দেশের পাহাড়গুলো এখন খুব খারাপ সময় পার করছে বলা যায়। যে যেভাবে পারছেন, সেগুলো নিশ্চিহ্ন করে ফেলছেন। বিশাল বিশাল পাহাড় সাবাড় হয়ে যাচ্ছে রাতের আঁধারে। কারা সেই কাজ করছেন, তা-ও অজানা নয়।
কিন্তু পাহাড়গুলো রক্ষা করা যাচ্ছে না, সেসব দুষ্কৃতকারীর বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কোনো ক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে করা হচ্ছে জরিমানা। জরিমানার অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পাহাড় তো আর ফিরে পাওয়া যাচ্ছে না।
শেষ সেখানকার লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা বায়ারপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় ৫০ ফুট উঁচু একটি পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। এর ফলে সেখানে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং পাহাড়ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এ পাহাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। রাতে খননযন্ত্র ও ট্রাকের বিকট শব্দে ঘুমাতে পারেন না সাধারণ মানুষ।
কাটার কারণে পাহাড়টির বিভিন্ন বনজ, ফলদ ও ভেষজ গাছ ধ্বংস হচ্ছে। জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে বাড়ি নির্মাণও শুরু হয়ে গেছে। আর পাহাড় কাটার মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটের ভাটায়। গত শুক্রবার গভীর রাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে একটি খননযন্ত্র ও দুটি ট্রাক জব্দ করলেও এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালত নির্মাণাধীন ঘরগুলোর কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কাটা বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে।
কিন্তু লোহাগাড়ায় একের পর এক পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে, আইন ও প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করেই। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কেন বুঝতে পারছে না, জরিমানা করে ও খননযন্ত্র, ট্রাক জব্দ করে পাহাড় কাটা বন্ধ করা সম্ভব নয়।
জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে এবং তাঁদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাহাড়টির ইতিমধ্যে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে, সেটির বাকি অংশ রক্ষা করতে না পারলে আশপাশের পাহাড়গুলোও হুমকির মুখে পড়বে।