কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি)। গত সাত দিনে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ চরে অন্তত ৯টি গরু মারা গেছে। লাম্পি স্কিন রোগের কারণ, রোগের লক্ষণ ও সতর্কতা বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেনের সঙ্গে।
লাম্পি স্কিন রোগটি কী? কুড়িগ্রামে কখন প্রথম রোগটি সম্পর্কে জানা যায়?
মোশারফ হোসেন: লাম্পি স্কিন একটি ভাইরাসজনিত রোগ। লাম্পি স্কিন রোগ ২০১৯ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশে প্রথম চট্টগ্রামে দেখা দেয়। এরপর রোগটি ওই বছরের শেষের দিকে কুড়িগ্রাম প্রথম দেখা দেয়।
এই রোগ কীভাবে ছড়ায়?
মোশারফ হোসেন: মশা-মাছির কামড়ে এই রোগ এক পশু থেকে অন্য পশুর শরীরে ছড়ায়। এ ছাড়া লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত কোনো পশুকে ইনজেকশন দেওয়ার পর সেই সুই অন্য সুস্থ পশুর শরীরে ব্যবহার করলে সেখান থেকেও লাম্পি স্কিন রোগ ছড়াতে পারে। কুড়িগ্রামের তিনটি উপজেলা কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় এই বছর এই রোগ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে উলিপুর উপজেলার চরাঞ্চলগুলোয় সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
এই রোগের লক্ষণ কী?
মোশারফ হোসেন: লাম্পি স্কিন রোগ হলে প্রথমে পশুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, পশুর খাবারের রুচি কমে যায়, জ্বর বেশি হলে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়ায় গুটি গুটি ক্ষত হয় এবং কখনো কখনো দুই পায়ের মাঝে বুকের নিচে পানি জমতে পারে।
এই রোগের চিকিৎসা কী?
মোশারফ হোসেন: লাম্পি স্কিন রোগের এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা বা প্রতিষেধক নেই। আক্রান্ত পশুকে ঘন ঘন স্যালাইন পানি, বেশি বেশি কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে। শরীরে জ্বর বেড়ে গেলে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। তবে এগুলো কোনোটিই ভাইরাস রোগের চিকিৎসা নয়।
জেলায় লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত পশুর সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান আছে?
মোশারফ হোসেন: সঠিক কোনো পরিসংখ্যান আমাদের হাতে নেই।
আক্রান্ত পশুর মৃত্যুঝুঁকি আছে?
মোশারফ হোসেন: লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত পশুর মৃত্যুঝুঁকি খুবই কম। এই সংখ্যা আক্রান্ত পশুর শতকরা ৫ শতাংশ। তবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও বাছুর গরুর মৃত্যুঝুঁকি একটু বেশি থাকে।
এই রোগ ভালো হতে কত দিন সময় লাগে?
মোশারফ হোসেন: এই রোগ ভালো হতে সাধারণত ১৪ দিন থেকে সর্বোচ্চ এক মাস লাগে।
কৃষক বা খামারিদের সতর্ক করার জন্য কোনো ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়?
মোশারফ হোসেন: কৃষক ও প্রান্তিক খামারিদের লাম্পি স্কিন রোগ সম্পর্কে সতর্ক করতে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। ইউনিয়ন ভ্যাকসিনেটরদের মাধ্যমে কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত পশুর দেখভালসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।