মোহাম্মদ আজম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। পিএইচডি করেছেন ভাষার ইতিহাসের বিশেষ দিক নিয়ে। এ বিষয়ে তাঁর প্রকাশিত বই বাংলা ভাষার উপনিবেশায়ন ও রবীন্দ্রনাথ, বাংলা ও প্রমিত বাংলা সমাচার। সম্পাদনা করছেন চিন্তামূলক প্রবন্ধের কাগজ তত্ত্বতালাশ। প্রথম আলোর সঙ্গে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের প্রতিবন্ধকতা, করণীয়, মানভাষা বিতর্ক, বাংলা ভাষার সম্ভাবনা, ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনোজ দে
প্রথম আলো: ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর হচ্ছে। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম বিষয় ছিল সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন। এখনো সেটা হলো না কেন?
মোহাম্মদ আজম: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন যে প্রেক্ষাপটে হয়েছিল, তা থেকে যে আমরা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে চলে এসেছি, এই কথা কেউ বলছে না। কারণ, জাতীয়তাবাদী গল্পের মধ্যে ভাষা আন্দোলনটা এমনভাবে লীন হয়ে আছে যে আমরা সেই একই আলংকারিক ভঙ্গিতেই বলে যাচ্ছি। এখন আমরা দেখছি যে আমরা বরং উল্টো কাজ করেছি। বায়ান্নতে যে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়েছে, সেটাকে মোটামুটি প্রায় ভুলিয়ে দিয়ে আমরা সেটাকে মাতৃভাষা আন্দোলন হিসেবে দেখেছি। বায়ান্নর সঙ্গে মাতৃভাষার বিশেষ কোনো যোগ নেই। আলাপটা ছিল রাষ্ট্রভাষার। এতেই প্রমাণিত হয়, ভাষার ব্যাপারে আমাদের শুধুই আবেগের মতো বিষয়গুলো রয়ে গেছে। কিন্তু ভাষাসংক্রান্ত যে কার্যকরতা বা কার্যকর ব্যাপারগুলো, সেগুলো পিছিয়ে পড়েছে। সুতরাং সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন—এমন জাতীয়তাবাদী আবেগ দিয়ে এখন আর চলবে না। এখন নতুন প্রয়োজন, নতুন পরিপ্রেক্ষিত ও নতুন যুক্তির দিক থেকে আলাপটা তুলতে হবে।
প্রথম আলো: নতুন সেই যুক্তি কী বলে আপনি মনে করেন?
মোহাম্মদ আজম: যুক্তিটা খুবই সহজ। একটা হলো বাংলা ভাষার সঙ্গে মানুষের প্রাত্যহিকতার যে যোগ, সেটা এক জিনিস। আর কাজের যে যোগ, সেটা আরেক জিনিস। প্রথমে এই দুটিকে আলাদা করতে হবে। ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতার কারণে এবং এখনকার আমাদের এখানকার লোকের প্রচণ্ড বিদেশপ্রীতির কারণে আমরা এখনো প্রাত্যহিক আবেগের মধ্যে বাংলা ভাষাকে রেখে দিয়েছি। কাজের জায়গায় সেটাকে নিয়ে যেতে চাইনি। আবার যতটা ছিল, সেটাও আমরা ক্রমেই কমিয়ে নিয়ে এসেছি। মানুষের ভাষাটা আসলে কাজের জিনিস, সেটা প্রাথমিকভাবে আবেগের জিনিস নয়। ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সাংস্কৃতিকভাবে আবেগ নাহয় থাকল, কিন্তু কাজের ব্যাপারটা হচ্ছে প্রধান। মানুষের প্রথম ভাষাকে শিক্ষার কাজে, সমাজ গঠনের কাজে ও অফিস–আদালতের কাজে খাটানো যায়। এটাকে আইনগতভাবে ব্যবহার করে জনগণের অনেক বেশি কাছে আসা যায়। ভাষা নিয়ে আলোচনার ভঙ্গিটা তাই বদলানো দরকার।
প্রথম আলো: সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন না হওয়ায় জাতি হিসেবে আমাদের কী ক্ষতি হলো?
মোহাম্মদ আজম: জনগোষ্ঠী হিসেবে অবশ্যই ক্ষতি হয়েছে। ভাষাকে যে কাজে খাটানো যায়, সেটার প্রধান দিক হলো শিক্ষা। এখানকার বেশির ভাগ লোকের প্রথম ভাষা বাংলা ছাড়া শতভাগ শিক্ষা তো হবে না। অল্প কিছু লোকের শিক্ষা হলে ইংরেজি ঠিক আছে। কারণ, কিছু লোকেরই কেবল সেই পরিমাণ টাকা ও সময় থাকে যে তারা একটা দ্বিতীয় ভাষা শিখবে, তারপর পড়াশোনা করবে। যেকোনো সমাজে এ সুযোগ অল্প কিছু মানুষের থাকে। আদালত ইংরেজিতে চলছে। এ কারণে এর যে জনবিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে, সেটার প্রভাব তো বিপুল। কারণ, একজন লোক আইনের দ্বারা শাসিত হচ্ছেন, কিন্তু তিনি সেই আইন সম্পর্কে কিংবা যে ভঙ্গিতে তাঁর বিচারটা হচ্ছে, সেটা তিনি জানেন না। এটা শুধু অন্যায় নয়, এর অন্য প্রভাব আরও গভীর। সামাজিকভাবে আইনের প্রতি মানুষের যে শ্রদ্ধা, আইনের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া, নাগরিক হিসেবে তাঁর জীবনযাপনের সঙ্গে আইন ও আদালতের সম্পর্ক—এসব ব্যাপার ভয়ংকর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন না হওয়ার ক্ষতি আমরা মাপতে পারছি না। কিন্তু সেটা বিশাল।
প্রথম আলো: সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন যদি আমরা করতে চাই, তাহলে শুরুটা কোথা থেকে করা দরকার?
মোহাম্মদ আজম: শুরুর ক্ষেত্র হলো শিক্ষা। আমাদের শিক্ষার প্রধান সমস্যাটা কী? এটা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। আরবি-ফারসি-উর্দুতে এক অংশ পড়ছে, আরেক অংশ পুরো ইংরেজিতে পড়ছে, আরেক অংশ বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে পড়ছে, আরেক অংশ বাংলার নামে ইংরেজি ভার্সনে পড়ছে। কিন্তু শিক্ষাটা হওয়া উচিত ছিল প্রথম ভাষা বাংলায়। এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষা শিখবে। সারা পৃথিবীতে এটাই তো হচ্ছে। প্রথম কাজটা হবে শিক্ষাকে নতুন করে সাজানো। এ দেশের ভদ্রলোক শ্রেণি আর বাংলা ভাষায় পড়াশোনা করে না। যারা ইংরেজি কিনতে পারে না, তারাই কেবল বাংলায় পড়ে। আর যারা সেটাও পারছে না, তারা মাদ্রাসায় পড়ছে কিংবা পড়ছে না। এটা একটা ভয়াবহ অবস্থা। রাষ্ট্র তো সেই শ্রেণিই চালাচ্ছে, যারা ইংরেজি কিনতে পারছে। চূড়ান্তভাবে সব ধরনের শিক্ষায় বাংলাকে প্রয়োগ করতে হবে।
প্রথম আলো: এটা কীভাবে করা সম্ভব?
মোহাম্মদ আজম: এটা এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন। আমি এর আগে বহুবার প্রস্তাব দিয়েছি, আমাদের ইংলিশ মিডিয়ামগুলোয় কার্যকরভাবে বাংলার প্রচলন করতে হবে। কেননা এই মুহূর্তে ইংলিশ মিডিয়াম সম্পর্কে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নেই। ইংলিশ ভার্সন বলে যে শিক্ষাপদ্ধতি আছে, সেটা পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়। মূল ধারার শিক্ষায় কার্যকরভাবে ইংরেজি শিক্ষাটা বাড়াতে হবে। কেননা জনগোষ্ঠীর ইংরেজির চাহিদা আছে। সে ক্ষেত্রে সরকার ব্যবস্থা নিতে বাধ্য। কিন্তু বাংলাকে বাদ দিয়ে নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আমাদের উচ্চশিক্ষায় বাংলা আসলে নেই। এটা লোকে আসলে দেখে না অথবা জানে না অথবা দেখেও না দেখার ভান করে। আমাদের এখন একটা লক্ষ্য নিয়ে এগোনো দরকার। সেটা হলো উচ্চশিক্ষায় যাতে বাস্তবিকই বাংলাকে অন্তত অর্ধেক প্রতিষ্ঠা করা যায়। বাংলা যেটা বাদ পড়ে গেছে, সেটাকে উচ্চশিক্ষায় ঢোকানোই এই মুহূর্তের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
প্রথম আলো: মানবাংলা নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক রয়েছে। এখনকার মানবাংলা নিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মানবাংলা এটা নয়। এটি কি পরিত্যাজ্য বা নতুন করে প্রণয়ন করা উচিত কি না?
মোহাম্মদ আজম: মানবাংলার প্রশ্নটা ঠিক ঔচিত্যের প্রশ্ন নয়। এটা হলো ভদ্রলোকেরা যে ভঙ্গিতে কথা বলে, লেখার মধ্যে সেটা অনুকরণের চেষ্টা। আমাদের এখানে বিষয়টা যে ঔচিত্যের প্রশ্ন হিসেবে এসেছে, এর প্রধান কারণ দুইটা। প্রথমত, উনিশ শতকে ঔপনিবেশিক আবহে মানভাষা যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন প্রচলিত যে ভাষা, সেটার বদলে সংস্কৃত ও ইংরেজি প্রযোজিত একটা শুদ্ধতা আরোপিত হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, যখন ঢাকা রাজধানী হলো, তখন আবার কলকাতায় তৈরি হওয়া ভাষাটা এখানে আরোপিত হয়েছে। এ দুই প্রেক্ষাপটে ঔচিত্যের প্রশ্নটা সামনে চলে এসেছে। এর মানে হচ্ছে মানবাংলার যে আলাপ এখানে আছে, সেটা অর্থহীন।
প্রথম আলো: একাডেমি, সরকারি দপ্তর, গণমাধ্যম ও জনগণের বিভিন্ন স্তরের ভাষার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। এটাকে কি একটা বড় সমস্যা বলে মনে করেন? এ ক্ষেত্রে করণীয়টা কী?
মোহাম্মদ আজম: পৃথিবীতে একক ভাষা অসম্ভব। আমরা আমাদের ভাষাকে যে বাংলা নাম দিয়েছি, সেটা কিন্তু ভাষাবিজ্ঞানসম্মত নয়। ভাষা সব সময় শ্রেণি, গোষ্ঠী ও অঞ্চলে বিভক্ত। বাকতিন স্কুলের পণ্ডিতেরা তো বলেন, প্রত্যেক মুহূর্তের ভাষা আলাদা। আমাদের সরকারি দপ্তরের ভাষা নিয়ে আলাপ হয়, আমাদের আদালতের ভাষা নিয়ে আলাপ হয়, কিন্তু মূল আলাপটা সমাজে একদম অনুপস্থিত। সরকারি দপ্তর বা আদালতের ভাষা নিয়ে আলাপ না করে আমাদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ভাষা নিয়ে আলাপ করা। আইন বিভাগ যত দিন পর্যন্ত বাংলার প্রয়োগটা না করছে, তত দিন পর্যন্ত উচ্চতর আদালতে বাংলা চালু হবে না। কেননা এটা যেমন মানসিকতার ব্যাপার, আবার তেমন চর্চার ব্যাপারও। যিনি বাংলায় আইনগুলো শেখেননি, বাংলায় খসড়া করা শেখেননি, তিনি কী করে রায়টা বাংলায় দেবেন? আমাদের প্রধান সমস্যাটা উচ্চশিক্ষার ভাষার ক্ষেত্রে রয়ে গেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সর্বতোভাবে বাইরে চলে গেছে, এই অবস্থা জারি রেখে সমাজে বাংলা চর্চার যেকোনো আলাপ ভিত্তিহীন। রাষ্ট্রকে যদি জনলগ্ন হতে হয়, তাহলে বাংলায় ফিরতে হবে। ভাষার সঙ্গে মানবকল্যাণের প্রশ্নটা জড়িত।
প্রথম আলো: ইন্টারনেটের কারণে নতুন নতুন শব্দ আসছে। কেউ কেউ বলছেন এতে শব্দ ও ভাষার ব্যাপক অপপ্রয়োগ ও বিচ্যুতি দেখা যাচ্ছে। আপনি এটিকে কীভাবে দেখেন?
মোহাম্মদ আজম: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা অনলাইনে যে ভাষা ব্যবহৃত হয়, সেটা নিয়ে আমি মোটেই উদ্বিগ্ন নই। সেটা যদি বাংলা ভাষার বিচ্যুতি ও ক্ষতির কারণ হয়, সেটা ১-২ শতাংশ মনোযোগ পাওয়ার মতো ব্যাপার। এটাকে আমি বিচ্যুতি বলব না, এটা পরিবর্তন। এই বিচিত্র ধরনের পরিবর্তনের কারণেই কিন্তু ভাষাগুলো সজীব থাকে।
প্রথম আলো: বড় ভাষাগুলো ব্যাকরণ ও বানানরীতি সরল করে নিয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখনো একটা মাপকাঠি তৈরি হয়নি। পণ্ডিতদের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে। এটা কীভাবে কমিয়ে আনা যাবে?
মোহাম্মদ আজম: আমাদের ব্যাকরণের একটা ঔপনিবেশিক ইতিহাস রয়েছে। প্রথম দিকে অনেকগুলো ব্যাকরণ লিখেছিল ইংরেজরা। ওদের প্রয়োজনে নিজেদের মতো লিখেছিল। কিন্তু সেই ইতিহাস দিয়ে শত শত বছর চলতে পারে না। ২০১১ সালে বাংলা একাডেমি যে ব্যাকরণ করেছে, অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সেটা অসাধারণ কাজ। আমাদের এখানে ব্যাকরণসংক্রান্ত যে সমস্যা, সেখান থেকে এটা অনেকটাই মুক্তি দিতে পারে। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। বাংলা ভাষা মার খেয়েছে দুই কারণে। প্রথমত, ভারতে বাংলাভাষীরা তাদের ভাষাটাকে খুব বাস্তব কারণেই কেন্দ্রীয় ভাষা হিসেবে দেখতে পারে না। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে হীনম্মন্যতার কারণে ও ঐতিহাসিক নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা ভাষাটাকে কাজে খাটাতে পারিনি। ফলে ৩০ কোটি মানুষের যে বিরাট বাংলাভাষী জনগোষ্ঠী, সেখানে বাংলা ভাষাটা উপস্থিত করাই যায়নি। এটা একটা অসাধারণ ক্ষমতার বিষয় যে বাংলা ভাষার যেকোনো উৎপাদনের ভোক্তা ৩০ কোটি। কিন্তু এই পদ্ধতিতে আজ পর্যন্ত ভাবা যায়নি। অথচ কে শুদ্ধ বাংলা বলল, কে ইংরেজি মিশিয়ে বাংলা বলল, কার ভাষাপ্রেম বেশি, ভাষাকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদ প্রগতিশীল কি না—এসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রত আছি। যদি সত্যি সত্যি বাংলা ভাষার ক্ষমতাটা তৈরি হয়, তবে ব্যাকরণ এর তোড়ে ভেসে যাবে। ভাষা তো ব্যাকরণকে অনুসরণ করবে না। আমরা ভাষাকে সেই ক্ষমতার দিকে নিইনি। আমরা ভাষাকে নিয়ে গেছি প্যানপেনে আবেগের দিকে। জনগণকে স্রেফ বোকা বানিয়ে শোষণ করার অস্ত্র করে তুলেছি ভাষাকে।
প্রথম আলো: এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ব্যাকরণের মধ্যে সমন্বয় দরকার কি না?
মোহাম্মদ আজম: বাংলা একাডেমি যে অভিধান করেছে, সেটা আসলে অনেক দূর পর্যন্ত কলকাতার মানুষেরাই করেছে। পবিত্র সরকার এখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। লেখকদের মধ্যেও তাঁদের আধিপত্য ছিল। ফলে এটার মধ্যে পশ্চিম বাংলার ভাষাচিন্তার আধিপত্য আছে। বাংলাদেশের ভাষাচিন্তা বাংলা একাডেমির অভিধানে পুরোপুরি প্রভাব ফেলতে পেরেছে, তা কিন্তু নয়। তবে এই ব্যাকরণ নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি মেশামিশির দিক থেকেও।
প্রথম আলো: প্রান্তীয় জাতিগোষ্ঠীর ভাষার অধিকার রক্ষায় আমরা কতটা সচেষ্ট বলে মনে করেন?
মোহাম্মদ আজম: রাষ্ট্রের দিক থেকে প্রান্তীয় ভাষাগুলোর স্বীকৃতি আমরা যথেষ্ট দিতে পারিনি। সম্প্রতি আমাদের প্রান্তীয় ভাষাগুলোর মধ্যে বোধ হয় ছয়টাতে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়েছে। যে জনগোষ্ঠী দাবি করবে, আমরা প্রাথমিক শিক্ষাটা আমাদের ভাষায় করব, রাষ্ট্রের উচিত সে ব্যবস্থা করা।
প্রথম আলো: বাংলা ভাষার বিপদ নাকি সম্ভাবনা দেখতে পান?
মোহাম্মদ আজম: ভাষা সব সময় সম্ভাবনাময়। মানুষ যে কথা বলে, সেটা তো কখনো কোনো তত্ত্ব দিয়ে বলে না। মানুষের কথা বলা তার জীবনযাপনের অংশ। বাংলাভাষী জনগোষ্ঠী তত্ত্বীয়ভাবে পিছিয়ে পড়তে পারে, আন্তর্জাতিক সুনামে পিছিয়ে পড়তে পারে, কিন্তু তারা যে জীবনযাপন করছে, সেটা বন্ধ হওয়ার কারণ নেই। ফলে ভাষার ক্ষেত্রে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। মানুষের জীবনযাপনে ভাষা যেখানে স্বাভাবিক, সেখানে বাংলা ভাষাও পৃথিবীর আর সব ভাষার মতো দারুণ ও সজীব। কিন্তু ভাষা যেখানে কাজে খাটাতে হবে, সেখানে ঐতিহাসিকভাবে আমরা কোনো উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছি।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ আজম: আপনাকেও ধন্যবাদ।