সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বন কর্মকর্তাকে হত্যা

বনখেকোদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হোক

কক্সবাজারের উখিয়ায় রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় বন রক্ষায় অভিযান চালাতে গিয়ে একজন বন কর্মকর্তা খুন এবং অপর একজনের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। তাহলে কি বন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এতই ভঙ্গুর? বন ও পাহাড়খেকোরা কি এভাবে হত্যাকাণ্ড চালাতে থাকবে?

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় বন রক্ষায় অভিযান চালাতে গিয়ে মাটি পাচারকারীদের ডাম্পারের (মিনি ট্রাক) চাপায় খুন হয়েছেন বন বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান। তিনি কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বন বিটের দায়িত্বে ছিলেন।

উখিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম জানিয়েছেন, গভীর রাতে হরিণমারা পাহাড় কেটে ডাম্পারে ভরে বালু পাচার হচ্ছিল। খবর পেয়ে সাজ্জাদুজ্জামান মোটরসাইকেলচালক মো. আলীকে (২৭) নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় বালু পাচারকারীরা ডাম্পার দিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী সাজ্জাদ ও আলীকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যান। এতে মাথা ফেটে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মারা যান সাজ্জাদ। গুরুতর আহত অবস্থায় উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তার চালক আলীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

বনকর্মীরা জানান, হরিণমারা এলাকার ছৈয়দ করিম বন ও পাহাড় খেকো চক্রের হোতা এবং তাঁর মালিকানাধীন ডাম্পারটিই বিট কর্মকর্তা সাজাদুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীকে চাপা দেয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন বিভাগে যোগদানের পর সাজ্জাদুজ্জামান এর আগেও অভিযান চালাতে গিয়ে একাধিকবার আক্রমণের শিকার হয়েছেন। বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁর সাহসের তারিফও করেছেন। কিন্তু তাঁর নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্ন উঠবেই।

বন রক্ষা করতে দুর্বৃত্তদের হাতে বন কর্মকর্তার খুন হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। বন বিভাগের ভূমি উদ্ধারে গিয়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় ২০২০ সালের ৬ আগস্ট মারা যান মহেশখালীর সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা ইউসুফ উদ্দিন। এর আগে ২০১৮ চট্টগ্রামের উত্তর ফটিকছড়ির হাসনাবাদ রেঞ্জের বাগানমালিক আবদুস সালাম স্থানীয় দখলদারদের হামলায় মারা যান। এ ছাড়া দুর্বৃত্তদের হামলায় ১৯৭৭ সালে বাড়বকুণ্ডে হাজারীখিল বিট কর্মকর্তা, ১৯৮৫ সালে ফরেস্টার আমিনুল হক ও বনপ্রহরী ইয়ার আহম্মদ নিহত হন।

বনখেকোরা এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠল কীভাবে? এ ক্ষেত্রে বন বিভাগের আরও কিছু করণীয় আছে কি না, সেটা দেখার বিষয়। একজন বন কর্মকর্তা ও তাঁর সহযোগীকে রাতের বেলায় একটি মোটরসাইকেল নিয়ে কেন অভিযানে যেতে হলো? তাঁদের নিরাপদ বাহন ও নিরাপত্তা যে নিশ্চিত করা গেল না, তার দায় কে নেবে?

বন বিভাগ থেকে নিরাপত্তারক্ষীদের যে বন্দুক, এসএলআর রাইফেল, থ্রি-নট-থ্রি কিংবা কাটা রাইফেল দেওয়া হয়, সেগুলো সেকেলে এবং অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকর। বনদস্যুদের হাতে এর চেয়ে উন্নত অস্ত্র থাকে। বনকর্মীরা ডাম্পারটির মালিক ও চালককে চিহ্নিত করেছেন। একজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। সারা দেশেই বনখেকোরা তৎপর। এ বিষয়ে বন বিভাগ সজাগ থাকলে একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটতে পারত না।

যে বন কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার জন্য জীবন দিলেন, তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর। তিনি একটি শিশুকন্যা ও স্ত্রী রেখে গেছেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা যাতে সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারেন এবং সন্তান পড়াশোনা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রেরই কর্তব্য।

সাজ্জাদুজ্জামানের হত্যার সঙ্গে জড়িত একজন ধরা পড়েছে। অন্যদেরও অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক। বনখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।