জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি

দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসুন

গত শুক্রবার রাতে সরকার হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ। যেখানে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ছিল লিটারপ্রতি ৮০ টাকা, সেখানে করা হয়েছে ১১৪ টাকা। অন্যদিকে ৮৬ টাকার পেট্রল ১৩০ এবং ৮৯ টাকার অকটেন হয়েছে ১৩৫ টাকা।

বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারে এত বেশি দাম বাড়ানোর নজির নেই। জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে যে সাশ্রয় হবে বলে সরকার আশা করছে, অর্থনীতির ক্ষতি ও জনগণের ওপর চাপের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে এর সুফল অনেক বেশি হতে পারে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রলপাম্পের সামনে মানুষ বিক্ষোভ করেছেন, শনিবার নগর ও মহাসড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কম থাকায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বর্ধিত ভাড়া আদায় নিয়ে পরিবহনকর্মী ও যাত্রীদের মধ্যে বচসা ও হাঙ্গামারও খবর পাওয়া যাচ্ছে। দূরপাল্লার অনেক পরিবহন ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে।

শনিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়: আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সমন্বয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান কমানোসহ পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ভর্তুকি কমাতে নিরুপায় হয়ে সরকার জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, কেন একসঙ্গে এত পরিমাণ বাড়ানো হলো। অল্প অল্প করে বাড়িয়ে সহনীয় করা যেত কি না?

সরকার জ্বালানি পণ্যের দাম ৫০ শতাংশের কাছাকাছি বাড়িয়ে ও বিদ্যুতের লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছে। কিন্তু দেশের অর্থনীতি তথা জনজীবনে তার নেতিবাচক প্রভাব কতটা পড়বে, সেসব আমলে নেওয়া হয়নি।

অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে শিল্পপণ্য, কৃষিপণ্য, গণপরিবহন ভাড়াসহ জীবনযাত্রার ব্যয়ে এর সরাসরি ও অনেক বেশি প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে পরিবহন ভাড়ার ক্ষেত্রে কার্যত স্বেচ্ছাচারিতা চলে এবং সরকার এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

এবারও এমন হবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম কম ছিল, তখন সরকার ভোক্তাদের কাছ থেকে বেশি অর্থ নিয়েছে এবং মুনাফা করেছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে একবারে এত বেশি দাম বাড়ানো পুরোপুরি অযৌক্তিক।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুতের উৎপাদন ও সক্ষমতা বাড়লেও দেশি সম্পদ গ্যাস উত্তোলনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ২০১৪ সালে সমুদ্রজয়ের পর মিয়ানমার বঙ্গোপসাগরে তাদের জলসীমায় গ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে। আমরা অনুসন্ধানও চালাতে পারিনি। কাদের অসহযোগিতা ও অবহেলায় তা হয়নি, সেই জবাবদিহি প্রয়োজন। দেশি গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণের চেষ্টা করলে জ্বালানি খাতে এ রকম বিপর্যয়কর অবস্থা হতো না।

সংকট সামাল দিতে জ্বালানির দাম কিছুটা বাড়বে—এ রকম ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল মন্ত্রী-উপদেষ্টার পক্ষ থেকে। কিন্তু তাই বলে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত? করোনার দীর্ঘ প্রভাব ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের ও প্রান্তিক মানুষ তো বটেই, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জীবনযাপনও অসহনীয় হয়ে উঠেছে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় জ্বালানির দাম যৌক্তিক ও সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবি জানাচ্ছি।