আটকে পড়া পর্যটক

কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তী সংঘর্ষ–সহিংস পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই ২০২৪) সন্ধ্যার পর থেকে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই ২০২৪) রাত থেকে সীমিত আকারে ইন্টারনেট চালু করা হয়। এ কয়দিনের প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকার সম্পাদকীয়, লেখা ও সাক্ষাৎকার ধাপে ধাপে অনলাইনে প্রকাশ করা হচ্ছে। সোমবার (২২ জুলাই ২০২৪) এ সম্পাদকীয় ছাপা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি কিংবা রাজনৈতিক গোলযোগে দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বিরূপ প্রভাব পড়ে থাকে। করোনা মহামারির সময় তা বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। তবে প্রতিবছর নিয়মিত-অনিয়মিতভাবে টানা বৃষ্টি, পাহাড়ধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে পর্যটকদের আটকে পড়ার বিষয়টি নতুন নয়। এবারের কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন ও পরবর্তী সহিংস ঘটনায় একই পরিস্থিতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে আটকে পড়া পর্যটকদের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনও ভাবছে। 

যেকোনো সরকারি ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ করে মানুষ দূরে কোথাও পরিবার-পরিজন-বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে যান। এক দশক ধরে মানুষের এমন প্রবণতা দেশের পর্যটন খাতের জন্য ইতিবাচকতা তৈরি করেছে। এবারও বুধবার পবিত্র আশুরার ছুটির সঙ্গে অনেকে বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়ে এর সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটিকে যুক্ত করে দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশের পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। শুক্রবার এসে যা চরম আকার ধারণ করে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে। ফলে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে অনেক পর্যটক আটকে পড়েছেন। তাঁরা সেখান থেকে ফিরতে পারছেন না। 

বান্দরবানে ৩০ থেকে ৩৫ জন পর্যটক বিভিন্ন হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে অবস্থান করছেন। আটকে পড়া পর্যটকেরা অধিকাংশ এসেছেন ঢাকা থেকে। তবে চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা বিকল্প উপায়ে বান্দরবান ছেড়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আটকা পড়েছেন কক্সবাজারে। শহর থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ও ট্রেন চলাচল করছে না। এ কারণে পর্যটকেরাও নিজেদের আবাসস্থলে ফিরতে পারছেন না। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতি জানাচ্ছে, দেশের পরিস্থিতির কারণে অন্তত এক হাজার পর্যটক আটকে আছেন। রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেকে বেড়াতে আসা প্রায় এক শ পর্যটককে শনিবার দুপুরে খাগড়াছড়ি শহরে নিয়ে আসা হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কারফিউ দিয়েছে সরকার। ফলে আটকে পড়া অনেক পর্যটকের জন্য ঘরে ফেরা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ফিরতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় অনেকে টাকার সংকটে পড়েছেন। সব মিলিয়ে আটকে পড়া পর্যটকেরা দুর্ভোগ ও ভোগান্তির মধ্যে আছেন।

আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসনগুলো পর্যটনকেন্দ্রিক সমিতিগুলোর সঙ্গে বসে এ বিষয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ের দিকে গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, বিষয়টি ভাববে।