অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। বাংলাদেশে যকৃৎ প্রতিস্থাপনের পথিকৃৎ। ১৯৯৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের যকৃৎ প্রতিস্থাপন কেন্দ্র থেকে ফেলোশিপ পান। বর্তমানে বারডেমের হেপাটো বিলিয়ারি প্যানক্রিয়াটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন। দেশে যকৃৎ প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা ও বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান।
প্রথম আলো: বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত পাঁচটির বেশি যকৃৎ প্রতিস্থাপনের মতো অস্ত্রোপচারের কথা আমরা জানি। অথচ যকৃৎ প্রতিস্থাপন প্রয়োজন—এমন মানুষের সংখ্যা ১০ লাখের কম নয়। এখন আপনারা বারডেমে স্বয়ংসম্পূর্ণ যকৃৎ প্রতিস্থাপন কেন্দ্র খুলতে যাচ্ছেন।
মোহাম্মদ আলী: যকৃৎ প্রতিস্থাপনে দক্ষ জনবল এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। বারডেম হাসপাতালে ১৯৯৯ সালে প্রথম হেপাটো-বিলিয়ারি-প্যানক্রিয়াটিক সার্জারি শুরুর মাধ্যমে বাংলাদেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। দীর্ঘদিন যকৃৎ অস্ত্রোপচার কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার পর ২০১০ সালের জুন মাসে বারডেম হাসপাতালে বাংলাদেশে প্রথম সফল যকৃৎ প্রতিস্থাপন সম্পূর্ণ করা হয়। দ্বিতীয় সফল অস্ত্রোপচার ঘটে ২০১১ সালের আগস্টে। আমি ওই সার্জারি টিমের নেতৃত্বে ছিলাম। একটি সফল যকৃৎ প্রতিস্থাপনকারী দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করল। সংসদ থেকেও আমাদের ধন্যবাদ জুটল। আইসিডিডিআরবির সাময়িকীতে ২০১৪ সালে ‘বাংলাদেশের দুটি প্রথম সফল যকৃৎ প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার’ শিরোনামে নিবন্ধ ছাপা হয়। এরপর থেকে বারডেম হাসপাতাল ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে একটি উৎকর্ষমূলক লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার তৈরির কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। এটি আগামী মাসে শুরুর আশা রাখি। বর্তমানে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটটি ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিট হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
প্রথম আলো: দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর অভিজ্ঞতা কী?
মোহাম্মদ আলী: ভারতে প্রায় ৩০টি প্রতিস্থাপন কেন্দ্র সক্রিয় রয়েছে। আমাদের পর পাকিস্তান এবং সম্প্রতি নেপালও শুরু করেছে।
প্রথম আলো: আপনি দেশে প্রথম শূকর থেকে শূকরে যকৃৎ প্রতিস্থাপন করেছিলেন।
মোহাম্মদ আলী: হ্যাঁ। সেটা কারিগরি দক্ষতা অর্জন ও জনবল গড়তে বেশ সুফল দিয়েছিল। যকৃৎ প্রতিস্থাপনের জন্য দক্ষ জনবলের একান্ত প্রয়োজন, যা আমাদের খুবই কম। সে কারণে ভারতের বিখ্যাত ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সঙ্গে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর আওতায় আমি ও ভারতের খ্যাতিমান লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক সুভাষ গুপ্ত যৌথভাবে কাজ করব। লিভার ফেলিউরে আক্রান্ত হাজার হাজার মানুষ তাঁর জীবন রক্ষাকারী শেষ চিকিৎসা হিসেবে নিজ দেশে যকৃৎ প্রতিস্থাপনের সুফল পেয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন।
প্রথম আলো: সেই বেঁচে থাকাটা ঠিক কেমন? গলাচিপায় আমরা মুঠোফোনে একজন যকৃৎগ্রহীতা শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি ভালো আছেন।
মোহাম্মদ আলী: জীবিত ব্যক্তির দেহ থেকে যকৃৎ প্রতিস্থাপনের পর একজন গ্রহীতার ১ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় ৮৫%, ৫ বছর বাঁচার সম্ভাবনা ৬৯% এবং ১০ বছর বাঁচার সম্ভাবনা ৬১%। এই সাফল্য বয়স্কদের চেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি। আমরা ২০১০ সালে প্রথম যাঁর যকৃৎ প্রতিস্থাপন করেছিলাম, তিনি পাঁচ বছর বেঁচে ছিলেন। পরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। আর আপনি যাঁর কথা বললেন, তিনি তো অস্ত্রোপচারের পর দ্বিতীয় সন্তানের বাবাও হয়েছেন। পিএইচডি করতে মালয়েশিয়া গেছেন।
প্রথম আলো: সম্প্রতি আমরা হেপাটাইটিস বি নিয়ে অনেকগুলো গোলটেবিল সভা করেছি। সেখানে বিশেষজ্ঞদের দেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের বিস্তার নিয়ে উদ্বিগ্ন দেখেছি।
মোহাম্মদ আলী: দেশের মোট জনসংখ্যার ৪ থেকে ৭ ভাগ হেপ বি এবং ১ ভাগ হেপ সিতে আক্রান্ত। এই আক্রান্তদেরই একটি অংশ পরে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারের শিকার হয়। প্রায় ১ কোটি মানুষ নানা ধরনের লিভার রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২০ ভাগেরই লিভার সিরোসিস হতে পারে। এই পর্যায় থেকেই মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত বা লিভারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে মারা যায়। কোনো ব্যক্তির রোগাক্রান্ত বা অকার্যকর লিভার সম্পূর্ণ অপসারণ করে সেই স্থানে দাতা ব্যক্তির সম্পূর্ণ অথবা আংশিক সুস্থ লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়। যুগান্তকারী এই জটিল চিকিৎসাপদ্ধতি বিশ্বে প্রথম শুরু হয় ১৯৬৭ সালে। সেই থেকে লাখ লাখ ‘লিভার ফেলিউর’ রোগীর জীবন রক্ষাকারী একমাত্র শেষ চিকিৎসা হিসেবে শুধু প্রতিস্থাপন করাটাই গণ্য হচ্ছে।
প্রথম আলো: হেপাটাইটিস বি বহনকারী বলিউড সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন এখন ডব্লিউএইচওর হেপাটাইটিস বি অ্যাম্বাসেডর। কুলি ছবির শুটিংয়ে আহত হয়ে দাতার রক্ত নিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ৭৫ ভাগ লিভার নষ্ট হওয়ার পর তাঁর হেপাটাইটিস বি ধরা পড়ে। তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা?
মোহাম্মদ আলী: আপনি ঠিকই বলেছেন যে তিনি সংক্রমিত হওয়ার পরে দীর্ঘদিন জানতেই পারেননি যে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। তাই গণসচেতনতা খুব দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবারের স্লোগান হলো ফাইন্ড দ্য মিসিং মিলিয়নস। (লাখ লাখ অজানা আক্রান্তের খোঁজে)। এই ক্যাম্পেইনের আওতায় থাকা এশীয় চারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও আছে। মূল কথা হলো, দীর্ঘমেয়াদি লিভার রোগ অথবা স্বল্পমেয়াদি মারাত্মক লিভার রোগের কারণে কোনো ব্যক্তির লিভারের কার্যকারিতা একেবারে কমে গেলে অথবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। সাধারণত যেসব রোগের কারণে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের দরকার হয় সেগুলো হলো—হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি ভাইরাসজনিত লিভার রোগ, মদ্যপানজনিত লিভার রোগ, ফ্যাটিলিভার থেকে রূপান্তরিত জটিল লিভার রোগ ন্যাশ ইত্যাদি থেকে সৃষ্ট লিভার সিরোসিসই প্রধান কারণ। এ ছাড়া প্রাইমারি স্কেলোরোজিং কোলেঞ্জাইটিস, প্রাইমারি বিলিয়ারি সিরোসিস, অটোইম্মুন হেপাটাইটিস, উইলসনস ডিজিজ, মেটাবোলিক ডিজঅর্ডারস এবং শিশুদের বিলিয়ারি অ্যাটরেশিয়া বা অন্য যেকোনো কারণে লিভার সিরোসিসে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।
এ ছাড়া ভাইরাস ইনফেকশন, কোনো ওষুধ বা মদ্যপানের কারণে হঠাৎ তাৎক্ষণিক লিভার ফেলিউর হলেও অনেক ক্ষেত্রে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের প্রয়োজন হতে পারে। লিভার ক্যানসারের ক্ষেত্রেও যকৃৎ প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে মূল ক্যানসারসহ অন্যান্য অবস্থা সার্বিক বিবেচনায় নিতে হয়।
প্রথম আলো: যকৃৎদাতা কে হতে পারবেন?
মোহাম্মদ আলী: জীবিত ব্যক্তির যকৃতের একটি অংশ দান হচ্ছে একটি পবিত্র এবং মহামূল্যবান উপহার। রক্তদানের মতোই একে একটি আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। তবে রক্তের মতো এ জন্য ব্যাংক করা যাবে না। একই সময়ে দুই ওটিতে দাতা ও গ্রহীতার অস্ত্রোপচার চলে। যকৃৎ দানে মানুষকে সচেতন করতে মিডিয়া সব থেকে কার্যকর ও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের জানাতে হবে, দান করার পর দাতার অবশিষ্ট লিভার তাঁর দেহের চাহিদা অনুযায়ী বাড়তে থাকে। মাত্র ৬ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে লিভার তার আগের সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতা ফিরে পায় এবং দাতা তাঁর আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যান। প্রতিস্থাপিত যকৃৎও গ্রহীতার দেহে অনুরূপভাবে খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। দেহের গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য, একটি নতুন কেন্দ্রীয় অঙ্গের মতোই চাহিদা অনুযায়ী কাজ করে থাকে।
আসলে ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়স্ক কোনো সুস্থ ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ গ্রহীতার রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিললেই তিনি তাঁর যকৃতের একটি অংশ ওই ব্যক্তিকে দান করতে পারবেন। সুস্থ ব্যক্তি তাঁর যকৃতের একটি অংশ (ডান অথবা বাঁ দিক) কোনো নিকট আত্মীয়কে দান করতে পারেন। এমনকি কারও ব্রেন ডেথ বা জীবন রক্ষাকারী সাপোর্টসমূহ সরিয়ে নেওয়ার পরের অবস্থায় তাঁর নিকট আত্মীয়র অনুমতি সাপেক্ষে যকৃৎ অপসারণ করে তা প্রতিস্থাপন করা যাবে। জরুরি ক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপ না মিললেও ‘এবিও ইনকমপেটেবল’ দাতা হিসেবেও যকৃৎ দান করা যায়। তবে খুব বেশি ব্যয়বহুল হবে।
প্রথম আলো: ১৯৯৯ সালের মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে আমরা দেখি যে এইচআইভি এবং হেপাটাইটিস ভাইরাসজনিত কোনো রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি সাধারণভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দাতা হিসেবে উপযুক্ত ব্যক্তি নন। অথচ মেডিকেল বোর্ড অনুমোদন দিলে তা করা যাবে।
মোহাম্মদ আলী: যে ব্যক্তির এইচআইভি হয়েছে, তার কীভাবে যকৃৎ ভালো থাকবে? সুতরাং এইচআইভি আক্রান্তকে বোর্ডের অনুমোদন দেওয়ার প্রশ্ন নেই। হয়তো হেপাটাইটিস ভাইরাস হলে কখনো কেউ দিতে পারে।
প্রথম আলো: বারডেমে আগে কীভাবে অস্ত্রোপচার করেছেন? শুরুটা যে স্থায়ীভাবে করতে যাচ্ছেন, তার প্রস্তুতি কী?
মোহাম্মদ আলী: এর পেছনে বড় গল্প আছে। যখন শুরু করেছিলাম, আমাদের তেমন কিছুই ছিল না। একেবারে শূন্য হাতে শুরু করেছিলাম। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে কয়েকটি হাসপাতাল ও সংস্থাকে স্মরণ করি, তারা তাদের ল্যাব সামগ্রী সরবরাহ করেছিল। এখন দুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার গড়ে তোলা হয়েছে। দুই দল অভিজ্ঞ লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন কাজ করছেন। একদল চিকিৎসক রোগাক্রান্ত লিভার অপসারণ করেন। এ সময় লিভারের রক্ত সরবরাহ যন্ত্রের সাহায্যে সেই রক্ত দেহের অন্যান্য অঙ্গে প্রবাহিত করা হয়। চিকিৎসকদের অপর দলটি দাতার দেহ থেকে সুস্থ লিভারের অংশবিশেষ অপসারণ করে তা প্রতিস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করে থাকেন। এরপর দানকৃত লিভারের অংশ রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই সময় রোগীর রক্তনালিসমূহ ও পিত্তনালি পুনঃ সংযোগ করা হয়। একটি লিভার ট্রান্সপ্লান্ট অপারেশনে সাধারণত ১২-১৪ ঘণ্টা সময় লাগে।
প্রথম আলো: যকৃৎ প্রতিস্থাপনের পর কি একজন মানুষ পুরো স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন, কী সমস্যা হতে পারে
মোহাম্মদ আলী: হ্যাঁ। একটি সফল যকৃৎ প্রতিস্থাপনের পর একজন গ্রহীতা আবার তাঁর আগের দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যেতে পারবেন। এটি মূলত নির্ভর করে ট্রান্সপ্লান্ট পূর্ববর্তী রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং লিভার রোগের কোন পর্যায়ে ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছে, তার ওপর। যকৃৎ প্রতিস্থাপনের পরবর্তী সময়ে গ্রহীতা খুব সহজেই বিভিন্ন ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রণালিতে শৃঙ্খলা বজায় রাখাই হলো নতুন লিভারকে সুস্থ রাখার চাবিকাঠি। নতুন লিভার রিজেকশন, ইনফেকশন অথবা রক্তনালি এবং পিত্তনালির কোনো সমস্যার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য গ্রহীতাকে নিয়মিত একজন যকৃৎ প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। পরিকল্পিতভাবে সুষম খাবার এবং খাবারে চর্বির পরিমাণ কমিয়ে দিলে, মদ্যপান এবং ধূমপান এড়িয়ে চললে সুস্থ থাকা সম্ভব। নারীদের ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপনের পর প্রথম এক বছর গর্ভধারণ এড়িয়ে চলতে হবে।
প্রতিস্থাপনের পরে রিজেকশনের একটি বিষয় থাকে। এটা প্রতিরোধের জন্য প্রতিস্থাপনের পরপরই গ্রহীতাকে ইম্যুনোসাপ্রেসিভ ওষুধ দেওয়া শুরু করা হয়। প্রথম কয়েক মাস এসব ওষুধ বাবদ খরচ একটু বেশি হলেও পরবর্তী এক বছরের মধ্যে এটি একটি বা দুটি ওষুধ এবং দুই থেকে চার বছরের মধ্যে মাত্র একটিতে কমে আসে, যা আজীবন চালিয়ে যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত পরীক্ষার সাহায্যে লিভারের কার্যকারিতা এবং রক্তে ওষুধের মাত্রা দেখে নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রথম আলো: যকৃৎ প্রতিস্থাপনের খরচ তো অনেক, কীভাবে সাধারণ মানুষ এর সুফল পাবে?
মোহাম্মদ আলী: সারা বিশ্বেই যকৃৎ প্রতিস্থাপন একটি ব্যয়বহুল জটিল চিকিৎসাপদ্ধতি। ভারতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা, সিঙ্গাপুরে দেড় কোটি টাকার মতো খরচ হয়। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত বারডেম হাসপাতাল এবং ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিট তুলনামূলক কম খরচে যকৃৎ প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুখবর হলো, বাংলাদেশে যকৃৎ প্রতিস্থাপনের এই নবযুগের সূচনায় ২০ লাখের কাছাকাছি টাকা রাখা যায় কি না, সেই চিন্তা চলছে। সরকারও কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছে। তারা এ পর্যন্ত বারডেমের এই সেন্টারকে প্রায় ৮ কোটি টাকা দিয়েছে। বারডেম খরচ করেছে ১২ কোটি টাকার বেশি। আশা করা যায়, ব্যক্তি বা বেসরকারি খাত থেকে বড় কোনো অনুদান এলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে যকৃৎ প্রতিস্থাপন আমরা আরও কম খরচে করতে পারব।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ আলী: ধন্যবাদ।