অনুপস্থিতির সংখ্যা উদ্বেগজনক

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

১৫ সেপ্টেম্বর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনটি কেটেছে নানা ঘটনা-অঘটনের মধ্য দিয়ে। এদিন কিছু কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণ করার খবর পাওয়া গেছে। ২৬ জন পরীক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছে অসদুপায় অবলম্বনের কারণে। আবার দুজন শিক্ষক বহিষ্কৃত ও একজন শিক্ষককে পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি নড়াইলে ভুল প্রশ্নপত্র দেওয়ার কারণে যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীন বাংলা দ্বিতীয় পত্রের এমসিকিউ অংশের পরীক্ষাই স্থগিত করতে হয়েছে। পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে বরাবরই এমন কিছু ঘটতে দেখি আমরা।

অন্যান্যবার সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হলেও এবার যানজটের কথা বিবেচনা করে বেলা ১১টায় এ পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে ঢুকতে হয়। তবে যানজট সত্ত্বেও ঢাকায় পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছাতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় পুলিশ সাপোর্ট নামে একটি কার্যক্রম চালু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা থানা। কেউ প্রবেশপত্র আনতে ভুলে গেলে তা দ্রুত এনে দেওয়া কিংবা কোনো কারণে পরীক্ষার্থী ভুল কেন্দ্রে এসে পড়লে তাকে সঠিক কেন্দ্রে মোটরসাইকেলে পৌঁছে দিয়েছে তারা। এটি অবশ্যই প্রশংসনীয় কাজ। অন্যরাও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারে।

 দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো এসএসসি পরীক্ষায় বসল শিক্ষার্থীরা। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষাধিক। প্রথম দিনে পরীক্ষা দিয়েছে ১৯ লাখ ৫ হাজারের কিছু বেশি। প্রথম দিন ৩৩ হাজার ৮৬০ জনের অনুপস্থিতি অর্থাৎ পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক।

এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২১ সালে মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষায় পৌনে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এদের মধ্যে ৪৭ হাজার ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়েছে এবং ৭৮ হাজার শিক্ষার্থী শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে। এই প্রতিবেদনকে পূর্ণাঙ্গ বলা যাবে না। কেননা ২০ হাজার ২৯৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে তথ্য দিয়েছে ১১ হাজার ৬৭৯টি।

সরকার পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা চালু করলেও এসএসসি বা সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষাকেই প্রকৃত অর্থে পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিবন্ধন করার পরও কোনো শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকার অর্থ হলো শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোনো পরীক্ষায় গরহাজির থাকলে সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু প্রায় ৩৪ হাজার পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে সেটি ঘটেনি। করোনাকালে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ঠিকমতো পড়াশোনা হয়নি। আবার দারিদ্র্যের কারণেও অনেক অভিভাবক মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছেন, ছেলেকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন।

যারা শিক্ষার নয়টি ধাপ পেরিয়ে এসএসসি পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছে, তাদের প্রত্যেকে যাতে পরীক্ষায় হাজির থাকে, সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষক তথা শিক্ষা বিভাগেরও দায়িত্ব আছে। ভবিষ্যতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে যাতে একজন শিক্ষার্থীও ঝরে না পড়ে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আরও বেশি সজাগ থাকতে হবে। করোনা মহামারি আমরা মোটামুটি কাটিয়ে উঠেছি, কিন্তু করোনার যে অভিঘাত শিক্ষায় পড়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে আরও অনেক সময় লাগবে। এ জন্য যেমন টেকসই কর্মসূচি নিতে হবে, তেমনি তার বাস্তবায়নেও সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।