সাক্ষাৎকারে ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ

দুই দেশের মধ্যে এমন সম্পর্ক বিশ্বে আর নেই

>
ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ। ছবি: প্রথম আলো
ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ। ছবি: প্রথম আলো
ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ প্রায় দুই দশক আগে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ঢাকায় এসেছিলেন। গত বছরের মার্চে ভারতীয় হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করতে তিনি ঢাকায় আসেন। প্রায় ১৭ বছরের বিরতিতে বাংলাদেশে আসার পর এখানকার পরিবর্তন তাঁকে মুগ্ধ করেছে। ঢাকায় দায়িত্ব পালন শেষে শিগগির তিনি দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ পদে যোগ দিতে যাচ্ছেন। কোভিড-১৯ মহামারির সময় দুই দেশের সহযোগিতা, তিস্তা চুক্তি, সীমান্ত হত্যা, ঋণচুক্তির বাস্তবায়ন, রোহিঙ্গা সমস্যা, দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎসহ সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর কূটনৈতিক প্রতিবেদক রাহীদ এজাজের সঙ্গে। ভারতীয় হাইকমিশনারের বাসায় ৩ আগস্ট সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়।

প্রথম আলো: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ওপর জীবন ও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপট থেকে অভূতপূর্ব এই চ্যালেঞ্জ ভারত কীভাবে মোকাবিলা করছে?

রীভা গাঙ্গুলি দাশ: কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ভারত, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব এখন এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর চ্যালেঞ্জ তো বটেই, বিশ্বের প্রায় সব দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে সারা পৃথিবীর সরবরাহব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে কোভিড-১৯। প্রত্যেকেই এর প্রভাবটা বুঝতে পারছেন। জীবন আর জীবিকা—এর মধ্যে কোনটা আগে, বিভিন্ন দেশের সরকারকে এ নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কোভিড-১৯ ছোবল হেনেছে ভারতেও। সমগ্র ভারতবর্ষে এর প্রভাব পড়লেও সরকার নীতিগত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুতেই দ্রুততার সঙ্গে চূড়ান্ত কিছু পদক্ষেপ নিতে পেরেছে সরকার। এসব পদক্ষেপের ফলে ভারতে মৃত্যুহার কম রাখা আর সুস্থতার হার বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেছে। মূলত নমুনা পরীক্ষা, কন্টাক্ট ট্রেসিং আর কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ—এই তিন স্তম্ভের ভিত্তিতে ঠিক করা হয়েছে ভারতের কোভিড-১৯ মোকাবিলার কৌশল।

যুদ্ধাবস্থায় যেমনটা হয়ে থাকে, অনেকটা সেভাবেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। কমিউনিটি সেন্টার, হোটেল আর বৃহদায়তনের স্থানগুলোকে সৃজনশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোভিড-১৯ সেবাদান কেন্দ্রে রূপান্তর করার মাধ্যমে হাসপাতালের শয্যা ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হয়েছে।

এই মহামারির শুরুতে পিপিই সংকটে থাকা দেশ থেকে পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে পিপিই কিট রপ্তানির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ভারত। দেশের অভ্যন্তরে কিটের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার ফলে নমুনা পরীক্ষা অনেক গুণ বেড়েছে। আইসিএমআর এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি সহযোগিতায় ভারত বায়োটেকের উৎপাদিত ভারতীয় টিকা কোভ্যাক্সিনের ট্রায়াল এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, টিকা চালু হলে উৎপাদনকারীদের পছন্দের তালিকায় থাকবে ভারতীয় টিকা। ভারতে বিপুল জনগোষ্ঠী থাকার পরও সুস্থতার হার প্রায় ৬৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা সংখ্যায় প্রায় ১২ লাখের মতো। ভারতের আক্রান্ত লোকের সংখ্যা পাঁচ লাখের কাছাকাছি থাকছে। আর সারা বিশ্বে মৃত্যুহার যেখানে পাঁচ শতাংশ, ভারতে এই হার মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ।

কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ভারত অভূতপূর্ব এই মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছে। জীবন আর জীবিকার সুরক্ষায় গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা নামের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্প চালু করেছে ভারত। এর লক্ষ্য সমাজের ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনের পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শুরুতে প্রায় দেড় ট্রিলিয়ন রুপির তহবিল, পরে ২০২০-এর নভেম্বর পর্যন্ত তা বাড়িয়ে ২১ ট্রিলিয়ন রুপির অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা এবং জনগণের সামর্থ্য বাড়াতে নীতিগত সংস্কার ও অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি যুক্ত করা হয়েছে। এমন এক জটিল সময়ে এসেও বন্ধু দেশগুলোর প্রতি হাত বাড়িয়ে দিয়ে নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে সারা বিশ্বে ভারতের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।