বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের পরিবেশ–প্রকৃতি তথা বন–পাহাড়–নদী। তার একটি নমুনা হতে পারে সিলেট সদরে একটি টিলাভূমির শ্রেণির পরিবর্তন করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের ঘটনা। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নিজের নামে করা একটি ফাউন্ডেশনের ভবনের কাজ শুরু করেন। যেটির জন্য সরকারি বরাদ্দও পেয়ে যান তিনি। যদিও সেই ভবনের কাজ এখনো অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
বন, পাহাড়, নদ–নদী, খাল, জলাশয়ের জায়গা দখলের প্রাথমিক কাজই হচ্ছে সেটির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা। আইনের তোয়াক্কা না করে সেই কাজই করা হয়েছে সিলেট সদর উপজেলার বড়শালা মৌজায়। মোমেন দম্পতির ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত সিলেট জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের এক নেত্রী এই জমি দান করেন। মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ওই নেত্রী প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাকে দিয়ে ওই জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০২১ সালের আগস্ট মাসে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে দুই বছর পর আবারও আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে জমির শ্রেণি আগের অবস্থায় ফেরানো হয়। তবে এর মধ্যেই ওই জায়গার স্থানে স্থানে টিলা কাটা হয়ে যায়। খতিয়ান পরিবর্তনের এক রায়ে পাল্টে যায় আশপাশের জমির শ্রেণিও। ৬০ বছর কাগজপত্রে থাকা ৭৮৬ শতক ‘টিলা’ শ্রেণির জায়গা মাত্র ২৭ দিনেই হয়ে যায় ‘ভিটা’ ও ‘বাড়ি’। দান করা ওই জায়গায় মোমেন ফাউন্ডেশনের ভবন নির্মাণ করতে তিন দফায় বিগত সরকার ২ কোটি ৬০ লাখ টাকাও বরাদ্দ দেয়। সেখানে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও একতলা পর্যন্ত কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে এখন। ভবন নির্মাণের আগে ওই স্থানে যাওয়ার জন্য কোনো রাস্তা ছিল না। এটি বিবেচনায় নিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ওই স্থানে যাতায়াতের জন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পাকা রাস্তা নির্মাণ করে দেয়।
এখনো ওই এলাকার অধিকাংশই গাছগাছালিতে ভরা। আবাদি জমির অস্তিত্বও খুবই কম। কিন্তু সরকারি খরচে বেসরকারি সংগঠনের জন্য ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ও রাস্তা নির্মাণ করে সেখানকার টিলাময় পরিবেশকে অস্তিত্বের মুখে ঠেলে দেওয়া হলো। একজন আইনপ্রণেতা ও মন্ত্রী হিসেবে আব্দুল মোমেনের ক্ষমতাচর্চার কারণে এমনটি ঘটেছে, তা বলাটা কোনোভাবেই অমূলক নয়।
টিলা এলাকায় কোনোভাবেই স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। নির্মাণাধীন ভবন উচ্ছেদ করে টিলাকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে হবে। এর জন্য দেওয়া সরকারি বরাদ্দও বাতিল করতে হবে। জমি দান করা, শ্রেণি পরিবর্তন, ভবন নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ—এসব কাজে যাঁরাই জড়িত আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।