মানুষ তার বিনোদনের জন্য পশুপাখিকে খাঁচায় বন্দী করে বানিয়েছে চিড়িয়াখানা। আধুনিক সভ্যতার কদর্য দিকগুলোর মধ্যে এটি হচ্ছে অন্যতম। চিড়িয়াখানায় বন্দী পশুপাখি কীভাবে থাকবে, তা নিয়ে আছে বিধিমালাও। বেশি সময় ধরে মানুষকে বিনোদন দিতে প্রাণীগুলোর সক্ষমতা ও সামর্থ্য ধরে রাখতে হবে বলে কথা! ফলে প্রাণীর খাবারের বেলায় অবহেলার সুযোগ নেই। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ চিড়িয়াখানার মতো রাঙামাটির চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলোর অবস্থা দেখলে দুঃখই হয়। খাবারের অভাবে সেখানকার প্রাণীগুলো রীতিমতো ধুঁকছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রাঙামাটি জেলা পরিষদের অধীন ২০০২ সালে শহরের সুখী নীলগঞ্জ এলাকায় একটি মিনি চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। নাম দেওয়া হয়েছিল বোটানিক্যাল গার্ডেন ও মিনি চিড়িয়াখানা। তবে এই চিড়িয়াখানার জন্য বন্য প্রাণী বিভাগের কোনো অনুমতি ছিল না। তারপরও কিছু প্রাণী থাকায় চিড়িয়াখানাটি রাঙামাটিবাসীর বিনোদনের একটা উপলক্ষ হয়েছিল। তবে সব সময়ই অবহেলিত ছিল এ চিড়িয়াখানা। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের সময় থেকে তার অবস্থা আরও খারাপ। প্রাণীগুলোর খাবারের বরাদ্দও বন্ধ হয়ে গেছে। মিলছে না পর্যাপ্ত পানিও।
বর্তমানে এখানকার সম্বল একটি মাত্র ভালুক, একটি হরিণ, চারটি বানর, দুটি শজারু, পাঁচটি বনমোরগ ও ছয়টি কচ্ছপ। আগে অনেক বেশি প্রাণী থাকলেও বেশ কিছু মারা গেছে। অজগরও ছিল একসময়, সেটির মৃত্যুর পর খাঁচা শূন্য পড়ে আছে। হরিণ ছিল তিনটি, কিন্তু এখন আছে একটি। টিকে থাকা অবশিষ্ট প্রাণীগুলোর না খেয়ে মরার দশা হয়েছে এখন। প্রাণীদের প্রয়োজনের অর্ধেক খাবারও সরবরাহ করা হয় না। এ ছাড়া প্রাণী অনুযায়ী উপযুক্ত খাবারও দেওয়া হয় না। খাবার ও পানির সংকট থাকলে এমন করুণ পরিস্থিতি হওয়ারই কি কথা নয়?
অব্যবস্থাপনার কারণে দর্শনার্থীর উপস্থিতিও কম। দায়িত্বরত লোকজন বলছেন, প্রাণী না থাকায় লোকজনের কোনো আগ্রহ নেই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে। এর মধ্যে প্রাণীদের জন্য পানি তোলার পাম্পটিও চুরি হয়ে গেছে। পাহাড়ের ওপর অবস্থিত চিড়িয়াখানাটির প্রাণীদের জন্য এখন টেনে টেনে পানি আনতে হয়। কিন্তু পানি আনার লোকও নেই। ফলে পর্যাপ্ত পানি প্রতিদিন সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে খারাপ অবস্থা চিড়িয়াখানার।
চিড়িয়াখানাটিতে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের প্রাণী প্রতিপালনের অভিজ্ঞতা নেই। এই যদি হয় একটি চিড়িয়াখানার পরিস্থিতি, সেটি চালু রাখার দরকারটা কী? প্রাণীগুলোকে অন্য চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দিয়ে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হোক। তাতে অন্তত প্রাণীগুলো প্রাণে বাঁচবে। বিনোদনের নামে এভাবে কিছু প্রাণীকে কষ্ট দেওয়ার তো কোনো মানে হয় না। যদিও জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা চিড়িয়াখানাটি নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন। এখন দেখা যাক কী হয়।