আত্মবিক্রীত বুদ্ধিজীবীরা ক্ষমতার ধান্দায় ব্যস্ত

আবুল কাসেম ফজলুল হক। শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক। তাঁর রচনা স্বদেশভাবনা ও রাজনৈতিক চিন্তায় ঋদ্ধ। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ মুক্তিসংগ্রাম, কালের যাত্রার ধ্বনি, নৈতিক চেতনা: ধর্ম ও মতাদর্শ, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলন, উনিশ শতকের মধ্যশ্রেণি ও বাঙলা সাহিত্য। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আহমদ শরীফ চেয়ার অধ্যাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত-বর্তমান তথা বাংলাদেশের শিক্ষার হালচাল নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান

আবুল কাসেম ফজলুল হক
প্রশ্ন

প্রথম আলো: ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ পূরণ করল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক হিসেবে আপনার প্রতিক্রিয়া কী।

আবুল কাসেম ফজলুল হক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমি আনন্দিত ও অনুসন্ধিৎসু। শতবর্ষের ইতিহাস জানতে এবং এর বিকাশের খুঁটিনাটি খোঁজ করতে—এর পটভূমিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অবস্থা বিচার করতে আমার যে কৌতূহল, তা যেন নতুনভাবে জেগে উঠেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা ছাত্রছাত্রী ছিলেন, তাঁরাই তো এই ভূভাগের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকে বিকশিত করার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিকাশ সহজে হয়নি, তাতে অনেক জটিল গ্রন্থী ছিল, সাধনা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জটিলতা অতিক্রম করে এগোতে হয়েছে। ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় এবং ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান অবস্থায় এসেছে। চলার গতি বহমান আছে, থাকবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে গেল শতকের দ্বিতীয় দশকে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। এখন কেন বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নেতৃত্ব দিতে পারছে না?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ও উত্তরকাল নামে আমার একটি ছোট বই আছে। তাতে এ প্রশ্নের উত্তর আছে। তারপরও বলি, এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহের হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদির প্রমুখ। তাঁরা ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা প্রাক্তন ছাত্র। তাঁরা উপলব্ধি করেছিলেন, ধর্মান্ধতা মুসলমানদের উন্নয়নের অন্তরায়। মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপত্র শিখার মটো ছিল, ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ তাঁরা বিশ্বাসের বন্ধন থেকে মানুষের মনকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। মুসলিম লীগের রাজনীতি যখন প্রবল হয়ে উঠল, তখন বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনও স্তিমিত হয়ে পড়ল।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বাংলাদেশে এখন বুদ্ধির মুক্তির লক্ষ্যে কোনো আন্দোলন দেখছেন কি?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: স্বাধীন বাংলাদেশে তো চিন্তার চর্চাই নেই, এখানে বৌদ্ধিক আন্দোলনে নেতৃত্বের প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক। আত্মবিক্রীত বুদ্ধিজীবীরা কেবল অর্থবিত্ত আর ক্ষমতার ধান্দায় লিপ্ত থাকেন। ঢাকায় বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অভিব্যক্তি ঘটেছিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে। স্বাধীন বাংলাদেশে সেই চেতনা হারিয়ে গেছে। এখানে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, ন্যায়নীতির প্রশ্নে চিন্তাভাবনা অল্পই হয়েছে, এখানে মৌলবাদবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, নারীবাদী আন্দোলন হয়েছে, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৯০ দিন মেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে (যদিও পঞ্চদশ সংশোধনীতে তা বাতিল করা হয়েছে)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ও ছাত্ররা এসবে মত্ত হয়ে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের চেতনা, একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা—সবই হারিয়ে ফেলেছেন। নবজাগরণ দরকার, নব উত্থান দরকার, নতুন জন্ম দরকার—রেনেসাঁস দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন (১৯২৬-৩৮) চালানো হয়েছিল বাঙালি মুসলমান সমাজে রেনেসাঁস সৃষ্টির লক্ষ্যে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য জ্ঞান সৃষ্টি। কিন্তু আমরা দেখছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন অসুস্থ দলীয় রাজনীতিচর্চা হচ্ছে। শিক্ষকেরা জড়িয়ে পড়ছেন দলাদলিতে। এর জন্য কাকে দায়ী করবেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: এর জন্য দায়ী সরকার—যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে। দায়ী রাজনৈতিক দলগুলো। দায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষকেরা। বাংলাদেশে বৃহৎ শক্তিবর্গের সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকাও দায়ী। হলিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সব দিক বিবেচনা করে উন্নত ভবিষ্যৎ সৃষ্টির কর্মসূচি ও কার্যক্রম চালাতে হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাধীনভাবে চলবে, সরকারের আজ্ঞাবহ হবে না; এই উদ্দেশ্যে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ হয়েছিল। সেই অধ্যাদেশের অপব্যবহার হচ্ছে যথেচ্ছভাবে। আপনি কি মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ সংশোধন বা বাতিল করা উচিত?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩-এর কিছু সংশোধন অবশ্যই দরকার। কিন্তু সেই সংশোধন কারা করবেন? যাঁরা উন্নত অবস্থা চান, তাঁদের বক্তব্য স্পষ্ট করে প্রকাশ করতে হবে। তার জন্য প্রথমে দরকার বৌদ্ধিক আন্দোলন। ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ যা চিন্তা করে, কাল তা অন্যরা চিন্তা করে। কিন্তু অনেকে মনে করেন, এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিন্তার বিষয়টিই হারিয়ে গেছে। আপনার মন্তব্য কী?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: বাংলাদেশে সর্বজনীন কল্যাণে সুষ্ঠু চিন্তার সূত্রপাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হতে পারে এবং সেটাই কাম্য। মন্দের পাশাপাশি ভালোও আছে। ভালোটা বেছে নিয়ে ভালোর দিকে এগোতে হবে। যে বাস্তবতা তৈরি হয়েছে তার পরিবর্তে উন্নত অবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে, গতানুগতিক চিন্তা দিয়ে হবে না।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মোটাদাগে তিনটি আমল পার করেছে বা করছে। ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমল। এর মধ্যে কোন আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার সুনাম ধরে রাখতে পেরেছে বলে মনে করেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মোটামুটি ভালোভাবেই চলেছে। তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন পিছিয়ে না থাকে—এ রকম মনোভাব ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে ছিল। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তুলনায় ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ ভিন্ন প্রকৃতির ছিল। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীরা উপনিবেশ দেশগুলোতে ভালো শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা দিতে কার্পণ্য কম করেছে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগের ধারাতেই চলেছে। পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বেশ ভালোভাবেই চলছিল এবং বিকাশশীল ছিল। আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধের সফল পরিসমাপ্তির পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের ভূমিকা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য ছিল। শেষ দিকটায় প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি একান্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিল। শিক্ষা ও গবেষণার দিক দিয়েও ১৯২১-১৯৭১ পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর ভালোভাবে চলতে পারছে না। অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হলে প্রথমে পক্ষপাতমুক্ত স্বাধীন হলিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইতিহাসের ধারায় সমস্যার প্রকৃতিকে বুঝতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় তার সুনাম প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে বিশ্বমান (!)অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় মান উন্নত করার জন্যও চেষ্টা করতে হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: যেকোনো দেশ ও জাতির মেধা–মনন চর্চা ও উৎকর্ষের প্রতীক বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই অবস্থানে থাকতে পারল না কেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: বাংলাদেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা খারাপ অবস্থায় আছে। অবশ্য জিপিএ-৫ পাওয়া দিয়ে বিচার করলে হবে না। এর মধ্যে কি উচ্চশিক্ষার অবস্থা ভালো হতে পারে? উন্নত অবস্থা লাভ করতে হলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থার উন্নতি নিয়েও ভাবতে হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বৈশ্বিক সূচকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক নিচে। এমনকি এশিয়ার প্রথম সারিতেও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এর জন্য কি কেবল সরকার দায়ী? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষকদের কোনো দায় নেই?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: দুরবস্থার জন্য সবাই দায়ী। যারা যত ক্ষমতাবান ও ধনবান, তারা তত বেশি দায়ী। দেশের রাজনীতির মান উন্নত বলে শিক্ষাব্যবস্থার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানও উন্নত হবে। বৈশ্বিক সূচকের চেয়ে দেশের বিবেকবান চিন্তাশীল ব্যক্তিদের চিন্তাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: পূর্বাপর সব সরকারই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন মতকে লালন না করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একদল আনুগত্যশীল মানুষ চায়। এর ক্ষতিটা কত অপরিসীম ভাবতে পারেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: এ ক্ষতি সম্পর্কে দেশে অনেকেরই গভীর উপলব্ধি আছে। কিন্তু ক্ষতি পূরণের জন্য যে সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি, সঙ্গশক্তি ও কাজ দরকার, সেদিকে কারও মনোযোগ দেখি না।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কৃতিত্ব দাবি করে। কিন্তু জ্ঞানচর্চার আন্দোলনে কেন পিছিয়ে থাকল?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: ব্রিটিশ আমলে ও পাকিস্তান আমলে আমাদের রাজনীতির চেহারা অনেক পরিচ্ছন্ন ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর রাজনীতির সেই পরিচ্ছন্নতা অল্প দিনের মধ্যেই হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে যেসব রাজনৈতিক আন্দোলন হয়েছে, তার প্রতিটিই কি সঠিক ছিল? বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। বাংলাদেশ রাজনৈতিক দিক দিয়ে ভালো অবস্থায় নেই। জ্ঞানচর্চা যে হচ্ছে না, তা নয়। প্রচারমাধ্যমে সেগুলো তেমন আসে না। আমার মনে হয়, জ্ঞানচর্চার দিক দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন পিছিয়ে পড়েছে, রাজনৈতিক দিক দিয়েও তেমনি পিছিয়ে আছে। অবশ্য দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন চলছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: করোনাকালে ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ। এ মুহূর্তে করোনা সংক্রমণ বেশি। কিন্তু যখন কম ছিল এবং গ্রামাঞ্চলে অনেক জনপদে ছিলই না, তখনো সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক বলে মনে করেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: করোনাভাইরাসের কালে সরকার বিচার-বিবেচনা করেই কাজ করছে বলে মনে হয়। কিন্তু সমস্যা হলো সামনে কী হবে, সে সম্পর্কে কারও ধারণাই স্পষ্ট ছিল না। যখন ভাইরাসের বিস্তার ও মৃত্যুর হার কিছুটা কমেছিল, তখন মাসখানেকের মধ্যে কিছু পরীক্ষা ও আনুষঙ্গিক কাজ করে ফেলা যেত। এখন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করতে হবে। মনে হয় করোনাভাইরাস নিয়েই চলতে হবে মানবজাতিকে। করোনাভাইরাসের রূপ ও প্রকৃতি আজও উন্মোচিত হয়নি। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিজ্ঞানে ভরসা রাখি। বিজ্ঞানের অবদান কায়েমি স্বার্থবাদীরা দখল করে নেয়। বিজ্ঞানীরা সর্বজনীন কল্যাণে সেগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন না। দরকার রাষ্ট্রীয় ও আন্তরাষ্ট্রিক রাজনীতিকে বিজ্ঞানসম্মত করা। সবার মধ্যে বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি দেখা দিক—এ কামনা করি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। কীভাবে গবেষণার মান বাড়ানো যায়?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো চলছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকতা চাকরি পাওয়ার জন্য ও পদোন্নতির জন্য গবেষণা করা হয়। তা ছাড়া এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভের জন্য গবেষণা করতে হয়। এটাও চাকরির জন্যই। এসব গবেষণায় গবেষকের চিন্তার স্বাধীনতা থাকে না। এ রকম বাধ্যবাধকতার মধ্যে যান্ত্রিক নিয়মে এসব গবেষণা করতে হয়। এর মধ্যে যথার্থ গবেষণা সম্ভব নয়। স্বাধীন চিন্তাশীলতার সুযোগ কমই আছে। উৎকৃষ্ট গবেষণার জন্য চিন্তার স্বাধীনতা, বৌদ্ধিক (ইন্টেলেকচুয়াল) চরিত্র ও নিঃশর্ত আর্থিক সহায়তা দরকার।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

আবুল কাসেম ফজলুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।