কাউন্সিলরদের ভাতা বৃদ্ধি

নির্বাচনী বছরে কেন এই ‘উৎকোচ’ প্রস্তাব

যখন সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে সব স্থানীয় সরকার সংস্থায় জনগণের সেবা পাওয়া প্রায় দুর্লভ হয়ে পড়েছে, তখনই কাউন্সিলরদের ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। জনপ্রতিনিধিদের ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য সরকারের মধ্যে তোড়জোড় লক্ষ করা গেলেও এসব সংস্থা যাঁদের জন্য প্রতিষ্ঠিত, সেই জনগণ সেবা পাচ্ছেন কি না, সেসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের মাসিক সম্মানী ও অন্যান্য ভাতা বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করা হয়, তারা ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকার ১২টি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের ভাতার অঙ্ক ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের অফিসভাড়া ও ব্যবস্থাপনার খরচও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। সব সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলরদের ভাতা একই হারে বাড়ানোর কথা বলা হলেও অফিসভাড়া ও ব্যবস্থাপনার খরচে ফারাক থাকবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলররা বর্তমানে অফিসভাড়া পান ৮ হাজার টাকা। এটা বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য সিটি করপোরেশনে ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে। আর ব্যবস্থাপনার জন্য ৬ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে কাউন্সিলররা ঢাকায় ৪ হাজার এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার টাকা করে পেয়ে আসছেন।

আলাদাভাবে কাউন্সিলরদের ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাবটি রহস্যজনক। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার সংস্থার অন্য জনপ্রতিনিধিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, এমনিতে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা বেশি সুবিধা পান। তুলনায় ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার প্রতিনিধিরা কম সুবিধা পান। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ভাতা বাড়ানোর দাবি করলেও সরকার আমলে নিচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার সংস্থার জনপ্রতিনিধিদের মাসিক সম্মানী বা ভাতা নির্ধারিত হয় যথাক্রমে সিটি করপোরেশনের মেয়রের জন্য ৮৫ হাজার টাকা ও কাউন্সিলরের জন্য ৩৫ হাজার টাকা; জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের জন্য ৫৪ হাজার টাকা ও সদস্য মাসিক সম্মানী ৩৫ হাজার টাকা। ক শ্রেণি পৌরসভার মেয়র ৩৮ হাজার টাকা ও কাউন্সিলর ৮ হাজার টাকা, খ শ্রেণির মেয়র ২৮ হাজার টাকা ও কাউন্সিলর ৭ হাজার টাকা, গ শ্রেণির মেয়র ২৪ হাজার টাকা ও কাউন্সিলর ৬ হাজার টাকা পাবেন। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাসিক সম্মানী ৪০ হাজার টাকা এবং ভাইস চেয়ারম্যান ২৭ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন।

এ অবস্থায় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কেবল কাউন্সিলরদের ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে অন্যদের প্রতি বৈষম্য করা হবে। বর্তমানে সরকার যে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি নিয়েছে, তার সঙ্গে কাউন্সিলরদের ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব সংগতিপূর্ণ নয়। তড়িঘড়ি করে কোনো বিশেষ শ্রেণির জনপ্রতিনিধিদের ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোকে মানুষ দেখবে নির্বাচনী বছরের ‘উৎকোচ’ হিসেবেই। প্রশ্ন উঠবে, কাউন্সিলরদের ভাতা বাড়ানো হলে মেয়রদের নয় কেন? আবার মেয়রদের ভাতা বাড়ানো হলে অন্যান্য সংস্থার জনপ্রতিনিধিরাই–বা কী দোষ করেছেন?