বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনির্ণয় শাখা পরিচালিত গবেষণায় বাংলাদেশে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাত্র ১ শতাংশের কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। বাকি প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পাঁচটি বিষয়কে স্বাস্থ্যঝুঁকির তালিকায় রেখেছে—উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, ধূমপান, পর্যাপ্ত ফল ও শাকসবজি না খাওয়া এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় না থাকা। বয়স যাঁদের বেশি, তাঁদের ঝুঁকি বেশি। ৯৯ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন, এ কথা বলার অর্থ এই নয় যে তাঁরা কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত। তবে আক্রান্ত হওয়ার ভয় আছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা দিনে শূন্য দশমিক ৪ বার ফল এবং ১ দশমিক ৯ বার শাকসবজি খান। ৩৭ শতাংশ মানুষ খাওয়ার সময় খাবারে কাঁচা লবণ নেন এবং ১৩ শতাংশ মানুষ প্রচুর লবণযুক্ত ফাস্ট ফুড খান। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে মোট পাঁচবার ফলমূল বা শাকসবজি খাওয়া দরকার। স্বাস্থ্যঝুঁকির আরেকটি বড় কারণ কায়িক পরিশ্রম না করা। বিশেষ করে আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরা এটা এড়িয়ে চলেন।
আমরা যদি একটু সচেতন হই, তাহলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো কঠিন নয়। খাদ্যাভ্যাস বদল করে যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো যায়, তেমনি ব্যায়াম ও জীবনাচরণের মধ্য দিয়েও। গবেষণায় এসেছে, ১৮ থেকে ৬৯ বছর বয়সী মানুষের ৯৬ শতাংশ প্রয়োজনমতো ফলমূল বা শাকসবজি খান না।
এটা সহজেই পরিবর্তন করা যায়। ভাত-মাংসের তুলনায় ফল ও শাকসবজির দামও কম। এর বাইরে যে অভ্যাসটি আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়, সেটি হলো ধূমপান। এখনো বাংলাদেশে বয়সী মানুষের ২০ শতাংশ ধূমপানে অভ্যস্ত। ধূমপায়ীদের হৃদ্রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। পান-জর্দাও কম ক্ষতিকর নয়। এসব থেকে বিরত থাকতে পারলে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
গবেষণা উপস্থাপনকালে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু হয় সংক্রামক রোগের চেয়ে বেশি, প্রায় ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে আছে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ক্রনিক রেসপিরেটরি রোগ, ক্যানসার ও ডায়াবেটিস, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণও ঝুঁকি বাড়ায়। জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের মতে, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধযোগ্য। এ কথা বহুদিন ধরে বলা হলেও মানুষ শুনছে না কেন?
এ প্রশ্নের উত্তরও তিনি দিয়েছেন। সঠিক ভাষায় সঠিক বার্তাটি সঠিক লোকের কাছে পৌঁছাতে হবে। নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে ঘাটতিটা কোথায়? স্বাস্থ্যঝুঁকিসংক্রান্ত বার্তাগুলো আগে প্রচারপত্রের মাধ্যমেই জানানো হতো, যা কারও চোখে পড়ত, কারও পড়ত না। এখন এ ক্ষেত্রে মুঠোফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও ব্যবহার কারা যেতে পারে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাতে কোনো ভুল বার্তা না যায়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে।
দেশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে হলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সবাইকে জানাতে হবে; যাতে তাঁরা রোগ হওয়ার আগেই সজাগ হন।
এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে রুটিন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এসে সৃজনশীল কর্মসূচি নিতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ ও তরুণদের কাজে লাগাতে হবে। বিলম্বে হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ঘুম ভাঙুক, এটাই প্রত্যাশা।