চাকরিজীবী স্বামী-স্ত্রীদের নিয়ে যা বললেন সাংসদ

রেজাউল করিম
রেজাউল করিম

রেজাউল করিমবেকার সমস্যার সমাধানে চাকরিজীবী পুরুষ চাকরিজীবী নারীকে আর চাকরিজীবী নারী চাকরিজীবী পুরুষকে বিয়ে করতে পারবেন না—সংসদে এমন আইন করার দাবি তুলেছেন বগুড়া-৭ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সাংসদ রেজাউল করিম। গত শনিবার তাঁর এ বক্তব্যের পর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে। টেলিফোনে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইমাম হোসেন সাঈদ

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনার প্রস্তাব অনুযায়ী, সব ধরনের যোগ্যতা থাকার পরও বিয়ে করলে ছেলে হোক আর মেয়ে হোক—একজন চাকরি করতে পারবে না?

রেজাউল করিম: স্বামী–স্ত্রী দুজনেই এখন যারা চাকরি করছে, তাদের কথা তো বলিনি। তবে ভবিষ্যতে বেকারত্ব লাঘবে আমার প্রস্তাব বিবেচনা করা যেতে পারে। একই পরিবারের মাতা–পিতা যখন একসঙ্গে কর্মস্থলে চলে যান, তাঁদের সন্তানেরা অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। অনেক পরিবারে পিতা–মাতা কর্মস্থলে চলে গেলে অনেক শিশু গৃহপরিচারিকা বা অন্য কারও মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়। সন্তানের কিন্তু একটা হক আছে মাতা–পিতার প্রতি। মায়ের আদরযত্ন–সেবা, ভালোবাসা পেয়ে বড় হবে, এটা সন্তানের অধিকার। এ অধিকার থেকে শিশুদের অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত করি আমরা।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: তাহলে তো মায়েদের চাকরি করার কোনো অবস্থা থাকবে না।

রেজাউল করিম: মা চাকরি করতে পারবে না বা বাবা চাকরি করতে পারবে না—আমি তো এটা বলিনি। দেখেন, এখানে আরেকটা বিষয় আছে। যখন স্বামী–স্ত্রী দুজনই চাকরি করে, তাদের দাম্পত্যজীবনেও কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বিরোধের সৃষ্টি হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা সম্পর্কের অবনতি হয়, তবে এটা কম, নগণ্য। আবার মা–বাবার সাহচর্যে সন্তানেরা বড় না হলে তারা অনেক ক্ষেত্রে বিপথগামী হয়, খারাপ পরিবেশের সঙ্গে মেশার সুযোগ পায়। এ কারণে অনেক ছেলেমেয়ে অনেক ক্ষেত্রে সমাজচ্যুত হয়ে যায়, এমন নজিরও আমরা দেখেছি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনার কাছে এর একমাত্র সমাধান কি স্বামী–স্ত্রীর একজন চাকরি করতে পারবে, আরেকজন পারবে না?

রেজাউল করিম: এটা যে বাধ্যবাধকতা বা করতেই হবে, এমন তো কিছু না। শোনেন, আমি জনপ্রতিনিধি। জনগণের চাওয়া–পাওয়ার প্রতিফলনটা জনপ্রতিনিধিরা সংসদে উপস্থাপন করবে, এটাই সংসদ সদস্যের কাজ।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বিবেচনা ছাড়াই যেকোনো বিষয়ে একজন জনপ্রতিনিধি সংসদে কথা বলতে পারবেন?

রেজাউল করিম: বিবেচনা ছাড়া কি কথা বলা যায়? বিবেচনার মধ্যেই কথা বলতে হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সংসদে আপনার দেওয়া প্রস্তাবের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আপনি যা খুশি তাই বলেছেন।

রেজাউল করিম: দেখেন, সংসদে অনেক মন্তব্য, দাবি উপস্থাপন হয়। সব কি সংসদে অ্যাকসেপ্ট (গ্রহণ) হয়? হয় না। নাকচ হওয়া দাবির কাতারে আমারটা থাকল, সমস্যা কোথায়?

প্রশ্ন

প্রথম আলো: একজন সাংসদ নিশ্চয়ই চাইবেন, তাঁর প্রস্তাব বা দাবি গ্রহণ করা হোক। সে কারণেই তিনি সুচিন্তিত মত, পরামর্শ বা সুপারিশ করবেন, এটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু মানসিকতার মধ্যে যদি থেকে যায় যা খুশি একটা বললাম, নাকচ হলে হলো। এটি কি দায়িত্বশীল আচরণ হয়?

রেজাউল করিম: এর আগে আমি শিক্ষিত বেকার ছেলেদের জন্য চাকরির বয়স ৩৫ বছর করার দাবি করেছিলাম। এখন যেটা ৩০ বছর। সে দাবি কি অমূলক ছিল?

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনি বিতর্ক বা আলোচনা তৈরি করার জন্যই সংসদে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন, অনেকে এমনটা মনে করেন।

রেজাউল করিম: এটা মোটেও ঠিক নয়। যার যে অবস্থান, সেখান থেকে আমার বক্তব্য বিচার–বিশ্লেষণ করে। কিছু কিছু ব্যক্তি আমার কথা ভিন্ন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ করে। নেগেটিভ সেন্সে নেয়। নেগেটিভ আলোচনা করতে করতে আরও বড় নেগেটিভ হয়। এটি বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যায়।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: দেশে বেকারত্ব কমানো নিয়ে কোনো গবেষণা পর্যালোচনা করে কথা বলেছেন, নাকি তাৎক্ষণিকভাবে এটি সংসদে বলে ফেলেছেন?

রেজাউল করিম: বেকারত্ব নিয়ে আমি সব সময় চিন্তা করি। আমার নির্বাচনী এলাকায় বেকারের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি, বন্যাকবলিত এলাকা। যখন এলাকায় যাই, তখন বেকারত্বের অভিশাপ, কাজ পাচ্ছে না, চাকরি পাচ্ছে না, জনগণ এসে নানা প্রকার দুঃখ–বেদনা, আবেগ–অভিযোগ সবকিছু বলে। সেগুলো আমাকে শুনতে হয়। সেগুলো শোনার পর ভেতরে একটি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আর সেই প্রতিক্রিয়া থেকে জনগণের কথাগুলো সংসদে উপস্থাপন করি মাত্র।