জলাবদ্ধতা এখন শুধু ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো বড় শহরের বড় সমস্যা নয়। এখন অন্যান্য জেলা-উপজেলা শহরগুলোয়ও এ সমস্যা প্রকট হয়ে পড়েছে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকার বাসিন্দারা এ সমস্যায় চরমভাবে ভুক্তভোগী হচ্ছেন।
মূলত শহরগুলোর খালগুলো দখল হয়ে যাওয়াই এ সমস্যার উদ্ভব। আবার খালগুলো দখল হওয়ার পেছনে আছে শহরগুলোয় টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া কোনো শহর কীভাবে চলতে পারে, তার বড় উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশ।
এখানে একের পর এক শহরের মতো সুনামগঞ্জেও খালগুলো শুধু দখলই হয়নি, রীতিমতো অস্তিত্বসংকটেও পড়েছে। সিলেটের এ গুরুত্বপূর্ণ শহর গত বছর ভয়াবহ বন্যায় ডুবে ছিল। এরপরও সেখানকার খালগুলো উদ্ধারে কোনো প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সুনামগঞ্জ শহর এলাকা ও শহরতলিতে সাতটি খাল আছে, যার মধ্যে পাঁচটি বেহাল। এসব খাল সুরমা নদী বা হাওরের সঙ্গে যুক্ত। একটা সময় খালগুলো দিয়ে বড় বড় নৌকা চলত। সেগুলো এখন দূষণ আর দখলে বিপর্যস্ত। নানা কারণে ভরাট হতে হতে একপর্যায়ে দখলই হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের কর্মী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণির মানুষ আছেন এ দখলের সঙ্গে যুক্ত। খালের জায়গার ওপরে গড়ে উঠেছে বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, কবরস্থান, একাধিক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই শহর পানিতে ভাসে। খালগুলোর এ পরিণতির জন্য পৌরসভার অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তও এর জন্য কম দায়ী নয়। খালের মধ্যে ছোট ছোট নালা করেছে পৌরসভা। সেসব নালায় সারা বছর ময়লা জমে থাকে। খালের মধ্যে আলাদাভাবে নালা তৈরির কী যৌক্তিকতা, সেটিই আমাদের বুঝে আসে না।
পাঁচটি খাল উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌরসভার মেয়রসহ ১৪ ব্যক্তিকে আদালত অবমাননার নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেছেন, ‘পৌরসভা ও প্রশাসনের উদ্যোগে এসব খাল চিহ্নিত, দখলকারীদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে।
এরপর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। এ জন্য পৌর নাগরিকদের সহযোগিতা লাগবে।’ অবশ্যই পৌর নাগরিকদের সহায়তা ছাড়া এ বিশাল কাজ সম্ভব নয়। সেই অসম্ভব কাজটির জন্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বলিষ্ঠ ও আন্তরিক নেতৃত্বগুণ ছাড়া একটি সুশৃঙ্খল শহর গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘তাঁরা এসব খাল উদ্ধারে ব্যবস্থা নেবেন। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ আমরা তাঁর কথায় আস্থা রাখতে চাই। তাঁর এ প্রতিশ্রুতি কাজে পরিণত হোক, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।