সাক্ষাকার: আবদুল মজিদ

গণমাধ্যমের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক যত ভালো হবে, গণতন্ত্র তত শক্তিশালী হবে

প্রশ্ন

প্রথম আলো: তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনেক কর্মকর্তা একধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন। এটি কেন হচ্ছে?

আবদুল মজিদ: আমলাদের একটা অংশ সাংবাদিকদের মধ্যে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরি করতে চায়। সব পেশাতেই বিভিন্ন আদর্শের লোক থাকে। প্রশাসনেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারের বিরোধী লোক আছেন। তাঁরা সরকারের সঙ্গে সাংবাদিকদের বৈরিতা তৈরি করতে চান। তাই তথ্য সংগ্রহে বাধা তৈরি করে সাংবাদিকদের খেপিয়ে তোলেন। এ ছাড়া দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ধরা পড়ার ভয়ে তটস্থ থাকেন। তাঁরা সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এসব বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। গণমাধ্যমের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক যত ভালো হবে, গণতন্ত্র তত শক্তিশালী হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: করোনা মহামারির এই সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তো তথ্যপ্রবাহ আরও অবাধ করার কথা।

আবদুল মজিদ: প্রতিদিন করোনায় কতজন আক্রান্ত হলেন, কতজন মারা গেলেন; জনগণ শুধু এটা জানতে চায় না। করোনা প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক হিসেবে কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার, তা-ও জানতে চায়। কত টিকা আনা হচ্ছে, কোথা থেকে আনা হচ্ছে, কত দামে আনা হচ্ছে—এসব জানার অধিকার জনগণের আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের সব তথ্য সরকারের মুখপাত্র তথ্য মন্ত্রণালয়কে দিতে পারে। তথ্য মন্ত্রণালয় নিয়মিত এটি সাংবাদিকদের জানাবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে নির্যাতনের পর মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনাটি মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে মনে করেছেন অনেকে।

আবদুল মজিদ: বাধা যতটা না সরকারের পক্ষ থেকে, তার চেয়ে বেশি সাংবাদিকদের নিজেদের। সংবাদমাধ্যমের মালিকেরা যদি কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করতেন, তাহলে সমস্যা থাকত না। সাংবাদিকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হতো না। সরকারি নিয়ম মেনেই গণমাধ্যম গড়ে ওঠে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কর্মীদের নিয়মমাফিক বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত করে। সবাই দেখেন, অনেক সাংবাদিক নিয়মিত বেতন পান না, ছাঁটাইয়ের শিকার হন। কেউ কেউ আবার অনিয়মে জড়ান। এসব কারণে শুধু আমলা নয়, অন্য পেশার লোকদের কাছেও অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা মর্যাদা হারান।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সাংবাদিকদের ওপর হামলা, নির্যাতন, মামলার ঘটনা থামছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পর অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের প্রয়োগ দেখা গেল। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এটাকে কি প্রতিবন্ধকতা মনে করেন?

আবদুল মজিদ: সাংবাদিকতায় বাধা সৃষ্টি করে এমন যত কালাকানুন আছে, তা বাতিল করা উচিত। কিন্তু এসব দাবি তখনই আদায় হবে, যখন এর পক্ষে ব্যাপক ঐক্য তৈরি হবে। রোজিনার ঘটনা প্রমাণ করেছে, সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামলে যেকোনো দাবি আদায় সম্ভব।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চার পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন কী ধরনের ভূমিকা নিতে পারে?

আবদুল মজিদ: রোজিনার ঘটনায় প্রথম দিনে সাংবাদিক নেতাদের অনুপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। নেতারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। দ্বিতীয় দিনেই কিন্তু সারা দেশের সাংবাদিকদের অবস্থান কর্মসূচিতে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে, সাংবাদিক সংগঠনের বিকল্প নেই। সাংবাদিকদের রুটি-রুজি, অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করাই সাংবাদিক ইউনিয়নের মূল উদ্দেশ্য। রোজিনার ঘটনায় তাঁদের মনে হয়েছে, কাল তাঁরাও আটক হতে পারেন। তাই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় সবাই মাঠে নেমেছেন। বেতন-ভাতার আন্দোলন বা অন্য কর্মসূচিতে হয়তো তাঁরা আসবেন না। এতে আন্দোলন দুর্বল মনে হবে এবং দাবিও আদায় হবে না। শুধু দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে নয়, সব সময় দাবি আদায়ের পক্ষে নামতে হবে।