সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

এমন উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক

দেশে থানা ও আদালতের হাজতখানার পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাজতের পরিবেশও পাল্টে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় হাজত সংস্কার করা হয়েছে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে আদালতের হাজতখানায় আসামিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে নতুন একটি পাঠাগারও। আদালতে হাজিরা দিতে আনা আসামিদের অবসর কাটানোর জন্য নিঃসন্দেহে দারুণ একটি উদ্যোগ এটি।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, প্রতিদিন জেলার সাতটি থানা, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগগুলো, র‍্যাব, হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ ও শিল্প পুলিশের হাতে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে আনা হয়। আবার কারাবন্দী আসামিদের মামলার হাজিরার জন্য আদালতে আনা হয়। এসব আসামিকে আদালতের কাঠগড়ায় তোলার আগে তাঁদের হাজতখানায় রাখা হয়।

প্রতিদিন বিভিন্ন মামলার ৫০ থেকে ৬০ জন আসামি আদালতের হাজতখানায় আসেন। দিনের দীর্ঘ সময় হাজতখানাতেই কাটাতে হয় তাঁদের। এ জন্য সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে এ পাঠাগার। পাঠাগারটিতে আছে ধর্মীয়, মনীষীদের জীবনী, মানসিক উদ্দীপনা বাড়ানোসহ বিভিন্ন ধরনের শতাধিক বই। পাঠাগার থেকে বই নিয়ে পড়েন আসামিরা।

হাজতখানা মানে দুর্ভোগ ও ভোগান্তির জায়গা এমনটি একসময় ধারণা ছিল। নারায়ণগঞ্জসহ কিছু জায়গায় আমরা অবস্থার পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। নারায়ণগঞ্জে আদালতের হাজতখানায় শুধু পাঠাগারই তৈরি করা হয়নি, ব্যবস্থা করা হয়েছে বিশুদ্ধ পানি পান ও নামাজের ব্যবস্থাও। পাশেই আছে পরিচ্ছন্ন শৌচাগার। বয়স্ক আসামিদের বসার জন্য হাজতখানার ভেতরে তিনটি কাঠের বেঞ্চ দেওয়া হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে হাজতখানায় এসে সন্তুষ্ট থাকেন আসামিরা।

আদালতের হাজতখানার পরিবেশ পাল্টে দেওয়ার কারিগর হচ্ছেন মো. আবদুর রহমান। তিনি গত বছর সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দেন। পাঠাগারের বিষয়ে তিনি বলেন, আসামিদের জন্য মানবিক হাজতখানা গড়ে তুলতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আসামিরা তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলে আদালতের হাজতখানার সুখকর স্মৃতি নিয়ে যাতে ফিরতে পারেন, সে জন্য এই প্রচেষ্টা।

এর আগেও আমরা দেখেছি পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওয়ে আদালতের হাজতখানায় এমন পাঠাগার তৈরি করা হয়েছিল। এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের সব থানায়, রংপুরের পীরগঞ্জ থানা, রেলওয়ের কমলাপুরের হাজতখানায় পাঠাগার তৈরির খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এভাবে প্রতিটি জেলা–উপজেলায় থানা ও আদালতের হাজতখানার পরিবেশ পাল্টে যাক, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে হাজতখানার এমন পরিবেশ যেন টিকে থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।