ড. সুবর্ণ বড়ুয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসায়িক মডেল, এর আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং ফাইন্যান্সিয়াল টেকনোলজি (ফিন-টেক) তাঁর গবেষণার অন্যতম প্রধান বিষয়। তিনি বর্তমানে এ-সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং দেশে-বিদেশে পরামর্শক ও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। প্রথম আলোর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সাম্প্রতিক প্রতারণাপূর্ণ কর্মকাণ্ড, দেশের ই-কমার্সের ওপর এর প্রভাব, ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং এর বিকাশে করণীয় সম্পর্কে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া
প্রথম আলো: করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে ই-কমার্সের বাণিজ্য ভালো করেছে। বাংলাদেশেও এই সময়ে এর বিকাশ হয়েছে। ইভ্যালি ও আরও কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ফাটকাবাজির কারণে দেশে এ বাণিজ্যের বিকাশের পথকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করল?
সুবর্ণ বড়ুয়া: বিশ্বজুড়ে ই-কমার্স অনেক দূর এগিয়ে গেছে এবং আরও যাবে। আমরা চাই বা না চাই, বাংলাদেশেও ই-কমার্সই নতুন ভবিষ্যৎ। ফলে ইভ্যালি এবং অন্যান্য কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড দীর্ঘ মেয়াদে এ খাতের বিকাশের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বলে আমি মনে করি না। বরং যা ঘটছে, তা দীর্ঘ মেয়াদে এ খাতের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
প্রথম আলো: বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করবেন কী?
সুবর্ণ বড়ুয়া: খেয়াল করে দেখবেন, এ গুটিকয় প্রতিষ্ঠানের বাইরে কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছে। ইভ্যালি ঘটনার প্রভাব তার ওপর খুব বেশি পড়েনি। এর কারণ হলো এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠানের ভোক্তাশ্রেণির পার্থক্য। দ্বিতীয়ত, এ দেশে এ ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ফাটকাবাজি নতুন কিছু নয়, এখন শুধু এর ধরন বদলেছে। আগে যুবক কিংবা ডেসটিনি ছিল আর এখন তা শুধু ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তরিত হয়েছে। ফাটকাবাজি ডিজিটাল ফরম্যাটেও যে হতে পারে, সেই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ইভ্যালি আমাদের দিয়ে গেল। এ ঘটনা না ঘটলে হয়তো ধারণাই করতে পারতেন না যে কত সুকৌশলে ডিজিটাল ফাটকাবাজি হতে পারে।
এ খাতের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য কিছুটা শঙ্কা বিরাজ করতে পারে। কিন্তু এ শিক্ষা কাজে লাগালে এবং ভালো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা ও বিকাশের সহায়ক নীতি ও আইনি কাঠামো করে দিতে পারলে দীর্ঘ মেয়াদে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে উজ্জ্বল। আর দক্ষতা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির সামাল দিতে শঙ্কাও দ্রুত কেটে যাবে।
প্রথম আলো: সারা বিশ্বের কোথাও ই-কমার্সকে কেউ বিনিয়োগের জায়গা হিসেবে ভাবে না, যদিও সেখানে অনেক অনেক ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। আমাদের দেশে একশ্রেণির লোক ই-কমার্সকে বিনিয়োগের জায়গায় পরিণত করেছে। এটা কী কারণে ঘটল?
সুবর্ণ বড়ুয়া: বেশ কয়েকটি কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রথমত, দেশে গত এক দশকে গড়পড়তা মানুষের আয় অনেক বেড়েছে। কিন্তু দেখা যাবে সে তুলনায় বিনিয়োগের সুযোগ অনেক কমেছে। বাংলাদেশের সঞ্চয়-জিডিপির অনুপাত ৪০ শতাংশের মতো, কিন্তু আমরা এ বিপুল সঞ্চয়কে প্রকৃত বিনিয়োগে রূপান্তর করতে পারিনি। বাংলাদেশে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ প্রধানত তিনটি জায়গায়—ব্যাংকে জমা রাখা, সরকারি বন্ড (যেমন সঞ্চয়পত্র) এবং শেয়ারবাজার। ব্যাংক ও সরকারি বন্ডগুলোতে সুদের হার অনেক কমেছে। অন্যদিকে শেয়ারবাজারের ঝুঁকি এবং অতীত ইতিহাস দেখে অনেকেই সঞ্চয় নিয়ে এখানে আসতে ভয় পান। এ পরিস্থিতিতে সঞ্চয় বিনিয়োগ করে কিছু লাভ করতে মানুষ কোথায় যাবেন!
দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগের আর যেসব ক্ষেত্র আছে, সেখান থেকে অর্জিত সামান্য সুদ কিংবা অন্যান্য আয়ের ওপর অনেক ক্ষেত্রেই দিতে হয় কর। এরপরও যা আয় হচ্ছে, বছর শেষে মূল্যস্ফীতির কারণে তার প্রকৃত মূল্য নেমে হয়ে যাচ্ছে ঋণাত্মক। ফলে বিনিয়োগ থেকে খুব বেশি আয় বা লাভ করার সুযোগ থাকছে না।
তৃতীয়ত, দেশের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আমরা যতই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের কথা বলি না কেন, একটি ভালোসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবক কাজের অভাবে অলস এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রেতাশ্রেণি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এদের অধিকাংশই তরুণ কিংবা মধ্যবয়সী। এই জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আকর্ষণীয় বিকল্প বিনিয়োগের যে অভাব, সুকৌশলে তারই সুযোগ নিয়েছে এ প্রতিষ্ঠানগুলো। বেশি লাভের আশায় বুঝে না বুঝে এ ফাঁদে তাঁরা পা দিয়েছেন।
প্রথম আলো: ই-কমার্স অন্যান্য বাণিজ্যের মতোই একটি বিকিকিনির হাট। ই-কমার্সের জন্য পৃথক আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে কি?
সুবর্ণ বড়ুয়া: অবশ্যই আছে। ই-কমার্স ব্যবসা যে কী, তা নিয়ে আমাদের অনেকেরই এখনো যথাযথ ধারণা নেই। এমনকি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁদের অনেকেও এ ব্যবসাকে প্রচলিত ব্যবসার সঙ্গে মিশিয়ে ফেলছেন। ই-কমার্স কোনোভাবেই আর দশটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মতো নয়, যার কারণে প্রচলিত আইনি কাঠামো এ খাতের নিয়ন্ত্রণ ও বিকাশে খুব বেশি কার্যকর বা প্রযোজ্য হবে না।
প্রথম আলো: অন্য প্রচলিত ব্যবসার চেয়ে ই-কমার্সের আলাদা বৈশিষ্ট্যগুলো একটু ব্যাখ্যা করবে কি?
সুবর্ণ বড়ুয়া: যেমন যেকোনো প্রচলিত ব্যবসার আর্থিক সক্ষমতা আমরা বিচার করি তার কত স্থাবর সম্পদ (যেমন ফ্যাক্টরি, বিল্ডিং, জমি, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) আছে, তা দিয়ে। ই-কমার্সের মতো সব টেক-ড্রিভেন বা প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানির (যেমন উবার কিংবা পাঠাও) সক্ষমতা কিন্তু এই মাপকাঠিতে বিচার করা যাবে না। প্রযুক্তির অভাবনীয় ক্ষমতার সহায়তায় এ প্রতিষ্ঠানগুলো ছোট একটি অফিস বা শুধু একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিয়েও বিপুল জনগোষ্ঠীকে সেবা দিতে পারে। ফলে এদের অন্তর্নিহিত মূল্যায়ন বা ব্যবসার ‘ইন্ট্রিন্সিক ভ্যালুয়েশন’ কখনোই প্রচলিত ব্যবসার মতো নয়। ফলে এ ধরনের ব্যবসাগুলোর বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে ই-কমার্সের পাশাপাশি সব প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসার বিকাশ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি পৃথক আইন করা যায়। এটা করা গেলে ই-কমার্সের বাইরে প্রযুক্তিনির্ভর নতুন ধরনের যে স্টার্টআপগুলো আসছে, তাদের বিকাশেও এ আইন সরকার ব্যবহার করতে পারবে।
প্রথম আলো: ই-কমার্সের তদারকির পথ কী? কোনো প্রতিষ্ঠানের বিজনেস মডেল কী বা কেউ যাতে প্রতারণা করতে না পারে, তা দেখভাল করবে কে? আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন আছে কি?
সুবর্ণ বড়ুয়া: আমার মনে হয় না আলাদা প্রতিষ্ঠানের দরকার আছে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপ্তি এবং সক্ষমতা যা আছে, তা দিয়েই অন্যান্য খাতের মতো এ খাতকে দেখাশোনা করা সম্ভব। একটি আইন তৈরি হলে সরকারের যথাযথ একটি প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতাসহ তদারকির দায়িত্ব দিলে খুব ভালো হবে। ভারতে ই-কমার্স নিয়ন্ত্রিত হয় প্রধানত একটি আলাদা ‘কাস্টমার প্রটেকশন রুলস’-এর মাধ্যমে, যা কার্যকর করে ভোক্তা অধিদপ্তর। আমাদের দেশেও একটি যথাযথ আইন করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে যথাযথ ক্ষমতাসহ কার্যকর করার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকেও এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্যানেলও তৈরি করা যায়, যাঁরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন। তাঁরা নিয়মিত এ খাতের বাজার বিশ্লেষণ, কোম্পানিগুলোর বিজনেস মডেল বিশ্লেষণ, অসম প্রতিযোগিতামূলক ব্যবহার ইত্যাদি তদারকিতে ভূমিকা পালন করতে পারেন।
প্রথম আলো: বিশ্বাসের জায়গায় প্রকৃত ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা যে ক্ষতির শিকার হলেন, তা পুনরুদ্ধারের পথ কী?
সুবর্ণ বড়ুয়া: বিশ্বাস পুনরুদ্ধার কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে আগে যেমন বলেছি, প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যতটুকুই ক্ষতি দেখছেন, তা শুধুই সাময়িক; দীর্ঘমেয়াদি নয়। তবে দুটি কাজ এ মুহূর্তে জরুরি; এক. প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যেন তাঁদের গ্রাহকদের আগের চেয়ে বেশি সেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেন। যাতে নিয়মিত সেবার ব্যাপারে গ্রাহকেরা আগের চেয়ে একটু হলেও বেশি নিশ্চয়তা ও নির্ভরতা খুঁজে পান। দুই. সরকারের উচিত অত্যন্ত দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ইভ্যালির মতো ঘটনাগুলোর ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে তার নেতৃত্বে ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে একজন করে ‘সমন্বয়ক’ বা ‘তত্ত্বাবধায়ক’ নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এ কমিটিতে এমন বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন, যাঁরা একটি উদ্ভাবনী সমাধানের পথ তৈরিতে প্রত্যক্ষভাবে অবদান রাখতে পারবেন। আশার কথা, ইভ্যালির জন্য হাইকোর্ট ইতিমধ্যে সাবেক বিচারপতি, সচিব, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসহ চার সদস্যের একটি বোর্ড গঠনের আদেশ দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, পরবর্তী সময়ে এ বোর্ড প্রয়োজনে আরও ই-কমার্স বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করবে।
প্রথম আলো: বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ইভ্যালির গ্রাহকদের কোনো দায় সরকার নেবে না। আর্থিক দায় হয়তো সরকারের পক্ষে নেওয়া কঠিন। কিন্তু ইভ্যালি সরকারের অনুমতি পাওয়া একটি প্রতিষ্ঠান এবং তারা তো গোপনে কাজ করেনি। এটা ঠেকাতে না পারার দায় তো সরকারকে নিতে হবে। আপনার মন্তব্য কী?
সুবর্ণ বড়ুয়া: ঠেকাতে না পারার দায় তো কিছুটা সরকারের আছেই এবং এটি কিন্তু সম্প্রতি ই-ক্যাবের ‘ই-কমার্স পলিসি টক’ শিরোনামের এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা স্বীকার করেই নিয়েছেন। আমরা সব সময় বলি, বেসরকারি খাত যা-ই করুক, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সব সময় এক ধাপ এগিয়ে থাকা উচিত। আমাদের সরকারি সংস্থাগুলোকে আগামী ৫-১০ বছরে কী হতে পারে, তার জন্য প্রস্তুতি এখনই শুরু করা উচিত। বেসরকারি, বিশেষভাবে ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনকে মাথায় রেখে উদ্ভাবনী খাতে যে বিকাশ হচ্ছে, সেখানে ভবিষ্যতে কী হতে পারে বা কী চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, তার জন্য এখনই কাজ করা গেলে ই-কমার্সের মতো এমন পরিস্থিতি এড়ানো যেতে পারে।
প্রথম আলো: অনেকেই ইভ্যালির প্রতারণার ঘটনায় গ্রাহকদের লোভকে দায়ী করছেন। এটা কতটুকু যৌক্তিক?
সুবর্ণ বড়ুয়া: আপনি বলতে পারেন লোভ তো ছিলই। কিন্তু সাধারণ মানুষকে দায়ী করার আগে লোভের পেছনের কারণগুলোকে কিন্তু আপনাকে দেখতে হবে যে তাঁরা কোন পরিস্থিতিতে এ ফাঁদে পা দিয়েছেন। আগেই বলেছি, ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একটি বিরাটসংখ্যক মানুষকে প্রলুব্ধ করেছে। লোভ তো সবারই কমবেশি থাকবেই; হয়তো কিছু মানুষ সত্যিকার অর্থেই অতি লোভে এ জায়গায় টাকা লগ্নি করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই এ প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করেছে সার্বিক পরিস্থিতি। তবে পুরো প্রক্রিয়ায় এ ফাটকাবাজি প্রতিষ্ঠানগুলোকেই আমি সর্বতোভাবে দোষী বলব। কারণ, তারা মানুষের সার্বিক পরিস্থিতিকে সুকৌশলে অনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়েছে।
প্রথম আলো: দেশে ই-কমার্সকে আরও ছড়িয়ে দেওয়া ও এ খাতের ওপর আস্থা বাড়াতে সরকার ও উদ্যোক্তাদের জরুরিভাবে কী করা দরকার?
সুবর্ণ বড়ুয়া: এ খাতের জন্য সরকারের যে সদিচ্ছা রয়েছে এবং সরকার যে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়মিতভাবে প্রচার করা জরুরি। এ প্রচারের ক্ষেত্রে সরকার যে এ খাতকে অন্যান্য প্রচলিত খাতের মতোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উদীয়মান খাত হিসেবে গণ্য করে এবং এর উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতায় প্রস্তুত—এ বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। অন্যদিকে ই-ক্যাবের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার সদস্যদের কার্যক্রমের দায় কিছুটা হলেও তাকে নিতে হবে। ইভ্যালির মতো চার সদস্যের সদস্যপদ তারা বাতিল করেছে অনেকটা সময় পরে এসে। ই-ক্যাবের উচিত হবে এখনই তার সদস্যদের জন্য একটি ইউনিফর্ম নীতিমালা (প্রিন্সিপল-বেসড গাইডলাইন) করে দেওয়া, যাতে তার সব সদস্য একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবসায়িক নীতি মেনে চলে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ ছাড়া সদস্যদের সঙ্গে ই-ক্যাবের নিয়মিতভাবে বৈঠক এবং সচেতনতা সভা পরিচালনা করা উচিত। ই-কমার্স-সংক্রান্ত জনসচেতনতা তৈরিতে ই-ক্যাব বছরজুড়ে নানা ধরনের জনমুখী অনুষ্ঠান করতে পারে। একটি ব্যবসায়িক সংগঠন হিসেবে ই-ক্যাবকে সদস্যমুখী এবং গ্রাহকমুখী—দুই দিকেই প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বিস্তার করতে হবে। বাজারে বেশ অভিযোগ আছে যে এ খাতে সঠিক সেবা পাওয়া যায় না। উদ্যোক্তাদের উচিত অনতিবিলম্বে সেবায় নজর দেওয়া এবং বিনিয়োগ করা, যাতে গ্রাহকদের মধ্যে একধরনের নির্ভরতা এবং নিশ্চয়তা গড়ে ওঠে। এমন নিয়মিত বা গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে ই-ক্যাবের সময়মতো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রথম আলো: ই-কমার্সের ভোক্তারা যেন ভোক্তাই থাকে, বিনিয়োগকারী না হয়, সেটার জন্য কী করা উচিত?
সুবর্ণ বড়ুয়া: এ সচেতনতার জন্য প্রথম প্রয়োজন যথাযথ শিক্ষা। মানুষকে বোঝাতে হবে কোনটা বিনিয়োগ এবং কোনটা বিনিয়োগ নয়। এর জন্য ই-ক্যাব এবং সরকারের এজেন্সিগুলো যৌথভাবে ব্যাপক আকারে জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ও জনপ্রশিক্ষণ করতে পারে। উপরন্তু যেসব মূল কারণে আজ একটি বিরাটসংখ্যক গ্রাহক এভাবে ফাঁদে পা দিচ্ছেন, সেগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। সচেতনতা তৈরি, ব্যক্তি খাতে যথাযথ বিনিয়োগের পরিবেশ, আয়ের সুযোগ তৈরি এবং যুবসমাজের জন্য আরও বেশিসংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারলে দীর্ঘ মেয়াদে ই-কমার্সে ভোক্তা থেকে বিনিয়োগকারী হওয়ার প্রবণতা অনেকাংশেই হ্রাস পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
সুবর্ণ বড়ুয়া: আপনাকেও ধন্যবাদ।