সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

অরক্ষিত বিমানবন্দর

চোরচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

গত বছরের সেপ্টেম্বরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন ফুটবল দলের এক সদস্যের লাগেজ থেকে টাকা, ডলারসহ মূল্যবান সামগ্রী খোয়া যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ পরে ঘটনা তদন্ত করে জানিয়েছিল, তাদের ওখান থেকে কোনো পণ্য চুরি হয়নি। লাগেজ বুঝে নেওয়ার সময় ফুটবলারদের কেউ আপত্তিও করেননি।

বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করে তিনটি বিভাগ—সিভিল এভিয়েশন, বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এরপরও বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ থেকে জিনিসপত্র খোয়া যাওয়া কিংবা চুরি হওয়ার ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করে। সেবার হাতেনাতে কেউ ধরা না পড়ায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দায় এড়িয়ে গেছে। কিন্তু এবার তারা কী বলবে?

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওয়্যারহাউস (গুদাম) থেকে প্রায় ৬০ কেজি মালপত্র অবৈধ উপায়ে বের করা হয়েছে। বিষয়টিকে ‘চুরি’ বলে দাবি করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।

বিমান সূত্রে জানা যায়, ৪ এপ্রিল টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে (টিকে-৭১২) ৬০ কেজি ওজনের একটি পেপার ক্যারেট (কাগজে মোড়ানো বাক্স) বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ক্যারেটটির ভেতরে পাম্পের যন্ত্রাংশ ছিল। এটি আমদানি করেছিল এফএম ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ক্যারেটটি প্রধান ওয়্যারহাউস-১-এ রাখা হয়।

৩০ এপ্রিল বিমানের নিরাপত্তাকর্মী লক্ষ করেন, ক্যারেটটি খোলা ও মালামাল নেই। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বিমানবন্দরে কর্মরত কাস্টম সরকার (সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের নিয়োগ দেওয়া কর্মী) ছামরুল ইসলামকে সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় ছামরুলসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গুদাম থেকে পণ্যগুলো চুরি করে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এফএম ট্রেডার্সের সঙ্গে তাঁর ৮ লাখ টাকার চুক্তি হয়।

এ ঘটনায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পালন করে বিমান। বিভিন্ন এয়ারলাইনস, যাত্রীদের লাগেজসহ নানা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানিতেও সেবা দেয় বিমান। সে ক্ষেত্রে চুরির দায়িত্ব তারা এড়াবে কী করে?

আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের মাধ্যমে আসা পণ্য কার্গো ভিলেজের গুদামে জমা রাখা হয়। সেখান থেকে কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টের মাধ্যমে শুল্ক দিয়ে পণ্য খালাস করে আমদানিকারক। গুদামে পণ্য রাখার জন্য নির্দিষ্ট হারে ভাড়া পায় বিমান। একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিবহনের ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা ফাঁকি দেওয়ার জন্য ৮ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে পণ্য হাতিয়ে নিয়েছে, এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা।

তাহলে কি এই চুরির পেছনে আরও বড় কোনো রহস্য আছে? আমদানিকারকেরা অনেক সময় যন্ত্রপাতি নিয়ে আসেন, যা দ্রুত ছাড় করাতে না পারলে মেশিন অচল থাকে। সে ক্ষেত্রে বিমান এয়ারলাইনসেরই উচিত দ্রুত পণ্যটি ছাড় করার ব্যবস্থা করা। পেপার ক্যারেটের ক্ষেত্রে কী হয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। এ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুটি পক্ষের পরিচয় পাওয়া গেছে—আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফের কর্মী। কিন্তু রহস্য বের করতে হলে তৃতীয় পক্ষকে চিহ্নিত ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

শাহজালাল বিমানবন্দর দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সরকার বিমানবন্দর সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করছে। এটি চালু হলে বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে আশা করা যায়। কিন্তু একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা দরকার, সেটা নিশ্চিত করতে না পারলে এ রকম চুরির ঘটনা ঘটতেই থাকবে।