নৌপথে বাল্কহেড চলাচল এখন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে বাল্কহেড চলাচলও। অবৈধভাবে দিন–রাত বালু তুলে নদীগুলোর সর্বনাশ করে ফেলা হচ্ছে। সেসব বালু নিয়ে প্রতিদিন দেশের নদী ও খালগুলোতে শত শত বাল্কহেড চলাচল করে।
এতে নৌপথে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। হতাহত হচ্ছে মানুষ। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় একটি খালে বাল্কহেডের ধাক্কায় বনভোজনের একটি ট্রলার ডুবে নারী, শিশুসহ ৯ জন মারা যান।
অথচ এর আগে আরও কয়েকটি ঘটনার কারণে মুন্সিগঞ্জে বাল্কহেড চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় প্রশাসন। এরপরও পরে কীভাবে এই নৌযান চলে?
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০২১ সালে বাল্কহেডের ধাক্কায় ঈদুল আজহার আগে গরুভর্তি ট্রলার ডুবে যায়। গত বছর নিবন্ধনহীন একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় সেখানে একটি সেতুর পিলার ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক মাস সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
এসব কারণে গত বছরের বর্ষা মৌসুমে ওই নৌপথ দিয়ে বালুবাহী কার্গো বা বাল্কহেড চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই আবার বাল্কহেডের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল শুরু হয়। সেই নিষেধাজ্ঞা কেন কার্যকর রাখা গেল না, এর উত্তর প্রশাসনকেই দিতে হবে? অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলা বাল্কহেডগুলো কেন জব্দ করা হয়নি?
দেশের অন্য অনেক এলাকায় দেখা গেছে, অবৈধ বালু উত্তোলন বাণিজ্যের সঙ্গে স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতারা যুক্ত। ফলে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, অবৈধ বাল্কহেড চলাচলের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েক শ নেতা-কর্মী। সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। এখন সংসদ সদস্য যেখানে এই অনাচারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, সেখানে প্রশাসন কেন তা বন্ধ করতে পারছে না?
মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন বলছেন, বাল্কহেডের অবৈধ চলাচল বন্ধে উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে বাল্কহেড চলাচল শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রশাসনের পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ, নৌপুলিশ, থানা-পুলিশ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
কিন্তু এই সমন্বয়ের কাজটি তো জেলা প্রশাসককেই করতে হবে। এত দিন কেন তিনি সেটি পারলেন না?
নিষেধাজ্ঞা ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে এতগুলো প্রাণহানির ঘটনা ঘটল, এর দায় কে নেবে? মুন্সিগঞ্জে অবৈধ বালু তোলা ও বাল্কহেড চলাচলের সঙ্গে যুক্তদের কেন ধরা হচ্ছে না? আমরা এ ব্যাপারে আর কোনো অবহেলা দেখতে চাই না।