মো. আবদুল মতিন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। প্রথম আলোর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশন গঠন, সাংবিধানিক বিধান ও জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার উপায় নিয়ে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান
প্রথম আলো: সংবিধান আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা বলেছে। কিন্তু গত ৫০ বছরে কোনো আইন হলো না। পূর্বাপর সরকারদের এ ব্যর্থতাকে কীভাবে দেখছেন?
বিচারপতি এম এ মতিন: সংবিধান, আইন ও নির্বাচন—এ তিন বিষয়ে আপনার প্রশ্নের মধ্যে গুরুত্ব পেয়েছে। সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এটি অর্জন করেছি। আমরা আমাদের শাসনতন্ত্রের ১১ অনুচ্ছেদে বলেছি, ‘প্রজাতন্ত্র হবে এমন একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে [এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।]’ ‘প্রশাসনের সকল পর্যায়ের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যেমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ’ কথাগুলো চতুর্থ সংশোধনীর দ্বারা বিলুপ্ত হইলেও জনগণের ইচ্ছায় সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর দ্বারা ১৯৯১ সালে পুনঃসন্নিবেশিত হয়েছে।
সংবিধানের উক্ত বিধানকে কার্যকর করার প্রয়াসে আমাদের সংবিধানের ১১৮(১) সন্নিবেশিত। ১১৮(১) বলছে, ‘[প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া] বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’
‘প্রণীত আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে…নিয়োগদান করিবেন’ বিধানটি ৫০ বছর ধরে লঙ্ঘিত হয়ে আসছে। একইভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগসংক্রান্ত ৯৫(গ) অনুচ্ছেদের অর্থাৎ ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ লাভের জন্য আইন দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকিয়া থাকিলে; তিনি বিচারক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হইবেন না’ বিধানটিও লঙ্ঘিত হয়ে আসছে।
লক্ষ করার বিষয়, ৯৫(গ)-তে যোগ্যতা না থাকিলে… যোগ্য হইবেন না এবং ১১৮(১) ‘উক্ত বিষয়ের প্রণীত আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে…নিয়োগদান করিবেন’—দুটোতেই করিবেন এবং হইবেন না, কথাটি রয়েছে।
সংবিধান এবং সরকার যদি আমানতই হয়, তবে তার সংরক্ষণ এবং প্রতিপালন কি আমাদেরই ওপর বর্তায় না? সংবিধান হচ্ছে আমাদের জনগণের দ্বারা জনগণের মধ্যে সর্বোচ্চ চুক্তি, সর্বোচ্চ আমানত। পবিত্র কোরআনে সুরা মায়েদায় প্রথম আয়াতেই বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা (সততার সঙ্গে) চুক্তিনামা মেনে চলো।’ আমরা সংবিধান না মেনে আল্লাহর বিধান অমান্য করেছি। কোনো রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে এ দাবি তোলেনি। সর্বোচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করে কোনো নাগরিক এই আইন না করা কেন বেআইনি হবে না এবং আইন প্রণয়ন করতে কেন বলা হবে না—এর প্রতিকার চেয়ে কোনো রিট পিটিশন করেননি। আমরা যারা বিচারপতি ছিলাম বা আছি, তারাও কোনো সুয়োমোটো রুল ইস্যু করে সংবিধানকে রক্ষা করিনি।
প্রথম আলো: নির্বাচন কমিশন গঠনে নেপাল, পাকিস্তান ও ভুটানে ভিন্ন ভিন্ন আইন আছে। আমরা অনুসরণ করছি ভারতকে, যেখানে ৭৫ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন গণতন্ত্র আছে। আমাদের এখানে কোন বিধান ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে বলে মনে করেন, যেখানে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে?
বিচারপতি এম এ মতিন: নেপালে তাদের শাসনতন্ত্রে ২৪৫-২৪৭ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষমতা এবং প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি একটি সাংবিধানিক কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। এই সাংবিধানিক কাউন্সিলে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা প্রমুখ। কাউন্সিল বিচার করবে যাঁকে সুপারিশ করছেন, তাঁর সামাজিক মর্যাদা, উচ্চতর নৈতিক চরিত্র, তাঁর সম্বন্ধে জনগণের ধারণা, তঁার বিগত জীবনের কর্মকাণ্ড ইত্যাদি। কাউন্সিল নামগুলো সংসদে পাঠাবে। সংসদীয় কমিটিতে শুনানি হবে। কাউন্সিল সাংবিধানিক কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৬৪(২০১০) অনুযায়ী কাজ করবে।
পাকিস্তানে শাসনতন্ত্রের ২১৩ অনুচ্ছেদের ক্ষমতায় রাষ্ট্রপতিই নিয়োগ দেবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতা বা নেত্রীর সঙ্গে কার্যকর আলোচনার পর তিনটি নাম ঠিক করবেন। তাঁদের মধ্যে মতের মিল না হলে প্রত্যেকে আলাদাভাবে নিজ নিজ তালিকা সংসদের পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে পাঠাবেন। কমিটি তিনটি নামের মধ্যে একটি নাম সুপারিশ করবে। সে কমিটিতে সরকারি দলের ৫০ শতাংশ এবং বিরোধী দলের ৫০ শতাংশ সদস্য থাকবেন। ১২ সদস্য নিয়ে কমিটি হবে, যার ৩ ভাগের ১ ভাগ হবে সিনেটের সদস্য। ভুটানে তাদের ২০০৮ সালের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী কমিশন গঠিত হয়। তবে সব কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন অ্যাক্ট ২০৭৩(২০১৭) অনুযায়ী চলে। ভুটানে রাজতন্ত্র চলছে। তাই এ তিন দেশের কোনোটি আমাদের দেশের জন্য উপযোগী নয়। ভারত একটি ফেডারেল সরকার। সাংবিধানিক ক্ষমতার ভারসাম্য কঠোর। সেখানে গণতন্ত্র সফলভাবে চলমান। তাদের বিচারব্যবস্থা স্বাধীন ও আস্থাশীল। তাই আমাদের আবহাওয়ায় তুলনা করা যায় না। এসব বিদেশি নির্বাচনের চারা আমাদের মাটিতে পুঁতে দিলেই গাছ হয়ে উঠবে না। আমাদের নিজস্ব অবস্থার বিবেচনায় নিজস্ব বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেটা করবে জনগণ ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে। সব দল মিলে এবং নাগরিক সমাজের মিলিত চেষ্টায় একটি গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া বের করা মোটেই অসম্ভব নয়। শুধু প্রয়োজন সদিচ্ছা ও দেশপ্রেমের। সার্চ কমিটি ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে। আমি নিজে সার্চ কমিটির সদস্য এবং পরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। এখানে সার্চ কমিটির ক্ষমতা সীমিত।
প্রথম আলো: ৫৪ বিশিষ্ট নাগরিক আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন, যাঁদের অন্যতম স্বাক্ষরদাতা আপনিও। কিন্তু জাতীয় সংসদে যেখানে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগীদের একচ্ছত্র আধিপত্য, সেখানে নির্বাচন কমিশন আইনে বিরোধী দলের দাবি গ্রাহ্যে নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন কি? না এটি সরকারকে সার্চ কমিটির মতো আরেকটা সুযোগ এনে দেবে?
বিচারপতি এম এ মতিন: আমাদের দেশের ক্ষমতাসীন কোনো সরকারই বিরোধী দলের কথায় কান দেয় না। তবে দাবিটি যখন গণমানুষের হয়, অর্থাৎ জাতি যদি দাবিটি সমর্থন করে, তখন সরকারের মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। উদাহরণ—চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ১১ অনুচ্ছেদ বাতিল হয়ে গেলেও সব দলের উদ্যোগে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তা পুনঃসংযোজিত হয়েছে। চতুর্থ সংশোধনীতে সুপ্রিম কোর্টের জজ নিয়োগের ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করার বিধান বাতিল হলেও পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তা আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা সেদিনকার প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে অগ্রাহ্য করলেও পরে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংযোজিত হয়েছে। যখন কোনো আইন করা হয়, তখন শুধু বর্তমানকে বিবেচনায় আনলে চলে না। অনেক দূরে তাকাতে হয়। কারণ, ইতিহাস কোনো বিশেষ নির্বাচনকালে দাঁড়িয়ে থাকে না। অতীতের ব্যর্থতা নয়; ভবিষ্যতের উজ্জ্বল দিনগুলোর দিকে তাকাতে হবে। সার্চ কমিটির কথা আগেই বলেছি। ৯৫ অনুচ্ছেদের আদেশ বাস্তবায়নে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন অর্ডিন্যান্স-২০০৮ জারি করলেও সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল ঘোষণা করেন। আবার কোনো কোনো বিচারপতি শুধু ৯(৪) ধারাকে বাতিল ঘোষণা করেন। অডিয়েন্সের প্রতি জনমত বিবেচনায় সরকার তাকে আইনে পরিণত করেনি। যে আইন আইনই নয়, এমন আইন সংসদ করতে যাবে কেন? আমাদের আগের ইতিহাস কি তারা ভুলে যাবে?
প্রথম আলো: আপনাদের দাবির মধ্যে এখন থেকেই জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে, সেই লক্ষ্যে কাজ করার কথা বলেছেন। বর্তমান বাস্তবতায় তা কি সম্ভব? আপনাদের কাছে কোনো ফর্মুলা আছে কি?
বিচারপতি এম এ মতিন: ইটারনাল ভিজিল্যান্স ইজ দ্য প্রাইস অব লিবার্টি। এখন থেকে কেন, সর্বক্ষণ জনগণকে কাজ করে যেতে হবে। ফর্মুলা জাতি দেবে। ব্যক্তিবিশেষের ফর্মুলা কোনো কাজে দেবে না। যদি জনমত তৈরি হয়, যদি জনগণ চায় যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক, তখন পথ বের হবেই। যদি সিদ্ধান্ত হয়, তবে তখন তা কার্যকর করার জন্য আইন প্রণয়ন করা কোনো কঠিন কাজ নয়। দেশে যোগ্য লোকের অভাব নেই। অভাব হচ্ছে সদিচ্ছা ও সৎ সাহসের।
প্রথম আলো: যখন সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে শক্তির ভারসাম্য ছিল, তখনই আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হয়নি। এবার কি সে রকম কোনো সম্ভাবনা দেখেন? না হলে আবারও কি আমরা হরতাল-অবরোধের যুগে প্রত্যাবর্তন করব? এ রকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে দেশের অর্থনীতি কোথায় যাবে?
বিচারপতি এম এ মতিন: অতীতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই ভবিষ্যতেও হবেন, এমন নেতিবাচক ধারণা গ্রহণযোগ্য নয়। হরতাল একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। হরতালকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই মামলা আপিল বিভাগে গেলে রায়টি খারিজ হয়ে যায়। আবদুল মান্নান ভূঁইয়া বনাম বাংলাদেশ নামক মামলায় যে রায় হয়েছিল, সে রায় আদালতের পক্ষে আমি দিয়েছিলাম। হাইকোর্ট বলেছিলেন, এটি অপরাধ। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, এটা অধিকার। মতপ্রকাশের সব মাধ্যম শাসনতান্ত্রিক।
প্রথম আলো: স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও কীভাবে নির্বাচন হবে, আইন না সার্চ কমিটি ইত্যাদি বিতর্ক চলছে। অনেকে বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাটিই ভেঙে পড়েছে। এটি পুনরুদ্ধারের কোনো উপায় দেখছেন কি? যদি সে রকম কোনো উপায় খুঁজে বের করা না যায়, তাহলে কি মানুষের ভোটাধিকার স্থায়ীভাবে নির্বাসিত হবে?
বিচারপতি এম এ মতিন: নির্বাচন নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা প্রশংসনীয়। ১৯৪৪ সালে যখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলছিল, তখন হাউস অব কমন্সের নির্বাচন এক বছর পিছিয়ে দিতে হলো। পার্লামেন্ট দাঁড়িয়ে জনগণকে এক বছরের জন্য ভোটহীন রাখায় দুঃখ প্রকাশ করে স্যার উইনস্টন চার্চিল ইংরেজিতে যা বলেছিলেন তার তরজমা করলে অর্থ দাঁড়ায়, ‘একজন ছোটখাটো মানুষের ছোট একটা পেনসিল হাতে নিয়ে ছোট একটি ভোটকক্ষে ঢুকে ছোট একটি ব্যালটে ছোট একটি দাগ কেটে দেওয়াই হলো গণতন্ত্রের প্রতি অতলস্পর্শী শ্রদ্ধাজ্ঞাপন—এর বাইরে এমন কোনো কথার ফুলঝুরি অথবা বিশদ আলোচনা নেই, যা এই বিষয়টির গুরুত্ব কমাতে পারে।’
এই ক্ষুদ্র মানুষের অধিকার রক্ষায় আবদুল মুনিম চৌধুরী বনাম বাংলাদেশ মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ আটটি তথ্য দেওয়ার বিধান দিয়েছে। যে বিধান নির্বাসিত করার জন্য তদানীন্তন ক্ষমতাসীন দল আবু ছফা নামক এক ভুয়া লোকের নামে আপিল করে ধরা পড়ে যায়, যে লোক আসলে কাল্পনিক। আপিল বিভাগ মামলাটি না শুনেই ডিসমিস করে দিল। ড. কামাল হোসেন আদালতে ঘোষণা করেন, ‘আমি এই আদালতে শুয়ে পড়লাম। যতক্ষণ এ আদেশ রিকল করা না হবে এবং পূর্ণাঙ্গ শুনানি না দেওয়া হবে, আমি পড়ে থাকব। আমার লাশ যাবে, আমি যাব না।’ বাধ্য হয়ে তখনকার আপিল বিভাগ আদেশটি বাতিল করে এবং আপিলটি পরবর্তী প্রধান বিচারপতির আদালতে শুনানি হয় এবং ডিসমিস হয়। হাইকোর্টের রায় বহাল হয় এবং ১৯৭২ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ১৯৭১-এ ১২ অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করা হয়। রহমত আলী এমপি বনাম নির্বাচন কমিশন মামলায় হাইকোর্ট যে রায় দেন, তার ফলে ভাটার তালিকা থেকে ১ কোটি ২০ লাখ ভুয়া ভোট বাদ দিয়ে নির্বাচন করা সম্ভব হয়। সে রায়ও আপিল বিভাগে বহাল থাকে। হাইকোর্টের এ দুই রায় আদালতের পক্ষে আমি দিয়েছিলাম। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ভোটাধিকার রক্ষায় যে ভূমিকা রেখেছেন, তা থেকে জাতি আশা করতে পারে, ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্ট একই দায়িত্ব পালন করবেন। প্রয়োজন আবদুল মুনিম চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের মতো আইনজীবীর। উপায় চাইলেই উপায় পাওয়া যায়। চাওয়াটা হতে হবে ঐক্যবদ্ধ, নিষ্কাম, নিঃস্বার্থ এবং জনস্বার্থে চাওয়া। স্রষ্টা মানুষের কোনো চেষ্টাকেই ব্যর্থ করে দেন না। যে জাতি ইংরেজদের তাড়িয়েছে, পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী তাড়িয়েছে, সে জাতি যেকোনো জঞ্জাল তাড়াতে পারবে, যদি চায়। নৈরাশ্যবাদে আমি বিশ্বাস করি না। আমরা পেরেছি, আমরা পারব, এ-ই হোক আমাদের প্রত্যয়।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
বিচারপতি এম এ মতিন: আপনাকেও ধন্যবাদ।