সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

এভাবে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতে পারে?

ইডেন মহিলা কলেজ কে চালাচ্ছেন? সেখানে কি প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক না ছাত্রলীগ নেত্রী, তা ফয়সালা হওয়া প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সভানেত্রী তামান্না জেসমিন ওরফে রীভার একাধিক অডিও ফাঁস হয়।

এতে তিনি বলেছেন, ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্টের ওপরে আর কেউ নেই। এর আগে তিনি একটি ছাত্রীনিবাসে স্নাতক চতুর্থ বর্ষের কয়েক শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি যদি একটা সিট না দিই, তোদের কোন বাপ সিট দেবে? ম্যাডামরা (হল প্রশাসন) দেবে? ক্ষমতা আছে ম্যাডামদের?’

বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় ‘ইডেনে ছাত্রলীগই সব, চোখ বন্ধ থাকে কর্তৃপক্ষের: দুই ছাত্রীকে আবার মানসিক নির্যাতন’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে সেখানকার ছাত্রলীগ নেত্রীর দৌরাত্ম্যের কথা জানা যায়। তাঁর ভয়ে সাধারণ ছাত্রীরা ভয়ে থাকেন। তিনি রাজিয়া বেগম ছাত্রীনিবাসের ২০২ নম্বর কক্ষে দুই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং হুমকি দেন।

কলেজটির শিক্ষার্থীসংখ্যা ৩৫ হাজার। এর বিপরীতে ৩ হাজার ৩১০টি আবাসিক সিট আছে। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নামে প্রশাসন থেকে কোনো সিট বরাদ্দ করা হয় না। এই সুযোগে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ টাকার বিনিময়ে সিট দিয়ে থাকে, যেসব কক্ষে ৪ জন শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা, সেখানে ১০ জন পর্যন্ত ওঠানো হয়। প্রত্যেক ছাত্রীর কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এ ছাড়া তারা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের দলীয় কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করে। কেউ কোনো কারণে কর্মসূচিতে যেতে না পারলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।

ইডেন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর দুই দফা মানসিক নির্যাতন ও হুমকির ঘটনা ঘটলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ নীরব। অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য দুই ছাত্রীকে মানসিক নির্যাতন ও হুমকির ঘটনা অপপ্রচার বলে দাবি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাও জানতে চাইছি, আসলে কেন এ ধরনের প্রচারণা হলো। দুটি ভিডিও একসঙ্গে জোড়া দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। ঘটনা কী, সেটা আমাদেরও প্রশ্ন। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর।’

এর মাধ্যমে অধ্যক্ষ কী বোঝাতে চাইছেন? দুটি অডিও আলাদা করলে কি ছাত্রলীগ সভানেত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা হয়ে যাবে? ছাত্রলীগ সভানেত্রী ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি প্রশাসনের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছেন? এরপরও তাঁদের নীরবতা কেবল রহস্যজনক নয়, লজ্জাজনকও। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তামান্না। অপর পক্ষের প্ররোচনায় ছাত্রীরা ছাত্রলীগ সভানেত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, এই মর্মে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া কি গুরুতর অপরাধ নয়?

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইডেনে প্রশাসন ছাত্রলীগ নেত্রীর হুকুমে চলছে। জনগণের করের অর্থে পরিচালিত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এভাবে চলতে পারে না। চলতে দেওয়া যায় না। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ইডেনে সিট-বাণিজ্যের যে অভিযোগ এসেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত হোক।

কোনো ছাত্রলীগ নেত্রীর হুকুমে নয়, মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ করতে হবে। ইডেন কলেজের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এভাবে ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না।