সীমান্ত এলাকা মানেই চোরাচালানের রুট—এমন একটি ধারণা জনমনে গেঁথে গেছে। সব সীমান্ত এলাকার ক্ষেত্রে বিষয়টি সত্য না হলেও এই বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা সালদা নদী রেলস্টেশন ঘিরে চোরাচালানের যে স্বর্গরাজ্য গড়ে উঠেছে, তা কোনোভাবেই রোখা যাচ্ছে না। কারণ, চোরাচালানিদের যাদের রুখতে যাওয়ার কথা, তারাই এ কাজে যুক্ত বলে অভিযোগ আছে। বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রেলস্টেশনটির পাশেই ভারতের পাহাড়ি পথ। সেই পথ দিয়ে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে চিনি চোরাচালান হয় আর রাতে আসে মাদকদ্রব্যসহ অন্যান্য পণ্য। এসব পণ্য চোরাচালান করে আনা হয় স্টেশনে। পরে ট্রেনে সেই পণ্য যায় কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এখানে যে চোরাচালানি চক্র যুক্ত, তাঁর সঙ্গে জড়িত সীমান্তঘেঁষা দুটি গ্রামের শতাধিক মানুষ। তবে চোরাকারবারিদের ভাষ্য—পুলিশ, বিজিবিসহ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি জানে। তাদের ‘ম্যানেজ’ করে চোরাচালানের কাজ চলে।
বিজিবি ক্যাম্প থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরেই ভারত সীমান্তঘেঁষা সালদা নদী রেলস্টেশন। আর সেই রেলস্টেশনেই চলে পণ্য চোরাচালান। ফলে চোরাচালানিদের এমন ভাষ্য গুরুত্বহীন করে দেখার সুযোগ নেই। আমরা এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তবে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন; আর বিজিবি বলছে, তারা নিয়মিত নজরদারি ও অভিযান চালায়। লোকবল–সংকটের কারণে মাঝেমধ্যে সুযোগ নেয় চোরাকারবারিরা।
স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি ছাড়া রেলওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ আছে চোরাচালানি চক্রকে সহযোগিতা করার। রেলের একজন কর্মকর্তাই বলেছেন, রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী সবই জানে। অনেক সময় চোরাই পণ্য ট্রেনে টেনে তুলে দেন রেলওয়ে পুলিশ সদস্যরা। প্রতি বস্তা চিনির জন্য তাঁরা টাকা পান।
কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস, নাসিরাবাদ এক্সপ্রেসসহ কয়েকটি লোকাল ট্রেনের মাধ্যমে এসব পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। রেলস্টেশন ঘিরে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য গড়ে ওঠা এবং ট্রেন দিয়ে মাদকদ্রব্যসহ চোরাচালানের পণ্য সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ে পুলিশের জন্য বড় লজ্জার।
এখন বিজিবি, প্রশাসন ও রেলওয়ে পুলিশ মিলে যদি রেলস্টেশন ঘিরে চোরাচালান বন্ধ করতে না পারে, তাহলে বিষয়টি খুবই হতাশাজনক। এখন চোরাচালান কীভাবে তারা বন্ধ করে এবং কত দ্রুত সেটি করতে পারে, তা দেখার অপেক্ষা।