শামস এল আরেফিন মূলত একজন মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ। বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল
মৃত্যু বা মৃত্যুহার কি একটি দেশের স্বাস্থ্যসূচক হতে পারে?
শামস এল আরেফিন: মৃত্যু হচ্ছে আউটকাম বা ফলাফল বা পরিণতি। মৃত্যুহার অনেক কিছুর ওপর নির্ভরশীল। হাসপাতালে অনেকে নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়। তখন বলা হয়ে থাকে নিউমোনিয়ায় কত লোক মারা যাচ্ছে। বলা হয় কেস ফ্যাটালিটি রেট কেমন বা কত? অর্থাৎ কত লোকের নিউমোনিয়া হচ্ছে, তার মধ্যে কত লোক মারা যাচ্ছে।
উদ্দেশ্য থাকে, নিউমোনিয়ায় যেন কোনো মৃত্যু না ঘটে। যদি মৃত্যু অনেক বেশি হয়, তখন আমরা বুঝতে পারি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বা চিকিৎসায় ত্রুটি আছে। মৃত্যুহার নিয়ে একটি দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বোঝা যায়। শিশু মৃত্যুহার যদি বেশি হয়, আমরা বুঝতে পারি দেশটিতে শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল। তাই মৃত্যু বা মৃত্যুহার স্বাস্থ্যসূচক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হলে বিষয়টির একটি সংজ্ঞা দরকার। মৃত্যুহার বলতে আমরা কী বুঝব?
শামস এল আরেফিন: মৃত্যু হচ্ছে একটি ঘটনা। আর মৃত্যুহার হচ্ছে সেই ঘটনার ধারা বা প্রবণতা।
আমরা শিশু মৃত্যুহার দিয়ে আলোচনা শুরু করি। এক হাজার জীবিত শিশু জন্ম নেওয়ার পর তাদের বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে যত শিশুর মৃত্যু হয়, তাকে বলা হয় শিশু মৃত্যুহার। এখানে হিসাবটা প্রতি হাজারে করা হচ্ছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট বয়সসীমায় মৃত্যুর সংখ্যা দেখা হচ্ছে।
আবার মাতৃ মৃত্যুর হিসাবটি অন্য রকম। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে এক লাখ মায়ের মধ্যে কতজন মারা যান, সেটি মাতৃ মৃত্যুহার। এখানে গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর ৪২ দিন সময় পর্যন্ত বিবেচনায় রাখা হয়। এখানে মায়ের বয়স বিবেচ্চ নয়।
মৃত্যুর আর একটি হিসাব বের করা ‘ক্রুড ডেথ রেট’–এর মধ্য দিয়ে। এক বছরে প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে কতজনের মৃত্যু হচ্ছে। এর মধ্যে নবজাতক থাকবে, শিশু থাকবে, মাতৃ মৃত্যু থাকবে, সব বয়সী মানুষ থাকবে। আবার সব কারণও থাকবে। বিভিন্ন রোগ, সড়ক দুর্ঘটনা, পানিতে ডোবাসহ সব কারণ। ‘ক্রুড ডেথ রেট’–এর হিসাবে সব বয়সী ও সব কারণ থাকে।
বাংলাদেশে বছরে কত মানুষ মারা যায়, এই হিসাব আমরা কীভাবে পাই? হিসাবটা কতটা নির্ভরযোগ্য।
শামস এল আরেফিন: বাংলাদেশে বছরে কত মানুষ মারা যায় তার একটি হিসাব আছে, তবে হিসাবটা অনুমিত। এটা গুনে বের করা সংখ্যা নয়।
মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা বের করার আদর্শ উপায় হচ্ছে নিবন্ধন। মৃত্যুর নিবন্ধন। অনেক দেশে সেই নিবন্ধনব্যবস্থা আছে। সেখানে প্রতিটি মৃত্যু নিবন্ধিত হয়। সেই নিবন্ধন থেকে বছর শেষে একটি সংখ্যা বের করা যায়। বাংলাদেশে মৃত্যু নিবন্ধনের একটি ব্যবস্থা বা পদ্ধতি আছে। কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে নিবন্ধন না হওয়ায় বছর শেষে মৃত্যুর অনুমিত সংখ্যা বের করা সম্ভব না।
আমাদের প্রাক্কলিত সংখ্যাটি আসে বিভিন্ন জরিপ বা সার্ভিলেন্সের ডেটা থেকে। জাতীয় কোনো জরিপ থেকেও না।
মিকস বা বিডিএইচএস থেকে মৃত্যুহারের একধরনের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। তাতে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। মিকস বা বিডিএইচএস থেকে সারা দেশের সব মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বলা ঠিক হবে না। মিকস বা বিডিএইচএস প্রতিবছর করা হয় না।
সেই অর্থে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে নিয়মিত ডেটা পাওয়া যেতে পারে এসভিআরএস থেকে। এসভিআরএস সারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। সর্বশেষ এসভিআরএস বলছে, দেশে বছরে প্রতি হাজারে মধ্যে ৫ দশমিক ৬ জন মানুষ মারা যায়। এখন বিডিএইচএস ও মিকসের মতো এসভিআরএসের ডেটা জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বশীল। সেটাই হয়তো গ্রহণযোগ্য সংখ্যা, প্রকৃত সংখ্যার কাছাকাছি।
আরেকটি হিসাব পাওয়া যায় ইন্টার-এজেন্সি মর্টালিটি এস্টিমেশন থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, ইউনিসেফ, ইউএন পপুলেশন ডিভিশন আরেক ধরনের মৃত্যুর হিসাব দেয়। তাদের হিসাবটা ডেটার মডেলিংয়ের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমি এ ক্ষেত্রে মডেল ব্যবহারের পক্ষে নই, আমি প্রাক্কলিত সংখ্যাই নেব।
মৃত্যুর সংখ্যা সঠিক হওয়া কেন দরকার?
শামস এল আরেফিন: দুটি প্রধান কারণে মৃত্যুর সংখ্যা সঠিক হওয়া দরকার।
মৃত্যুর সংখ্যা থেকে আমরা জানতে পারি, জনসংখ্যার তুলনায় কত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এক হাজার মানুষে বছরে একজনের মৃত্যু, এক হাজারে বছরে ১০ জনের মৃত্যুর মধ্যে বিরাট পার্থক্য। মৃত্যু বেশি হলেই মৃত্যু প্রতিহত করার প্রশ্ন আসে। তখন জানা যায়, কোন বয়সীদের বেশি মৃত্যু। যদি শিশু মৃত্যু বেশি হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে কেন এত বেশি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। আবার প্রশ্ন উঠতে পারে, কোন কারণে বেশি মৃত্যু হচ্ছে, তখন ব্যবস্থা অন্য। কিন্তু মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা হাতে না থাকলে মৃত্যু কমানোর উদ্যোগ সঠিক পথে এগোতে পারে না।
অন্য কারণটি হচ্ছে অধিকারবিষয়ক। জন্মের নিবন্ধন যেমন একটি অধিকার, তেমনি মৃত্যুর নিবন্ধন প্রত্যেক মানুষের জন্মগত অধিকার। অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় সঠিক সংখ্যা থেকে অর্থাৎ প্রতিটি মৃত্যু নিবন্ধনের মাধ্যমে। নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকলে মৃত্যুর পরও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়।
আগেও বলেছি, মৃত্যুর সংখ্যা থেকে একটি দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অনুমান করা যায়।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতির প্রমাণ হিসেবে বলা হয় গড় আয়ু বেড়েছে। প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল, গড় আয়ু—এসব শব্দের অর্থ কী? গড় আয়ুর হিসাবটা কীভাবে বের করা হয়? গড় আয়ু বৃদ্ধির সঙ্গে মৃত্যুর বা মৃত্যুহারের কী সম্পর্ক?
শামস এল আরেফিন: আজ যদি একটা নবজাতক জন্মগ্রহণ করে, তবে সে কত বছর বাঁচতে পারে? এটাই লাইফ এক্সপেক্ট্যান্সি অ্যাট বার্থ বা জন্মের সময় গড় আয়ু। এটা কোনো সাধারণ গড় নয়, বরং এটা সম্ভাবনার ধারণা। যদি আজকের অবস্থা আর মৃত্যুর ঝুঁকি চিরকাল একই রকম থাকে, তবে আজকে জন্ম নেওয়া নবজাতকের বাঁচার সম্ভাব্য বছর সংখ্যাই এই গড় আয়ু।
এ হিসাবটা একটু জটিল। প্রথমে নির্দিষ্ট স্থানের সব জীবিত মানুষের সংখ্যা ও বয়স এবং গত এক বছরে মৃত সব মানুষের সংখ্যা ও মৃত্যুর সময় বয়সের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর এ তথ্য থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষের মৃত্যুহার নির্ণয় করা হয়।
এ তথ্যগুলো ব্যবহার করে একটি লাইফ টেবিল বা জীবন–ছক তৈরি করা হয়, যেখানে প্রতিবছর শেষে একদল মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা গণনা করা হয়। এভাবে প্রতিবছর শেষে সেই একদল মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাগুলোকে একটি সমীকরণের মাধ্যমে গড় আয়ু নির্ণয় করা হয়।
এই গড় আয়ু সংখ্যা মূলত মৃত্যুহারের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি সমাজের বিভিন্ন বয়সের মানুষের মৃত্যুহার কমে আসে, তবে গড় আয়ু বাড়বে। বিশেষ করে যদি একটি দেশ নবজাতক ও শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে পারে, তবে সেই দেশের মানুষের গড় আয়ু সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়।
সুতরাং গড় আয়ু একটি দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বোঝার চমৎকার উপায়। এটি আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং জনস্বাস্থ্য উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্যের আলোচনায় মৃত্যু নিয়ে আলোচনা কম হতে দেখা যায়। আপনার কি মনে হয় না যে মৃত্যু নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার?
শামস এল আরেফিন: অপরিণত মৃত্যু কীভাবে কমানো যায়, সে প্রশ্নটি মাথায় রেখে মৃত্যুর আলোচনা হওয়া দরকার। চূড়ান্ত অর্থে মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু অপরিণত মৃত্যু কমানো সম্ভব।
মাতৃ মৃত্যু, শিশুমৃত্যু, এসব ক্ষেত্রে মৃত্যু কমানো সম্ভব। আমরা আমাদের দেশেই তা করেছি। একসময় অনেক মায়ের মৃত্যু হতো, এখন তা কমে এসেছে। একসময় পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে অনেক শিশুর মৃত্যু হতো, এখন তা কমে এসেছে। এখনো অনেক মায়ের বা শিশুর মৃত্যু হচ্ছে।
আমাদের দেখতে হবে ঘাটতিটা কোথায়? কোনো দেশে মাতৃ মৃত্যু আমাদের দেশের তুলনায় অনেক কম, একইভাবে শিশু মৃত্যু কম। আমাদের দেখতে হবে, ওই দেশগুলো কী এমন করেছে যে মাতৃ মৃত্যু কমে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে মাতৃ মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি সামাজিক কিছু উদ্যোগ, পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে শিশু মৃত্যু আমরা কমিয়েছি। আরও নতুন উদ্যোগ হাতে নিয়ে বা সফল বিবেচিত উদ্যোগগুলোর সম্প্রসারণের মাধ্যমে শিশু মৃত্যু আরও কমানো সম্ভব।
অর্থাৎ প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুও আছে। আরও কিছু উদাহরণ কি আমরা পেতে পারি?
শামস এল আরেফিন: আমরা একসময় কলেরায় অনেক মানুষ মারা যেতে দেখতাম। এখন দেখি না। কলেরার মতো জীবাণুবাহিত রোগ অর্থাৎ সংক্রামক রোগে মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। টিকা, ওষুধ, মানুষের সচেতনতার মাধ্যমে সংক্রামক রোগ অনেক কমেছে। আজ আর কলেরায় শত শত মানুষের মৃত্যু হতে শোনা যায় না।
কিন্তু এখন অসংক্রামক রোগে অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, ক্যানসার, স্ট্রোক, সিওপিডি, হৃদ্রোগে মৃত্যু বাড়ছে। এর কোনো কোনোটির সঙ্গে আয়ুষ্কাল বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে। কিন্তু এ কথা ঠিক যে এসব রোগে এখন যা মৃত্যু হচ্ছে, সেই সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। এর দুটো উপায় আছে। প্রথমত, এসব রোগ হতে না দেওয়া। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অনেক দায় আছে। মানুষের সচেতনতাও জরুরি যেন রোগটা না হয়। দ্বিতীয়, রোগ হলে ঠিক সময়ে যেন ঠিক চিকিৎসা মানুষ পায়। দেশে এখন যে মৃত্যু হচ্ছে তার ৬০ শতাংশের বেশি মৃত্যু হচ্ছে অসংক্রামক রোগের কারণে। এ হার কমিয়ে আনা সম্ভব। আনতে পারলে গড় আয়ু আরও বেড়ে যাবে। পৃথিবীতে এর উদাহরণ আছে।
মৃত্যু কমানোর জন্য কী করার আছে বা কী করতে হবে?
শামস এল আরেফিন: মৃত্যু অনিবার্য, এ কথা বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকার কোনো মানে হয় না। প্রথমে আমাদের দেখতে হবে অপরিণত বয়সে কাদের বেশি মৃত্যু হচ্ছে। যদি শিশু মৃত্যু বেশি হয়, তাহলে দেখতে হবে কেন শিশুমৃত্যু বেশি হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, কোন রোগে বা কারণে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। যদি দেখি হৃদ্রোগে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে, তাহলে হৃদ্রোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। হৃদ্রোগ যেন না হয়, তার জন্য মানুষকে সচেতন করতে হবে বা সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। আবার হৃদ্রোগ চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য আছে ওষুধ, প্রযুক্তি, জনবল, অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতাল ইত্যাদি। মানুষ হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত যেন হাসপাতালে পৌঁছাতে পারে, হাসপাতাল যেন চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। দ্রুততম সময়ে সঠিক চিকিৎসা হৃদ্রোগে মৃত্যু কমায়। এ ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায় হলো আর্থিক অসংগতি। একই কথা স্ট্রোকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আরও অনেক রোগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মোদ্দাকথা, এসব প্রতিরোধযোগ্য।
প্রতিরোধের চেষ্টা মানুষ, সমাজ বা রাষ্ট্র যা–ই করুক, যতটা করুক, তারপরও মৃত্যু হবে। এটাই অনিবার্য। তখন করণীয় কী?
শামস এল আরেফিন: দুই ধরনের করণীয়। প্রথমত, মৃত্যুর একটি হিসাব রাখা। কত মৃত্যু হচ্ছে, কোন কারণে হচ্ছে, তার হিসাব রাখা। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুনিবন্ধন হওয়া জরুরি। যেমন আমরা জন্মনিবন্ধনের কথা আমরা জোর দিয়ে বলি। কিন্তু মৃত্যুনিবন্ধনের কথা ততটা জোর দিয়ে বলা হয় না।
দ্বিতীয়ত, মৃত্যুসনদ বা ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া। মৃত্যুসনদ ওই মৃত ব্যক্তির কোনো কাজে আসে না ঠিকই, তবে এই সনদটাও জরুরি। দেশের জন্য, তার পরিবারের জন্য।
কিন্তু মৃত্যুসনদ নিয়ে তেমন আলোচনা নেই, মানুষের আগ্রহ নেই। কেন?
শামস এল আরেফিন: মনে রাখতে হবে, প্রতিটি মৃত্যু দৃষ্টিগোচর হওয়া বাঞ্ছনীয়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তা জানাতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে জানার ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়তো আছে। প্রথমত, মৃত ব্যক্তির আত্মীয়রা মৃতদেহের সৎকারের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মৃত্যুসনদের ব্যাপারে তাঁদের আগ্রহ থাকে না, প্রয়োজনীয়তাও বোধ করেন না। দ্বিতীয়ত, অনেকে মনে করেন, মৃত্যুসনদ জোগাড় করা একটি কাজ, এ জটিলতায় জড়ানো ঠিক না। পাশাপাশি মানুষ জানেও না এ বিষয়ে আদৌ কোনো কিছু আছে কি না।
এ ক্ষেত্রে করণীয়, আপনার সুপারিশ বা পরামর্শ কী?
শামস এল আরেফিন: জন্মসনদ মানুষের অনেক কাজে লাগছে। স্কুলে ভর্তি হওয়া, পাসপোর্ট তৈরি করা, চাকরির আবেদন করা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে। জন্মসনদ মানুষের অধিকার।
মনে রাখতে হবে, মৃত্যুসনদের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু একে সহজে তৈরি করা বা পাওয়ার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এখনকার পদ্ধতি সংস্কার ও সহজ করতে হবে। মৃত্যুসনদ পাওয়া মানুষের অধিকার। এ ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে, মানুষের মধ্যে চাহিদা তৈরি করার উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবারকে দায়বন্ধ করতে হবে। মৃত্যুর আগে প্রত্যেক মানুষ জেনে যাবে যে মৃত্যুর পর তার একটি মৃত্যুসনদ থাকবে। এটা তাঁর জন্মগত অধিকার।