আপনার সম্পাদনায় আমরা বাংলাদেশের দুটো শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা পেয়েছি—‘ভোরের কাগজ’ ও ‘প্রথম আলো’। এই পত্রিকাগুলোর বিষয়, এদের সম্পাদকীয় গঠন আর নীতিমালা কীভাবে নির্ধারণ করেন? অনেক পুরোনো আর বিখ্যাত পত্রিকার ভিড়ে কী করে আপনার সম্পাদিত পত্রিকাগুলোকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এলেন?
আমি ১৯৭০ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত সম্পাদক ছিলাম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘একতা’র । বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। এসবের মাঝ দিয়ে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছে। আমার ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবেও । জীবনের বহু দিকের সঙ্গে এমনি করে আমার পরিচয় ঘটার সুযোগ হয়েছে। এই বিচিত্র অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক ‘ভোরের কাগজ’–এর মতো পত্রিকা বের করবার সাহস পেয়েছি। পত্রিকায় মানুষ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়তে চায়। প্রতিবেদনগুলো পড়ে দেখা, সাংবাদিকদের নতুন তরতাজা দল তৈরি করা আর পত্রিকার গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানোর উপায় খুঁজে বের করা—প্রথম দিকে এ সবকিছু নিজেই করেছি।
পত্রিকাতে তো নিয়মিত লেখা ছাপা হতোই। আমরা ভোরের কাগজে এমন কিছু ছাপা শুরু করলাম, যা আগে অন্য কোনো পত্রিকা ছাপার কথা ভাবেনি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৭১ সালের অনেক অজানা অকথিত ঘটনা। কাজটা আমরা এখনো ‘প্রথম আলো’তে চালু রেখেছি। ছাপা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের অজানা কাহিনি। ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ড এবং ৭ নভেম্বরের সামরিক অভ্যুত্থানের অনেক অজানা কাহিনির সঙ্গে ছাপা হয়েছিল সামরিক স্বৈরশাসনের আমলে দুর্নীতি আর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রতিবেদন। সেই সব ঐতিহাসিক ঘটনার অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার আমরা গ্রহণ করেছিলাম, সেগুলোর বিশ্লেষণও ছাপা হয়েছিল।
সারা দেশে বিভিন্ন জেলায় তখন ঘুরে বেড়িয়েছি। সরাসরি পাঠকদের সঙ্গে সভা করেছি, আলোচনার আয়োজন করেছি। এমনকি পত্রিকা বিক্রেতা আর বিজ্ঞাপন এজেন্টদের সঙ্গে সরাসরি গিয়ে কথা বলেছি। কী করে পত্রিকার বিক্রি বাড়ানো যায়, সেটা বোঝার জন্য এই আলোচনা দরকার ছিল। সম্ভাব্য বিজ্ঞাপনদাতা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরাসরি গিয়ে দেখা করেছি।
লিখেছিও অনেক। সরাসরি মাঠপর্যায়ে গিয়ে প্রতিবেদন করেছি, প্রতিবেদন সম্পাদনা করেছি, কলাম লিখেছি, সাক্ষাৎকার নিয়েছি, ফিচার আর মতামত লিখেছি। এভাবে আমাদের কঠিন পরিশ্রমের ফলে ‘ভোরের কাগজ’ দেশের অন্যতম সেরা একটি পত্রিকা হয়ে উঠেছিল। ১৯৯৮ সালে যখন প্রকাশকদের সঙ্গে কিছু মতান্তরের কারণে আমি চলে আসি, তখন পত্রিকার প্রচার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে আয়-ব্যায় সমান হয়ে এসেছিল।
‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর। পত্রিকা চালু করার আগে সম্পাদক হিসেবে সময় পেয়েছি মাত্র দুই মাস। ভোরের কাগজ থেকে প্রায় ৮০ জন সাংবাদিক আমাদের সঙ্গে চলে আসেন। তাঁদের মাঝে প্রায় ৫০ জন এখনো আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। ‘প্রথম আলো’ চালু হওয়ার দুই বছর পর, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের সরকারি বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এটা খুব বড় আঘাত ছিল। কারণ সেই সময় সরকারি বিজ্ঞাপন ছিল আমাদের জন্য আয়ের বড় উৎস। এর আগের বিএনপি সরকারের আমলেও বিজ্ঞাপন বন্ধের বিষয়ে কোনো ব্যতিক্রম ছিল না।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি নেতৃত্বের সরকারও আমাদের প্রতি একই আচরণ করেছিল। যা–ই হোক, ‘প্রথম আলো’ যাত্রা শুরুর মাত্র চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বহুল প্রচারিত পত্রিকা হয়ে ওঠে। আমাদের পত্রিকায় বহু রকমের বিষয় উঠে আসে। জীবনের সব ক্ষেত্রের চেহারা তাতে প্রতিফলিত হয়। প্রকাশিত হয় বিশদ বিশ্লেষণী প্রতিবেদন, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আর অনেক বিচিত্র আর আকর্ষণীয় বিষয় নিয়ে ক্রোড়পত্র।
নতুন ধরনের প্রচারমাধ্যমের আগমনের পর সাংবাদিকদের দক্ষতাও কি আগের মতোই রয়ে গেছে? ২০২০ সালে একজন সাংবাদিকের ঠিক কী গুণাবলি থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাংবাদিকতাকে সন্দেহাতীতভাবে বদলে দিয়েছে। সংবাদপত্রের সঙ্গে আমার পেশাগত সম্পর্ক প্রায় পাঁচ দশক হতে চলল। কিন্তু এত ব্যপক পরিবর্তন আমি আগে কখনো দেখিনি। ছাপা পত্রিকার মাধ্যমে সকালে পাঠকদের হাতে পৌঁছানোর বহু আগেই সেই সংবাদ ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠক পড়ে ফেলেন। ঘটনাটি সংবাদপত্রের খোলনলচে পালটে দিয়েছে। এখন ছাপা পত্রিকার সাংবাদিককে অনলাইন সংস্করণে সংবাদ ছাপানোর দক্ষতাও অর্জন করতে হয়। সেই সঙ্গে জানতে হয় সামাজিক প্রচারমাধ্যমে ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করা, ছবি তোলা—সংক্ষেপে বলতে গেলে, বর্তমানে একজন রিপোর্টারের একই সঙ্গে অনেক কাজ করার দক্ষতা থাকতে হয়।
বেশ কিছু প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে বিশ্বব্যপী ছাপা মাধ্যমের প্রচার কমছে। ব্যয় কমাতে পত্রিকাগুলো কর্মী সংখ্যা কমাচ্ছে। এ থেকে কী বোঝা যাচ্ছে? বাংলাদেশেও কি একই প্রবণতা বিরাজ করছে বলে মনে করেন?
ছাপা মাধ্যমের প্রচারসংখ্যা কমে যাওয়াটা বিশ্বজুড়েই ঘটছে। এই বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই। ছাপা মাধ্যম ব্যাপকভাবে বেসরকারি বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভর করে। বলতে গেলে পত্রিকা চালানোর তিন-চতুর্থাংশ ব্যয় আসে এই বেসরকারি বিজ্ঞাপনের খাত থেকে। বিশ্বব্যাপী ছাপা মাধ্যমের প্রচার কমে আসায় পত্রিকাগুলো কয়েক বছর আগেও যে পরিমাণ বিজ্ঞাপন পেত, তা আর পাচ্ছে না।
অপর দিকে, ইন্টারনেট–নির্ভর সংবাদ প্রচারের জায়গাগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কিন্তু সেই হিসেবে এখনো অনলাইন প্লাটফর্মগুলোকে আমরা টেকসই আয়ের উৎস বানাতে পারিনি। ছাপা পত্রিকা এখনো প্রচারমাধ্যমের আয়ের প্রধান উৎস।
এই জটিল পরিস্থিতিতে আমাদের বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভাবতে হচ্ছে কী করে পত্রিকা চালানোর ব্যয় কমানো যায়। এটা তো একেবারে মৌলিক আর ব্যবসার সরল কৌশল। যেকোনো পত্রিকা মালিককে নিজের ব্যবসা বাঁচানোর জন্য এটা করতে হবে। আমরা এক ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দক্ষতা, পণ্য আর চাহিদা প্রতিদিন পাল্টাচ্ছে। এমন একসময় যদি কোনো সাংবাদিক নতুন দক্ষতায় নিজেকে দক্ষ করে তুলতে না পারেন, তাহলে তাঁকে সরে গিয়ে আরও যোগ্যদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। এই বাস্তবতা আমাদের মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
ফিলিপ মেয়ার তাঁর ‘দ্য ভ্যানিশিং নিউজপেপার’ বইয়ে ‘হারভেস্টিং দ্য প্রোডাক্ট' বলে একটা ধারণা প্রচার করেছেন। সেখানে তিনি পত্রিকার কর্মী আর প্রচারসংখ্যা কমানোর মাধ্যমে ব্যয় কমানো আর একই সঙ্গে বিজ্ঞাপনের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। দেশে-বিদেশে বহু সংকটাপন্ন পত্রিকা এই মডেল গ্রহণ করেছে। এই বিষয়ে আপনার মত কী?
আমি এই মডেলের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নই। ছাপা প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশে এখনো গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদ, ঘটনা, কোন সংখ্যা বা বিশ্লেষণের সত্যতা যাচাই করতে মানুষ আজও ছাপা পত্রিকার ওপরই নির্ভর করে। আমি বলছি না যে ইন্টারনেট–নির্ভর সংবাদ বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নির্ভরযোগ্য নয়। কিন্তু সেখানে প্রতিনিয়ত সংবাদ হালনাগাদ হতে থাকে, ব্রেকিং নিউজ আসতে থাকে। সংবাদ যখন পত্রিকায় ছাপা হয়, তখন তা যে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে, তা অস্বীকারের উপায় নেই। এ জন্যি আমরা বলি, ছাপা হচ্ছে প্রমাণ (Print is Proof)।
সংবাদের প্রেক্ষাপট আর বিশ্লেষণ বোঝার জন্য মানুষ ছাপা সংবাদপত্র খরিদ করে। তাই আমার বিশ্বাস, স্থানীয় ভাষায় ছাপা প্রচারমাধ্যমের এখনো উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে। প্রচারসংখ্যা বাড়িয়ে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমরা তাই সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশের প্রতিটি কোণে সব ধরনের পাঠকের কাছে ভোরের মধ্যেই পত্রিকা পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করতে এখন বাংলাদেশের তিনটি শহর (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বগুড়া) থেকে প্রথম আলোর ১১টি সংস্করণ ছাপা হয়।
তবে আয় বাড়ানোর জন্য আমরা বিষয়ের মধ্যে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছি। ‘প্রথম আলো’ তরুণ পাঠকদের জন্য ম্যাগাজিন বের করছে, সর্বোচ্চসংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন বিষয়ে ক্রোড়পত্র বের করছে। আমরা একটি প্রকাশনা সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখান থেকে পাঁচ শতাধিক বই এর মধ্যে ছাপা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকি। অনলাইনে ভিডিও, ব্লগ ইত্যাদি তৈরি ও বাজারজাতকরণের কৌশলও আমরা ব্যবহার করি।
অনেক দেশে সংবাদপত্রগুলো ডিজিটাল বিজনেস, ই-বিজনেস, মানি ট্রান্সফার, গ্রুপ টুরের মতো লাভজনক ব্যবসা করে থাকে, যাতে মিডিয়া হাউসের ব্যবসাটিকে অর্থায়ন করে টিকিয়ে রাখা যায়। এ ধরনের উদ্যোগ সাংবাদিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বলে আমি মনে করি না। সৎভাবে যদি কিছু কনটেন্ট বিক্রি করা যায়, যদি এমনভাবে তা প্রকাশ করা যায় যাতে পাঠক তাকে অন্যান্য কনটেন্ট থেকে আলাদা করে চিনতে পারে, তাহলে আমি তাকে সাংবাদিকতার নীতির সঙ্গে আপস বলে মনে করি না। আয়ের উৎস যদি বাড়ানো যায়, তাহলে বিজ্ঞাপনের হার বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।
সংবাদপত্র যদি আয়ের জন্য বিজ্ঞাপনের ওপর এতো বেশি নির্ভরশীল হয় তাহলে তারা ধনী অর্থায়নকারীদের প্রতি পক্ষপাত থেকে নিজেদের কীভাবে রক্ষা করবে?
সংবাদপত্র সব সময়ই আয়ের জন্য বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভর করে এসেছে। তবে সে অর্থদানকারীর প্রতি পক্ষাপাতিত্ব করবে কি না, তা নির্ভর করে সেই সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় নীতি ও পরিচালনা নীতির ওপর।
সংবাদপত্র নিজের আয়ে চলা উচিত। বিজ্ঞাপন গ্রহণের ব্যাপারে দৃঢ় নীতিমালা থাকতে হবে। আমাদের কোম্পানি ট্রান্সকম লিমিটেডের সঙ্গে আমরা কাজ করা শুরু করি এই বোঝাপড়ায়—পত্রিকা চলবে তার নিজ উপার্জনের মাধ্যমে। বহু রকমের চাপ সত্ত্বেও আমরা এই নীতিতে বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ২০১৬ সালে প্রায় ৫০টি বড় কোম্পানি আমাদের বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দিল। এখনো তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি আমাদের বিজ্ঞাপন দেয় না। গত তিন বছর কোনো মোবাইল কোম্পানি প্রথম আলোকে বিজ্ঞাপন দেয়নি। বর্তমানেও প্রথম আলো সরকারি বিজ্ঞাপন বা ক্রোড়পত্র খুব কমই পায়। অপর দিকে, আমরা নিজেদের নৈতিক অবস্থানের খাতিরে কিছু বড় কোম্পানির কাছে আমরা কখনো বিজ্ঞাপন চাই না। এইভাবে করপোরেট হাউসগুলোর ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল না হয়ে আমরা এক ধরনের স্বাধীন থাকার অনুভূতি উপভোগ করি।
বাংলাদেশে বেশ কিছু দমনমূলক প্রকাশনা ও মতপ্রকাশসংক্রান্ত আইন আছে। আপনি কি মনে করেন এমন সব আইনের উপস্থিতিতে পত্রিকাগুলো যা ছাপা উচিত তা ছাপতে পারে?
ছাপাসংক্রান্ত সমস্যা চলে আসছে বহুদিন ধরে। এসব মোকাবিলা করেও বাংলাদেশে সংবাদপত্র সাহসের সঙ্গে তাদের কাজ করে আসছে। তবে এটা অনস্বীকার্য যে আমরা সব লিখতে পারি না, যা বলা উচিত, তার সব বলতে পারি না। ভয়ভীতিমুক্ত হয়ে আমরা বাকস্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা এখনো করতে পারছি না। আমাদের সংবিধানের নিশ্চিত করা আরও স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের বাস্তবায়ন আমরা আশা করেছিলাম। সংশোধিত আইসিটি আইন-২০১৩ এবং ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কিছু আইন সরকার বলবৎ করেছে। এই আইনগুলো সাংবাদিকতাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। অনেক সাংবাদিক ইতিমধ্যে এই আইনের হাতে দমনের শিকার হয়েছেন। নানা সময়ে আমার নামেই ৫০টি মামলা হয়েছে। ডেইলি স্টার–এর সম্পাদক মাহফুজ আনামের নামে ৮০টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলাগুলো এখনো আদালতে বিচারাধীন।
বিশ্বজুড়েই সাংবাদিকেরা এমন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানেও ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ আর ‘নিউইয়র্ক টাইমস’–এর মতো পত্রিকা হোয়াইট হাউস থেকে প্রেসিডেন্টের চাপের শিকার হচ্ছে। একই রকমের নজির পাওয়া যাবে ভারতে, এশিয়া, আফ্রিকা আর দক্ষিণ আমেরিকার বহু দেশে। তা সত্ত্বেও, এসব ঝুঁকির মাঝ দিয়েই সাংবাদিকতা আর সংবাদপত্র বিকশিত হচ্ছে। এটাই সাংবাদিকতার সৌন্দর্য। এমন প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করে বিকশিত হতে পারা একটা ভালো অভিজ্ঞতাও বটে।
কিছু সংবাদমাধ্যম মাঝেমধ্যে কেবল পাঠক ধরে রাখার জন্যই কিছু সংবাদ/প্রতিবেদন ছাপে। যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি শক্তিশালী করতে, এমনকি কখনো বা মুখ্য রাজনৈতিক ধারার সেবা করবার স্বার্থে এমন করে থাকে। এই প্রবণতার ব্যাপারে আপনার মত কী?
কোনো রাজনৈতিক দল বা বড় ব্যবাসায়িক প্রতিষ্ঠানের মুখপত্রের কাজ করে, সব সময়ই এমন কিছু মিডিয়া হাউস ছিল । তবে সেই রকম সংবাদপত্রের পক্ষে কখনোই উল্লেখযোগ্য হয়ে বেড়ে ওঠা সম্ভব নয়। মানুষ ঠিকই তাদের পক্ষপাতিত্ব ধরে ফেলে। আর তখন তাদের এড়িয়ে চলা শুরু করে।
এর বিপরীতে বিকল্প স্রোতও আছে। এমন মিডিয়া হাউসও আছে, যাদের পক্ষে পক্ষপাতহীন সাংবাদিকতা করা ছাড়া উপায় নেই। আমরা প্রমাণ করেছি যে স্বাধীন আর ইতিবাচক সাংবাদিকতাও ভালো ব্যবসা হতে পারে। পক্ষপাতমূলক সাংবাদিকতা কখনোই বিকশিত হয়ে টিকে থাকতে পারে না।