দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান

বিএনপি আজ ক্ষমতায় থাকলে তারা বলত টিআইবি আওয়ামীপন্থী

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত পক্ষগুলোকে নিয়ে তারা ধারাবাহিকভাবে নানা তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনের নানা দিক, বাংলাদেশে সুশাসনের গতিপথ ও টিআইবির ভূমিকা নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঙ্গে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ সাবিহা আলম

প্রশ্ন

নির্বাচন নিয়ে সংশয় ছিল, নির্বাচন হয়েছে। নতুন সরকার কাজও শুরু করেছে। কিন্তু ভোটের হার কম, গ্রহণযোগ্যতার সংকটের কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। এ ধরনের সরকার সুশাসন নিশ্চিতে কী কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে?

ইফতেখারুজ্জামান: আমরা পুরো প্রক্রিয়াটি যাচাই করেছি আসলে রাজনৈতিক শুদ্ধাচার ও নৈতিকতার মানদণ্ডে। সুশাসনের মূলে থাকে জবাবদিহি। জনগণের যদি সরকারের ওপর আস্থা থাকে বা তারা যদি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে সরকারের জবাবদিহির যে মৌলিক ধাপগুলো আছে, তার প্রথমটা পূরণ হয়ে যায়। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী সরকার তো জনগণের। জনগণের রায়ের ওপর ভিত্তি করে জনগণ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার কাজ করে। তাই জন আস্থার বিষয়টা প্রথমেই আসে। সামনের দিনগুলোতে দেখতে হবে নীতিকাঠামো, আইন ও প্রতিষ্ঠানগুলোয় জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন কতটুকু ঘটছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে নীতিকাঠামো, আইনিকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের কাছে কতটুকু জবাবদিহিমূলক হলো।

প্রশ্ন

সেদিক থেকে সরকারের কাছ থেকে কতটা আশা করা যায়? আওয়ামী লীগ, স্বাধীন আওয়ামী লীগ ও নির্ভরশীল আওয়ামী লীগ এবং অন্য দলের হাতে গোনা কিছু সদস্য এই নিয়েই সরকার ও সংসদ...

ইফতেখারুজ্জামান: এর তিনটি আঙ্গিক আছে। প্রথমটা হলো বিতর্ক থাকবে। হয়তো চিরকালই থাকবে। এটা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। সুশাসনের বিষয়টা শুধু এই নির্বাচনের ওপর নির্ভরশীল নয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটা শাসনকাঠামো তৈরি হয়েছে। জবাবদিহির জন্য যে মৌলিক উপাদানগুলো থাকার কথা, সেগুলো কাগজে-কলমে আছে। কিন্তু সেগুলোর কার্যকারিতা খুবই দুর্বল। এর সঙ্গে এখন নতুন যে আরেকটি উপাদান যোগ হলো, তা হলো শাসনকাঠামোটা একচ্ছত্র হয়ে গেছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের সিংহভাগ ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী, যাঁরা স্বতন্ত্র, তাঁরাও ক্ষমতাসীন দলের সদস্য। তাঁদের পরিচিতি, রাজনীতি সবই হলো ক্ষমতাসীন দলের। আরও যাঁরা আছেন, তাঁরাও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকগোষ্ঠী। অল্প কিছু আছেন, যাঁরা এর বাইরে। সংসদের বিশাল অংশ যদি একটি দলের করায়ত্ত হয়, তখন শাসনকাঠামো একচ্ছত্র না বলে আর উপায় থাকে না। সরকারি কার্যক্রমে জনপ্রত্যাশা কতখানি প্রতিফলিত হবে, তার আগে যে বিষয়টি আসল, তা হলো জবাবদিহির কোনো কাঠামোই আর থাকল না।

প্রশ্ন

আর সংসদ?

ইফতেখারুজ্জামান: সংসদের কথা যদি বলি, সংসদ তখনই কাজ করে, যখন জনগণের প্রতিনিধিত্ব থাকে। তা ছাড়া তার কাজ আইন প্রণয়ন ও সংস্কার করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জনগণের পক্ষ হয়ে সরকারকে জবাবদিহি করা। এই তিনটি কাজের কোনোটিই বাস্তবে হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, এই সংসদে চেকস অ্যান্ড ব্যালান্স বলতে যেটা বোঝায়, সেটা অনুপস্থিত থাকবে। সংসদের সফলতা নির্ভর করবে যদি দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সংসদ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। এটা আমরা শুধু আশাই করতে পারি, আদৌ সম্ভাবনা কতটুকু তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাবে।

প্রশ্ন

আমরা একটু টিআইবির প্রতিবেদনের দিকে যাই। টিআইবি বলেছে নির্বাচন কমিশন সরকারের নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ভূমিকা নিশ্চিতে আইন সংস্কারের প্রস্তাব কমিশন করেনি। আরও বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। নির্বাচন কমিশনের কী করার ছিল?

ইফতেখারুজ্জামান: নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে টিআইবি ধারাবাহিকভাবে গবেষণা করেছে। আগের দুটি নির্বাচনেও আমরা পরিবীক্ষণ বা ট্র্যাকিং করেছি। আমরা আলাদাভাবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসেছিলাম। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিকভাবে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার এখতিয়ার আছে। আর সরকারসহ সব প্রতিষ্ঠানের কমিশনকে সহযোগিতা করার আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। আগের দুই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে সংকট দেখা গিয়েছিল।

এবার এই সংকট আরও প্রকট হয়েছে। বিএনপি যেটা বলছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে ধারণা, আমাদের সেদিকে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। নির্বাচনকালীন সরকারকে আমরা যে নামেই অভিহিত করি না কেন, তার ভূমিকাকে নিরপেক্ষ, স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত করা নিশ্চিত করা যায়। যে যে কারণে সরকারের পক্ষে নিরপেক্ষ বা স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত হওয়া সম্ভব নয় বা যে যে কারণে আস্থা সৃষ্টি করা যাচ্ছে না, সেগুলো চিহ্নিত করে কমিশন কিছু আইনি পরিবর্তন বা সংস্কারের প্রস্তাব তুলতে পারত। কমিশন যদি এটা করত, অন্তত তাদের মনে এই আত্মবিশ্বাসটা জন্মাত যে তাদের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা, সেটা তারা পূরণ করতে পারল।

প্রশ্ন

এ নিয়ে টিআইবির সঙ্গে কি কমিশনের কথা হয়েছে কখনো?

ইফতেখারুজ্জামান: আমরা সরাসরি তাদের সঙ্গে দেখা করেছি, এই সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবগুলো তাদের কাছে দিয়েছি। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এই প্রস্তাবগুলো যুক্তিযুক্ত, এগুলো উপস্থাপন করতে পারবে কি না, সেটা তারা বিবেচনা করবে। তারা সেটা করেনি। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন সময় বিতর্কিত এবং বিপরীতমুখী ভূমিকা রেখেছে। নির্বাচন সামনে রেখে কমিশন যে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেছিল, তাতে ১ নম্বর ছিল বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনা। যখন তাদের সামনে এই চ্যালেঞ্জ, তখন তাদের কী করা উচিত ছিল? তাদের উচিত ছিল নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করা। এই সুযোগ তারা নেয়নি বা এড়িয়ে গেছে। তারা বাধ্যবাধকতার যুক্তি দেখিয়েছে। কখনো বলেছে বিকল্প তাদের হাতে ছিল না। আমরা বলতে চাই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল, তারা কাজে লাগায়নি।

প্রশ্ন

নির্বাচন কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচনটাকে অংশগ্রহণমূলক করার চেষ্টা করল না...

ইফতেখারুজ্জামান: কেন করল না, সেই উত্তর নির্বাচন কমিশন দিতে পারবে। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে বিতর্কিত কিছু সংশোধনী এসেছে। তারপরও সার্বিকভাবে সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, সেটি যথাযথভাবে প্রয়োগের জন্য যে সৎ সাহস, মনোবল দরকার, সেটিও আমরা দেখতে পাইনি। হয়তো কোনো কারণে তারা চাপের মধ্যে ছিল। তার কিছু কিছু ইঙ্গিতও পাওয়া যায়। সে কারণে কমিশন হয়তো নিজেদের ক্ষমতাহীন ভেবেছে। কিন্তু সেটা তারা স্বীকার করতে চায়নি। দায়টা কমিশন নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে নিয়েছে।

প্রশ্ন

টিআইবি নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে একজন সংসদ সদস্যের কথা বলেছে, দেশের বাইরে বিপুল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তিনি হলফনামায়, আয়কর প্রতিবেদনে তার উল্লেখ করেননি। এ ক্ষেত্রে কমিশনের কিছু করার নেই?

ইফতেখারুজ্জামান: আইনগতভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে হলফনামার মাধ্যমে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা যদি অপর্যাপ্ত বা ভুল তথ্য হয়, তথ্য গোপন বা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত আয় যদি কেউ করে থাকেন, তাহলে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার আইনগত বিধান রয়েছে। নির্বাচনের আগে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ, তবে নির্বাচনের পরও কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে একা নির্বাচন কমিশন এই কাজ করতে পারে না, তার সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুক্ত হতে হয়।

প্রশ্ন

এবার যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের পারিবারিক পরিচয় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সরকারের সাবেক আমলা, অভিনেতা, খেলোয়াড়দের দেখলাম। প্রচুর ব্যবসায়ীও আছেন। রাজনীতি যে রাজনীতিকদের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, এর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে?

ইফতেখারুজ্জামান: যেকোনো পেশা হোক, ব্যবসায়ী, অভিনেতা বা খেলোয়াড় প্রত্যেকের কিন্তু রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার অধিকার আছে। এখানে কেউ বাধা দেবে না। আমাদের প্রশ্ন করারও কোনো সুযোগ নেই। দেখার বিষয় হলো বিশ্বব্যাপী যে গণতান্ত্রিক চর্চা তাঁরা কি সেই চর্চা করে রাজনীতিতে আসছেন, নাকি তাঁরা সরাসরি দলের মনোনয়ন পেয়ে যাচ্ছেন। এবার যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের ৬৫ শতাংশ ব্যবসায়ী। এঁদের বড় অংশ রাজনীতি না করেই এসেছেন। অনেকেই আছেন রাজনীতিক, যাঁর মূল পেশা ব্যবসায়ী। সেটা হতেই পারে। এর বাইরে অনুপ্রবেশ শব্দটা যদি ব্যবহার করি...মানে বলতে চাইছি স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অনেকেই আসছেন না।

প্রশ্ন

নির্বাচনের খরচ অতীতের যেকোনো নির্বাচনের খরচকে ছাড়িয়ে গেছে। টাকার অঙ্কে খরচ দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনেই ব্যয় হয়েছে ৫৪ ভাগ...

ইফতেখারুজ্জামান: নির্বাচন কমিশনের ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দেওয়া উচিত। ২০১৮ সালের তুলনায় ব্যয় কিছু বাড়বে। পাঁচ বছর আগের তুলনায় সবকিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু খরচের তো সীমা আছে। দেখা যাচ্ছে খরচ তিন গুণ বেড়েছে। হিসাব এখনো চলমান। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দায় আছে কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, সেটা প্রকাশ করার।

প্রশ্ন

আনসার-ভিডিপিকে ভোটারদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসার কথা উল্লেখ করেছেন আপনাদের প্রতিবেদনে...এর উৎস কী?

ইফতেখারুজ্জামান: যে আসনগুলো টিআইবির গবেষণার আওতায় এসেছে, সেখান থেকে আমরা তথ্যগুলো পেয়েছি। এর সঙ্গে গণমাধ্যমের তথ্য মিলে গেছে। যেটা হয়েছে, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দিক থেকেও বলা হয়েছে ভোটার উপস্থিতি জরুরি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অর্থ দাঁড় করানো হয়েছিল ভোটারদের অংশগ্রহণ। সেই হিসাবে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ শতাংশ ভোটার আনতে হবে এমন টার্গেট করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন অবশ্য বলেছিল, ১ শতাংশ ভোট পড়লেও বৈধতার কোনো সমস্যা নেই। সরকারি কর্মচারীদের অনেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে, কেউ অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশিত হয়ে ভোটকেন্দ্রে গেছেন। আবার অনেককে বলা হয়েছে সেবা পাবেন না। সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের আওতায় যাঁরা আছেন, তাঁদের ভাতা বঞ্চিত করা হবে, এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন

সরকারপন্থীদের অনেকেই বলার চেষ্টা করেন দুর্নীতি হলেও উন্নয়ন হচ্ছে। আগে উন্নয়ন হোক, পরে দুর্নীতির বিষয় দেখা যাবে। আপনি কী বলবেন...

ইফতেখারুজ্জামান: এই কথার মধ্যে আমি কোনো যুক্তি দেখি না। সোজা ভাষায় বলি, গত এক-দেড় দশকে আমাদের জাতীয় আয় বেড়েছে। আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা প্রশংসিত হয়েছি। কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে ধরুন, আমাদের জাতীয় আয় ৭ শতাংশ হিসাবে বাড়ছে। সরকারের ঘোষিত তথ্য হচ্ছে, আমরা যদি মধ্যম পর্যায়েও দুর্নীতি রোধ করতে পারতাম, তাহলে আমাদের আয় আরও ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ত। মানে আমাদের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ হতো। দুর্নীতির যে আর্থসামাজিক প্রভাব, সেটা আমাদের চোখের সামনে ঘটছে। কিন্তু আমরা দেখি না। দুর্নীতির মধ্যেই একটা অন্তর্নিহিত বৈষম্যমূলক উপাদান আছে। সাধারণত মানুষকে তার ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করে যে রোগটি, সেটি হলো দুর্নীতি। শুধু যদি সেবা খাতের দুর্নীতির কথা বলি, সেবা নিতে গিয়ে যাঁরা ব্যর্থ হন, তাঁদের ৭৪ শতাংশ বলেন, তাঁরা ঘুষ দিতে না পারলে সেবা পান না।

প্রশ্ন

টিআইবিকে সরকারের মন্ত্রীরা বিএনপির দালাল বলছেন...

ইফতেখারুজ্জামান: আজকে যদি বিএনপি ক্ষমতায় থাকত, তাহলে তারা বলত টিআইবি আওয়ামীপন্থী। আমরা কোনো পন্থী নই, আমরা নিরপেক্ষ। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য লোকপ্রশাসন প্রতিষ্ঠা। যে অপপ্রচার হয়, যেখান থেকে অপপ্রচার হয়—সেখানকার সবাই এর সঙ্গে একমত বলেও আমি মনে করি না। যখন যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, তাঁদের কাছে আমরা চক্ষুশূল। আবার বিরোধীদের কাছে আমরা প্রিয়। আমাদের সংস্কৃতিতে সমালোচনা সহ্য করার চল নেই।

প্রশ্ন

দেশ কোন দিকে এগোচ্ছে? আশা দেখেন কোনো?

ইফতেখারুজ্জামান: আশা আমার সব সময় আছে। আশা না থাকলে এ কাজ কবেই ছেড়ে দিতাম। আমাদের কাজের ফলে বেশ কিছু আইন হয়েছে, নীতিমালা হয়েছে। শুদ্ধাচার, দুর্নীতি দমন কমিশন এমন অনেক কিছু হয়েছে। সুফল যে জায়গায় পৌঁছানোর কথা ছিল, সেটা হয়তো হয়নি এখনো। যদি আমরা মনে করি টিআইবির কাজের সাফল্য নিরূপিত হবে, বাংলাদেশে দুর্নীতি কতটুকু নিয়ন্ত্রিত হবে তার ওপর, তাহলে আমাদের ভুল হবে। নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আমাদের নেই, এটা আমাদের কাজও না। কারণ, আমরা পুলিশ না, বিচারক না, দুদক না। যাদের কথা বলছি, তারা যেন তাদের ভূমিকাটা যথাযথ পালন করে সেই রকম পরিবেশ তৈরি করে দেওয়াটা আমাদের দায়িত্ব। দুর্ভাগ্যবশত যা হয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দুর্নীতি রোধের দায়িত্ব, তারাই দুর্নীতির অংশীদার।

প্রশ্ন

তরুণদের কাছে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া পান? আপনাদের তো দেশজুড়ে কর্মসূচি আছে?

ইফতেখারুজ্জামান: কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। একটা মেয়ে উঠে বলল, স্যার, আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী। সংবিধান পড়ি। সংবিধান আমার মুখস্থ। কিন্তু সংবিধানের মধ্যে তো আমি আমার নিজেকে খুঁজে পাচ্ছি না। তরুণেরা পরিবর্তন চান। তাঁরা বলে দুর্নীতি রোধ তাঁদের জন্য দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ।

প্রশ্ন

আপনাকে ধন্যবাদ।

ইফতেখারুজ্জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ।