এবারও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য রিয়াজুল কবীর কাওসার। সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুরুল ইসলাম।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে হলেও ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে এ ঘটনায় আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
রিয়াজুল কবীর: এবারের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সুন্দরভাবে হয়েছে। কিন্তু ভোট গণনা নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে কিছু মতবিরোধ দেখা দেয়। এর কারণে কিছু অনভিপ্রেত ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। সেগুলো নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টা যেহেতু তদন্তাধীন, তাই এটা নিয়ে আমি বেশি কিছু বলব না।
শুধু এবারই নয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গত দুটি নির্বাচনেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবী ও বিএনপি–সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে এসব ঝামেলা হয়েছিল। কিন্তু এবার ঘটনাটা একটু ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত একজন প্রার্থী দলীয় প্যানেলের বাইরে গিয়ে সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন। তিনি ভোট গণনা নিয়ে কিছু অভিযোগ তোলেন। এরপর তাঁর সমর্থক আইনজীবী ও বহিরাগতরা মারপিট করেন, নির্বাচন কমিশনারকে বাধ্য করেন তাঁকে সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দিতে। এ ঘটনাগুলোকে কীভাবে দেখছেন?
রিয়াজুল কবীর: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হয় না। এর ফলে কোনো প্যানেল বা কোনো প্রার্থীকে সরকার–সমর্থক বা আওয়ামী লীগের সমর্থক বলা যায় না। এখানে আছে নীল প্যানেল ও সাদা প্যানেল। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দিলেও কে কোন দলের সমর্থক, সেটা হয়তো বোঝা যায়।
একজন সম্পাদক প্রার্থীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত দায়। তাঁর দায় আওয়ামী লীগ বা সরকার নেবে না। এরই মধ্যে মামলা হয়েছে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিও হয়তো তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
গতবার পুলিশ আইনজীবী সমিতির ভবনে ঢুকে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের মারধর করেছিল। এবারও আইনজীবীরা হামলার শিকার হলেন। এটা কি আইনজীবীদের জন্য সম্মানজনক কিছু হলো?
রিয়াজুল কবীর: ঘটনাটা আইনজীবীদের জন্য কোনোভাবেই সম্মানজনক কিছু হয়নি। এতে বরং আইনজীবীদের সম্মান দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে এবার যা ঘটল, অনেকেই সেটাকে সরকারদলীয় আইনজীবীদের মধ্যকার বিভক্তির ফলাফল বলছেন। তাহলে এবার যা ঘটল, তার দায় কি পুরোটাই আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীদের ওপর পড়ে না?
রিয়াজুল কবীর: বিষয়টা এভাবে বলা যাবে না। কারণ, এ নির্বাচন তো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি। যে যার মতো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তা ছাড়া হামলার ঘটনায় সাবেক একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সুতরাং এটাকে আওয়ামী লীগের দলীয় বিরোধ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।
গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন আছে। কারও কারও মতে, জাতীয় নির্বাচনের এই প্রভাব এখন অন্যান্য ক্ষেত্রেও পড়ছে। আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো, সেটাও কি তারই প্রতিফলন?
রিয়াজুল কবীর: বিষয়টাকে এভাবে দেখা ঠিক হবে না। সংবিধান অনুসারে গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোন কোন দল কখনো নির্বাচনে এসেছে, আবার কখনো আসেনি। সেটা তাদের বিষয়। তবে তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন করতে না দেওয়ার কিংবা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটা চেষ্টা লক্ষ করা গেছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও তাদের এই চেষ্টা অব্যাহত ছিল।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি একটি পেশাজীবী সংগঠন। আইনজীবীদের পেশাগত মানোন্নয়ন এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখাই এর প্রধান কাজ হওয়া উচিত। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, কয়েক বছর ধরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে বিরোধ বা ঝামেলার কারণ হলো দলাদলি বা অতিরিক্ত রাজনৈতিকীকরণ। আপনি একজন আইনজীবী, এর পাশাপাশি রাজনীতিকও। এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?
রিয়াজুল কবীর: একজন ব্যক্তির একাধিক পরিচয় বা ভূমিকা থাকতে পারে। তিনি আইন পেশার পাশাপাশি রাজনীতিও করতে পারেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি দলীয় রাজনীতির জায়গা নয়। কিন্তু কোনো কোনো দল এটা করার চেষ্টা করছে। জাতীয় রাজনীতিতে যারা নির্বাচন বানচাল বা বর্জন করেছে, তারা এখানেও একই রকম কাজ করতে চাইছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রিয়াজুল কবীর: আপনাকেও ধন্যবাদ।