সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সংযোগ সড়ক কবে হবে

যেখানে সেতুর দরকার, সেখানে সেতু নেই। যেখানে দরকার নেই, সেখানে আবার সেতু আছে। আবার সেতু দরকার আছে, সেতু হয়েছেও, কিন্তু সেটি ব্যবহারের সুযোগ নেই। এমন অনেক প্রকল্প ঘিরে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতি আমরা দেখেছি বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে। সড়ক ছাড়া অনেক সেতু সে সময়ের সাক্ষী হয়ে আছে এখনো। প্রায় ১০ বছর ধরে এমন একটি সেতু পড়ে আছে কুষ্টিয়ার একটি গ্রামে। পানির মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি ঘিরে ১৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের আক্ষেপের শেষ নেই।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পাবনার সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চরসাদীপুর ইউনিয়নের সাদী গ্রামে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ১০ বছরেও সংযোগ সড়ক হয়নি। ফলে সেতুটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সেতুর দুই পাশের প্রায় ১৫টি গ্রামের বাসিন্দা পানি মাড়িয়ে খাল পারাপার হচ্ছেন। গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের আক্ষেপ প্রকাশ পায় একজন বয়োজ্যেষ্ঠর কণ্ঠে এভাবে, ‘গলাপানি ডিঙায়ে খাল পার হই, আর সেতুডার দিক চায়া থাকি। ১০ বছরেও সেতুডার উপরে দিয়ে যাবের পারলেম না।’

পদ্মা নদীর একদিকে কুষ্টিয়া, অন্যদিকে পাবনা জেলা। জেলা দুটির সীমানা ভাগের সময় সাদীপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম পাবনা সদরের দিকে চলে আসে। নদীর ওপারে জেলা শহর হওয়ার কারণে অবহেলিত হতে থাকেন এপারের বাসিন্দারা। সাদীপুর গ্রামে একটি বড় খাল থাকায় বিচ্ছিন্ন হয় দুই দিকের প্রায় ১০ গ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা। খালের দুই পাশে স্থানীয় দুটি বড় হাট। দুই পাশের বাসিন্দারা হাট দুটিতে কেনাবেচা করেন। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের এ সেতু নির্মাণ করা হয়। নির্ধারিত সময়েই সেতুটি নির্মাণের কাজ শেষ হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়া–৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আবদুর রউফ। যদিও সেতুর দুই দিকে সংযোগ সড়ক ছাড়া সেই উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছিল অনেকটা লোকদেখানো। সেতু উদ্বোধনের পর সড়ক নির্মাণের জন্য অনেকবার ধরনা দেওয়া হলেও সেই সংসদ সদস্য বিষয়টির দিকে আর গুরুত্ব দেননি।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, কয়েক বছর আগে সেতুটির উভয় পাশে মাটি ফেলার জন্য সার্ভে করা হয়েছিল। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে কাজটি হয়নি। তবে নতুন করে আবার সার্ভে করা হবে। সরেজমিন করে নির্মাণ প্রকল্প দেওয়া হবে।

আমরা তাঁর বক্তব্যে আস্থা রাখতে চাই। আমরা আশা করব, তিনি সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবেন।