স্বাস্থ্যের ওপর বাণিজ্যের প্রভাব দিন দিন গভীর হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এতে রাশ টানার জন্য কিছু সুপারিশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ‘ল্যানসেট’।
তামাক, মদ, অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও জীবাশ্ম জ্বালানি—এই চার ধরনের অস্বাস্থ্যকর পণ্য ২০১৯ সালে বিশ্বে ১ কোটি ৯০ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৫ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। মৃত্যুর এই অনুমিত হিসাব দিয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেট। সেখানে বলা হয়েছে, ওই চার ধরনের পণ্যের ব্যবসার সঙ্গে ছোট দোকানি থেকে বহুজাতিক কোম্পানি পর্যন্ত নানা স্তরে অনেকে জড়িত।
বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের আওতায় নানা কারণে মানুষের স্বাস্থ্যহানি হয়, মৃত্যু হয়। কর্মক্ষেত্রে মানুষ আহত হয়, দগ্ধ হয়, গ্যাসে দম বন্ধ হয়, কিছু কাজ ক্যানসারের কারণ ঘটায়—এভাবে বেশ কিছু পেশাগত কাজের ফলে ওই বছর আরও ১২ লাখ ২০ হাজার ৫০১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সব মিলিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ২ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮৬। এ সংখ্যা ২০১৯ সালে বৈশ্বিক মোট মৃত্যুর ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এসব মৃত্যুর ক্ষেত্র বাণিজ্যিক পরিসর।
স্বাস্থ্যের ওপর ব্যবসা-বাণিজ্যের কর্মফলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব নিয়ে কোনো বিতর্ক বা প্রশ্ন নেই। কখনো এ প্রভাব ইতিবাচক, কখনো-বা নেতিবাচক। জনস্বাস্থ্যবিদেরা একে বলছেন স্বাস্থ্যের কমার্শিয়াল ডিটারমিন্যান্টস অব হেলথ বা বাণিজ্যিক নির্ধারক। এর মূল বক্তব্য হচ্ছে একজন মানুষের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে কি না, বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের চর্চা তা নির্ধারণ করে দিতে পারে।
ব্যবসা-বাণিজ্যও যে স্বাস্থ্যের নির্ধারক হতে পারে—এ আলোচনার কিছু ইতিহাস আছে। বেশ কয়েক বছর আলোচনার পর ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) স্বাস্থ্যের সামাজিক নির্ধারক বিষয়ে লন্ডন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্যার মাইকেল মারমটকে প্রধান করে একটি কমিশন করেছিল। কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। সামাজিক বিষয়গুলো কীভাবে স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে, স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কাজ করে, তা ব্যাখ্যা করাই ছিল কমিশন গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক। যেমন শিক্ষায় বিনিয়োগে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা পেলে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, প্রতিবেশী ভালো হলে সুস্থতার সুযোগ বাড়ে। খাদ্য নিশ্চয়তা বা সামাজিক নিরাপত্তাজাতীয় বহু বিষয়ও স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এ ধরনের বিষয়ই স্বাস্থ্যের সামাজিক নির্ধারক। এর মূল বক্তব্য হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতে সরাসরি বিনিয়োগের বাইরে সামাজিক খাতে বিনিয়োগও স্বাস্থ্য পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
● কিছু কোম্পানি এমন পণ্য তৈরি ও বাজারজাত করে, যা হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসারসহ নানা রোগ বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
● অস্বাস্থ্যকর পণ্যে ২০১৯ সালে বিশ্বে ১ কোটি ৯০ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়।
● স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার কথা বলে কিছু হাসপাতাল প্রচুর মুনাফা করছে।
● সরাসরি স্বাস্থ্য খাতে নয়, সামাজিক খাতে কিছু বিনিয়োগ স্বাস্থ্য-পরিস্থিতির উন্নতিতে ভূমিকা রাখে।
● বাণিজ্যিক স্বার্থে প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতিকে প্রভাবিত করে থাকে।
● বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার তাগিদ।
স্বাস্থ্যের ওপর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রভাব নিয়ে আগে তেমন সুসংগঠিত আলোচনা হয়নি। যা হয়েছে, তা অনেকটাই বিক্ষিপ্ত। যেমন স্বাস্থ্যের ওপর ধূমপান, কোমল পানীয় বা মদের প্রভাব নিয়ে বহু বছর ধরে বিশ্ব পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এসব সামগ্রিকভাবে বিশ্ব পর্যায়ে কী প্রভাব ফেলছে, তার সমন্বিত আলোচনা কম। স্বাস্থ্যের বাণিজ্যিক নির্ধারক নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ২১ মার্চ একটি ধারণাপত্র প্রকাশ করে। দুই দিন পর ২৩ মার্চ স্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট স্বাস্থ্যের বাণিজ্যিক নির্ধারক বিষয়ে তিনটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে।
প্রবন্ধ তিনটি থেকে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যের সঙ্গে বাণিজ্যের সম্পর্ক জটিল। এ সম্পর্কের ইতি-নেতি দুটোই আছে। তবে কোনো কোনো বহুজাতিক কোম্পানির অতিরিক্ত মুনাফাকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডে মানুষ ও প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতি হয়েছে মারাত্মক।
পাড়ার ছোট দোকান থেকে জাতীয় পর্যায়ের বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং তা থেকে বহুজাতিক আন্তর্জাতিক কোম্পানির সবই তাদের আলোচনার বিষয়। এসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে তারা চারটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রেখেছে। ব্যাপারটা এমন সরল নয় যে কোনো অস্বাস্থ্যকর পণ্য বাজারে ছাড়ার মাধ্যমেই এরা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে জটিল প্রক্রিয়ায়। বাণিজ্যিক স্বার্থে প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতিকে প্রভাবিত করছে। এই প্রভাবের নানা মাত্রা আছে।
ল্যানসেট-এর এই প্রবন্ধে জোর দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ও ন্যায্যতার ওপর। অনেক কোম্পানি দেশে-বিদেশে এমন অনেক অন্যায্যতা সৃষ্টি করে, যা চোখের আড়ালে থেকে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কিছু ছোট দ্বীপরাষ্ট্র বা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ এসব কোম্পানির চাপের মুখে থাকে। সেসব দেশে এরা প্রকৃতির ক্ষয় এবং সমাজ ও স্বাস্থ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করতে নির্ধারক ভূমিকা রাখে।
ল্যানসেট-এর দ্বিতীয় প্রবন্ধে আবার আছে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার কথা বলে ভারতের কিছু হাসপাতাল কী পরিমাণ মুনাফা করছে, তার উদাহরণ। সেখানে চারটি করপোরেট হাসপাতাল অনৈতিকভাবে ২০২২ সালে ১ হাজার ৭৩৭ শতাংশ মুনাফা করেছিল। প্রবন্ধে যদিও শুধু ফরটিস হাসপাতালের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মানুষের জন্ম, বিকাশ, জীবিকা, জীবনযাপন এবং প্রৌঢ়তা—প্রতিটি পর্বেই বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কোনো না কোনো প্রভাব আছে। যেসব কোম্পানি মাতৃদুগ্ধের বিকল্প শিশুখাদ্য, অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, তামাক, চিনি মেশানো পানীয় বা মদের উৎপাদন, মূল্য নির্ধারণ ও বাজারজাত করে, তারা হৃদ্রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, কয়েক ধরনের ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতা বাড়াতে পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখে। কিছু প্রতিষ্ঠান বন উজাড়ের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগের জন্য দায়ী কীটপতঙ্গের পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বব্যাপী ২০ শতাংশ ম্যালেরিয়া বাড়ার কারণ কাঠ, তামাক, কোকা, কফি ও তুলা চাষের জন্য বন উজাড়। নিবিড় কৃষির কারণে বায়ু, মাটি ও পানি দূষিত হচ্ছে, স্বাস্থ্যের ওপর যা সরাসরি বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
স্বাস্থ্যের ওপর এ ধরনের প্রভাব মোটামুটি সর্বজনীন। রাজনীতিক বা নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করে বিভিন্ন কোম্পানি কীভাবে স্বাস্থ্যহানিকর কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়, তার সুনির্দিষ্ট উদাহরণ তুলে ধরেছে ল্যানসেট।
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিকদের নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি) বিরুদ্ধে আফ্রিকার রাজনীতিবিদ, আমলা ও অন্যদের বিপুল পরিমাণ অর্থ উৎকোচ দেওয়ার অভিযোগ আছে। বুরুন্ডিতে নিজেদের ব্যবসার অনুকূলে একটি আইন পরিবর্তন করতে তারা তিন হাজার মার্কিন ডলার খরচ করেছিল। থাইল্যান্ডেও তাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ আছে। যুক্তরাজ্যে ধূমপানসংক্রান্ত একটি মানসম্পন্ন নীতিমালা তৈরির চেষ্টা চলছে। তামাক কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত ৮২টি সংগঠন এ নীতি প্রণয়নের বিরোধিতা করছে। তারা নানা মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ছড়াচ্ছে।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার প্রায় প্রতিটি ধাপে প্রভাব খাটায়। নতুন আবিষ্কার, উৎপাদন, বিতরণ, ব্যবহার—প্রতিটি স্তরে তাদের খবরদারি থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৯৯ সালে ওষুধ কোম্পানি মার্ক একটি প্রদাহ নিরোধক ওষুধের (ভিওক্স) বড় ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা শুরু করেছিল। ওষুধটিতে যে হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালিতে বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী উপাদান ছিল, পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় মার্ক তা চেপে যায়। বিজ্ঞান সাময়িকীগুলোর সম্পাদকীয় নীতি বা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ যাঁরা পর্যালোচনা করেন, কোম্পানিগুলো অনেক সময় তাঁদের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান মনসান্টোর বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে এমন অভিযোগ উঠেছিল।
অনেক কোম্পানি বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আমলেই নেয় না। বর্জ্য তারা খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখে, পানিতে ফেলে দেয়। বাংলাদেশেও এমন উদাহরণ অজস্র। কোমল পানীয়র একটি বহুজাতিক কোম্পানি ২০০০ সালে ভারতের কেরালায় পানীয় বোতলজাত করার ব্যবসা শুরু করেছিল। তখন তাদের বিরুদ্ধে ভূগর্ভস্থ পানিতে বিষাক্ত বর্জ্য ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে কোম্পানিটি ব্যবসা গুটিয়ে আনে, কিন্তু ওই এলাকার মানুষের ক্ষয়ক্ষতির কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি।
বিশ্বের কোথাও কোথাও কর্মক্ষেত্রে শ্রমনীতি ও শ্রমঘণ্টা মানা হয় না। অভিযোগ আছে, চীনের কিছু এলাকায় তৈরি পোশাক কারখানায় বলপ্রয়োগ করে শ্রমিকদের খাটানো হয়। কিছু দেশে খনিশ্রমিক হিসেবে শিশুদের কাজে লাগানো হয়। তবে একই ধরনের কাজে কোম্পানিভেদে ঝুঁকির তারতম্য আছে। যেমন অ্যামাজনের ওয়্যারহাউসে অন্য ওয়্যারহাউসের চেয়ে ঝুঁকি দ্বিগুণ বেশি। বাধ্যতামূলক শ্রম, ছুটি না পাওয়া, নির্ধারিতের চেয়েও দীর্ঘ সময় কাজ—এসব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কিছু ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক কারণে উদ্ভূত বৈষম্য স্বাস্থ্যে মন্দ প্রভাব ফেলে। এসব বৈষম্যের ক্ষেত্র হচ্ছে শিক্ষা, কর্মসুযোগ ও নিরাপত্তা, খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা ও অপুষ্টি, আবাসন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা, লিঙ্গ ও বর্ণ। অতিমাত্রায় তামাকের ব্যবহারও কোথাও কোথাও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও দুটি কাজ করে। তারা কর ফাঁকি দিয়ে এবং অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে নানা আর্থিক সুবিধা নেয়। আর কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের বৈধতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন বা কাজের ঝুঁকি কমাতে কিছু উদ্যোগ নেয়। তারা করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা নামে কিছু কর্মকাণ্ড করে। করোনা মহামারির সময় এমন নজির দেখা গেছে। তারা নিজেদের ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ বাড়াতে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনকল্যাণমূলক কাজ করে।
স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সারা বিশ্বে বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। ওষুধ, টিকা, প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। সেসব উদ্ভাবন বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতেও কাজ করছে। তাদের কল্যাণে বিশুদ্ধ পানি থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক রোগনির্ণয় যন্ত্র মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের কমবেশি ভূমিকা আছে।
সুস্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যের অগ্রগতি, স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অবদান নিয়ে বিতর্ক নেই। তাহলে বাণিজ্য নিয়ে এত প্রশ্ন উঠছে কেন? কারণ একটাই, মৃত্যুর সংখ্যা। বৈশ্বিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যাচ্ছে, বহুজাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আচরণ সংযত করা গেলে মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে, মৃত্যু হ্রাস পাবে।
কাজটি সহজ নয়। স্বাস্থ্যের ওপর থেকে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের ক্ষতিকর প্রভাব নির্মূল করার জন্য কোনো জাদুকরি সূত্র নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ল্যানসেট-এর উদ্যোগে বিশ্ব পর্যায়ে আলোচনার সূত্রপাতের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
স্বাস্থ্যের এই বাণিজ্যিক সংকটের সমাধানকল্পে ল্যানসেট-এর প্রবন্ধে বিশ্ব পর্যায়ে ৩০টি সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের সুপারিশ, নীতিনির্ধারণে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।
থিঙ্কট্যাংক, লবিস্ট গ্রুপ, আইনি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠনগুলোকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতে আরও ভূমিকা রাখতে হবে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে বিজ্ঞানশিক্ষা বন্ধ করতে হবে। পণ্যের মোড়কে পণ্যের উপাদান ও গুণাগুণ স্পষ্টভাবে লিখে দিতে হবে। সরবরাহ চুক্তিতে পণ্যের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অংশীদারত্বমূলক স্বাস্থ্যহানিকর কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ল্যানসেট-এর চিন্তাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিবিড়। বাণিজ্য যেন স্বাস্থ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে না ওঠে, সেদিকে সতর্ক ও সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার। স্বাধীনতার পর ওষুধ ছিল মানুষের নাগালের বাইরে, দাম ছিল বেশি। ১৯৮২ সালের নীতি ওষুধকে সহজলভ্য করেছে। বিশ্বসভায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা কমানোর এটি একটি বড় উদাহরণ।’