেহ করছে, অন্য কোনো এজেন্ডা রয়েছে। রাজ্য সরকার সম্পূর্ণরূপে অক্ষম। কেন্দ্রীয় সরকার বিশাল বাহিনী মোতায়েন করেছে। তার সঙ্গে রাজ্যের বাহিনী যদি যোগ করা যায় তাহলে দেখা যাবে ৬০ থেকে ৭০ হাজার বা তারও বেশি নিরাপত্তারক্ষী এখানে রয়েছে। সেই কারণেই সন্দেহ দৃঢ় হচ্ছে। আমি মনে করি, কিছু পরিকল্পনা চলছে, সরকারের মধ্যেও কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে।
কী ধরনের পরিকল্পনা আছে বলে মনে করছেন?
প্রদীপ ফানজৌবাম: রাজ্য সরকার কার্যত অকেজো হয়ে গিয়েছিল। লড়াইয়ের যে কমান্ড, তার দায়িত্ব থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি সভা ডাকতে পারতেন, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারতেন না। কেন্দ্র তা করে। অমিত শাহ প্রকাশ্যেই বলেছিলেন যে উপত্যকায় পুলিশ এবং পাহাড় অঞ্চল কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করবে।
এটির ফলে বিভাজন বাড়ে। উপত্যকা সন্দেহ করতে শুরু করে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী কুকিদের পাশে রয়েছে। আর কুকিরা ভাবতে থাকে যে পুলিশ মেইতেই সম্প্রদায়ের পাশে রয়েছে। বাহিনীতে এ ধরনের বিভাজন থাকা অভিপ্রেত নয়। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নেওয়া এ সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আপনি কি মনে করেন উত্তর-পূর্বের দুই মুখ্যমন্ত্রী—আসামের হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং মণিপুরের বীরেন সিংয়ের ওপর বিজেপির অতিরিক্ত নির্ভরতা আগামী দিনে কমবে?
প্রদীপ ফানজৌবাম: আমি তাই মনে করি। হিমন্তের এনইডিএর (নর্থ-ইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স অর্থাৎ উত্তর-পূর্বে বিজেপি এবং তার শরিকদের জোট) নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু জোটের শরিক দিয়ে শাসিত সব রাজ্যই বিজেপি ও তার নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। অর্থাৎ বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। যদি তারা সতর্ক না হয়, তাহলে তাদের অবস্থা কংগ্রেসের মতো হতে পারে। কংগ্রেসও এখানে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। কেমন যেন মনে হয়, অতীতের একটা পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
ভয়েস অব দ্য পিপল পার্টি বা জোরাম পিপলস মুভমেন্ট জাতীয় স্বতন্ত্র স্থানীয় দলগুলো বিজেপি বা ইন্ডিয়ার সঙ্গে জোটবদ্ধ নয় এবং
তারা নির্বাচনে ভালো করেছে। কিন্তু উত্তর-পূর্বে আমরা দেখেছি, দলগুলো প্রায়ই কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলগুলোর সঙ্গে নিজেদের জুড়ে ফেলে। যেমনটি সম্প্রতি ত্রিপুরায় ঘটেছে। এ রকম সম্ভাবনা কি আছে?
প্রদীপ ফানজৌবাম: তারা কেন্দ্রের দলের সঙ্গে যেতে পারে। উত্তর-পূর্বের দলগুলো কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং শাসক দলের সঙ্গে জোট বাঁধতে চেষ্টা করে, যদিও এখানে বিদ্রোহীরাও রয়েছে। এর কারণ, তিন দশক আগে কেন্দ্র কখনো আঞ্চলিক দলগুলোকে বিশ্বাস করেনি। বিদেশি শক্তির রাজ্যগুলোকে অস্থিতিশীল করার অজুহাতে তারা বারবার সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বা দল ভাঙিয়েছে। এর একটা প্রভাব তো আছেই, বিশেষ করে দুর্বল রাজ্যে।
মিয়ানমারের প্রসঙ্গে আসা যাক। সেখানে পরিস্থিতি প্রতি মাসেই খারাপ হচ্ছে। এর কী ধরনের প্রভাব মিয়ানমার ও উত্তর-পূর্ব দুই অঞ্চলেই দেখা যাবে বলে আপনার মনে হয়?
প্রদীপ ফানজৌবাম: এটা নিয়ে বিশেষ দ্বিমত নেই, মিয়ানমারের পরিস্থিতি উত্তর-পূর্বের রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে। মণিপুরে, অস্ত্র ও মানুষ প্রবেশ করছে। এখানে সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে মাদক ব্যবসা। তবে যারা মিয়ানমার থেকে আসছে, সন্দেহ নেই তারাও বাধ্য হয়েই আসছে। সেখানে চূড়ান্ত দারিদ্র্য রয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক কারণেই তারা ঢুকছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, মিয়ানমারে কি এই বিশৃঙ্খলা অব্যাহত থাকবে এবং জান্তা উৎখাত হবে, নাকি শেষ পর্যন্ত টিকে যাবে। আমি কয়েকজন অভিজ্ঞ মিয়ানমার বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলেছি, যাঁরা ওখান থেকে কাজ করছেন। যেমন রিচার্ড হরসি (ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার উপদেষ্টা) বা এমা লেসলি (আন্তর্জাতিক মিয়ানমার পর্যবেক্ষক)। তাঁদের ধারণা, বিদ্রোহ অব্যাহত থাকবে এবং সামরিক বাহিনী বিভিন্ন অঞ্চলে সমস্যায় পড়বে। কিন্তু সার্বিকভাবে সেনাবাহিনীর সেখানে পরাজয় ঘটবে বলে কেউ মনে করেন না।
এর কারণ, বিরোধী বিদ্রোহীরা ঐক্যবদ্ধ নয়। কাচিনরা চিনদের বা চিনরা আরাকানদের, কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। পাশাপাশি ইরাবতী সমভূমিতে বামার সম্প্রদায়ের (সবচেয়ে বড় জাতিগত সম্প্রদায়) ভেতরেও বিরোধ রয়েছে।
এ ছাড়া পাহাড়ে জাতিগুলো ধর্মের ভিত্তিতে আলাদা। যেমন কাচিন বা চিন সমাজের মানুষ হলেন মূলত খ্রিষ্টান। তারপর আরাকান বা শানের মতো অঞ্চলের মানুষ মূলত বৌদ্ধ। একেকটি রাজ্যের মধ্যেই নানান জাতি-ধর্মের মানুষ রয়েছেন। অনেকটা উত্তর-পূর্ব ভারতের মতোই।
উত্তর-পূর্ব ভারতে আপনি বলতে পারবেন না যে এটি একটি ‘ব্লক’ এবং পাশেরটি অন্য একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ‘ব্লক’—সব মিলেমিশে রয়েছে। বিদ্রোহীরা জিতলে, তারা বিভিন্ন অসংলগ্ন অঞ্চলে জিতবে এবং এটা কখনোই ব্যাপক আকার ধারণ করবে না। কারণ, এদের নিজেদের মধ্যে কোনো বোঝাপড়া নেই। এ অবস্থায় যতক্ষণ না সেনাবাহিনী হাল ছেড়ে দিচ্ছে, ততক্ষণ তাদের হারার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া চীন মিয়ানমারের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী।
চীনের আগ্রহের বিষয়টা কী রকম?
প্রদীপ ফানজৌবাম: তাদের ভারত মহাসাগরে যাওয়ার কোনো সমুদ্রপথ নেই। যেহেতু তাদের সম্পদের একটা অংশ আফ্রিকা বা আরব উপদ্বীপ থেকে আসছে, তাই তাদের জন্য ভারত মহাসাগরে প্রবেশাধিকার থাকা গুরুত্বপূর্ণ, যা তাদের নেই। এ মুহূর্তে তারা মালাক্কা প্রণালি ব্যবহার করে ঘুরপথে যাওয়া-আসা করছে। প্রণালিটি যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং তারা ভারত মহাসাগরে ‘অ্যাকসেস’ (প্রবেশাধিকার) পাওয়ার জন্য মরিয়া। এ কারণে মিয়ানমারে যেই ক্ষমতায় থাকবে, চীন তার সঙ্গেই থাকবে। ফলে বিপুল অর্থ সে দেশে বিনিয়োগ করতে পারে।
এ মুহূর্তে চীন জান্তার সঙ্গে রয়েছে। যদি তারা বুঝতে পারে জান্তা হেরে যাচ্ছে, তাহলে চীন বিদ্রোহী দলগুলোকে ব্যবহার করবে, যাতে তারা শেষ পর্যন্ত চীনের থেকে দূরে সরে না যায়। অং সান সু চি ক্ষমতায় এলে তাঁকেও লালগালিচা দিয়ে বরণ করবে, যা তারা অতীতে করেছে। এগুলোর কারণ বহু। মিয়ানমারের সিত্তে থেকে চীনের কুনমিং পর্যন্ত একটি পাইপলাইন রয়েছে, মিয়ানমার চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের শরিক হয়েছে, যা মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে গেছে। এখন একটি উচ্চগতির রেলওয়ে যোগাযোগের কাজও হচ্ছে।
চীনের অপর একটি পথ রয়েছে। সেটি হলো পাকিস্তান হয়ে গদর বন্দরে পৌঁছানোর পথ। তবে সেই পথ দুর্গম, সেখানে বিপদও বেশি। সেখানে কারাকোরাম রেঞ্জ রয়েছে এবং এটি বেলুচিস্তানসহ এমন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গেছে, যেখানে পাকিস্তানের সরকার দুর্বল। সুতরাং মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে অপেক্ষাকৃত শান্ত স্থলপথ বেছে নেওয়াই চীনের জন্য সুবিধার হবে।
এখন দেখা যাচ্ছে যে চীন যদি কোনো একটি অঞ্চল নিয়ে আগ্রহ দেখায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমাদের, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সেই অঞ্চল সম্পর্কে আগ্রহ বেড়ে যায়। সেটাই এখানে ঘটছে। ফলে মিয়ানমার ধীরে ধীরে এমন একটা কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে, যেখানে ভবিষ্যতে হয়তো ‘শীতল যুদ্ধ’ দেখা যাবে।
এ রকম অবস্থায় বাংলাদেশের গুরুত্ব কতটা?
প্রদীপ ফানজৌবাম: ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারলে চীন খুশি হবে। কারণ, সে ক্ষেত্রে এ অঞ্চল দিয়ে তারা ভারত মহাসাগরে যেতে পারবে। এ ছাড়া আমি মনে করি, এর ফলে উভয় দেশেরই কিছুটা লাভ হবে। কারণ, অস্ত্র প্রতিযোগিতা কমে যাবে। কিন্তু আপাতত ভারত এতে রাজি হবে না। তাই চীন ক্রমেই বাংলাদেশ, নেপাল বা ভুটান ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবে।