ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার বিতাড়িত হওয়ার পর স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে মারাত্মক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২৯ কাউন্সিলরের মধ্যে ১১৮ জনই আত্মগোপনে আছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস ৩ আগস্ট গোপনে দেশত্যাগ করেন। উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম দেশে থাকলেও আত্মগোপনে আছেন। অর্থাৎ মেয়র ছাড়াই চলছে দুই সিটি করপোরেশন। এ অবস্থায় দেড় কোটি মানুষের ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের সেবা পেতে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কাউন্সিলর ৬৭ জন। উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি কাউন্সিলর পদের ৫১টিই আওয়ামী লীগ–সমর্থিত। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বেশির ভাগ কাউন্সিলর অফিসে ভাঙচুর ও হামলা হয়। অনেক ওয়ার্ডে কাউন্সিলর অফিসের কর্মকর্তারাও অনুপস্থিত।
সরকার পতনের পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এবং কাউন্সিলররা কার্যালয়ে আসছেন না। ফলে সেখানেও স্থবির হয়ে পড়েছে সেবা কার্যক্রম।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় প্রশাসন থেকে স্থানীয় সরকার—সবকিছু দলীয়করণ করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। তারা ভেবেছিল, চন্দ্র–সূর্য–গ্রহ–নক্ষত্র যত দিন থাকবে, তত দিন তাদের কেউ ক্ষমতা থেকে নামাতে পারবে না। এ কারণে সব নির্বাচিত ও অনির্বাচিত প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাচারী কায়দায় চালিয়ে আসছিল। শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর কেবল ঢাকা নয়, অন্যান্য সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ মেয়র ও কাউন্সিলরও আত্মগোপনে চলে গেছেন।
নগরবাসী সিটি করপোরেশন থেকে যেসব সেবা পেয়ে থাকেন, এর মধ্যে আছে সড়কবাতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশকনিধন, নাগরিকদের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সনদ। আওয়ামী লীগ সরকার পয়োনিষ্কাশনের দায়িত্বটিও সিটি করপোরেশনকে দিয়েছিল ঢাকা ওয়াসার ব্যর্থতায়।
দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে নাগরিকেরা এসব সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের আর্থিক খাত পরিচালনার জন্য যে ব্যাংকের হিসাব আছে, তার ২৬টিই মেয়রের নামে। ফলে তাঁর অনপুস্থিতিতে উন্নয়নকাজের বিলও পরিশোধ করা যাচ্ছে না। তবে কর্মীদের বেতন–ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের পর ১৬ মে দায়িত্ব গ্রহণ করেন দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। আর ১৩ মে দায়িত্ব বুঝে নেন উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। উত্তর সিটির প্রথম বোর্ড সভা হয়েছিল ২০২০ সালের ৩ জুন। কাছাকাছি সময়ে দক্ষিণেরও বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯-এর ৬ ধারা অনুযায়ী, করপোরেশনের মেয়াদ হবে করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর। সে ক্ষেত্রে দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান আছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা। এটা ঠিকই আছে। কিন্তু নাগরিক সেবার বিষয়টিও ভাবতে হবে। যেহেতু গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে, সেহেতু এসব জনপ্রতিনিধির খুব শিগগির কর্মস্থলে আসার সম্ভাবনা কম। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি বিকল্প পথ বের করতে হবে।
আইন অনুযায়ী ছয় মাস প্রশাসক দিয়েও সিটি করপোরেশন পরিচালনা করা যায়। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন না করার জন্য বছরের পর বছর প্রশাসক দিয়ে সিটি করপোরেশন চালিয়েছে। তার পুনরাবৃত্তি কোনোভাবে কাম্য নয়।