দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনায় রংপুর অঞ্চলের পিছিয়ে থাকা নিয়ে সেখানকার মানুষের অভিযোগ-অনুযোগের শেষ নেই। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীতে পানি না থাকা আর বর্ষায় বন্যা ও নদীভাঙনের ফলে অঞ্চলটির মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। এর মধ্যে যদি কোথাও সেতু ভেঙে পড়ে, তখন আরও বেশি অসহায় পরিস্থিতি তৈরি হয়। কাউনিয়ায় মানস নদে একটি বাঁশের সাঁকো এবং সুন্দরগঞ্জে তিস্তার শাখা নদীতে নির্মাণাধীন একটি কাঠের সেতু ধসে পড়েছে। ফলে যাতায়াতের সুবিধায় বিঘ্ন ঘটায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেতুর দাবি জানাতে জানাতে হতাশ হয়ে স্থানীয় লোকজন উদ্যোগ নিয়েই তৈরি করে ফেলেন সাঁকো। এমন উদাহরণ নতুন কিছু নয়। কাউনিয়ার হারাগাছ ইউনিয়নে মানস নদের ওপর এমন একটি সাঁকো তৈরি করা হয়েছিল। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এখানে বড় ভূমিকা থাকলেও ১২ বছর ধরে সেই সাঁকো মেরামত ও সংস্কার করে আসছেন গ্রামের মানুষ। সেতুটি উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের পূর্ব নাজিরদহ গ্রামের দুই পারের মানুষের যোগাযোগের ভরসা ছিল। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে ভারত থেকে উজানের ঢল নেমে আসায় সম্প্রতি সেতুটি ভেঙে পড়েছে।
এক যুগের পুরোনো সাঁকোটি এমনটিতেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল, ফলে গত বছর উপজেলা পরিষদ থেকে সাঁকোটির পাশেই একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কাঠের সাঁকোটির দুই পাড়ে প্রায় ৬০ ফুট নির্মাণকাজ অসমাপ্ত থেকে যাওয়ায় সেটি কোনো কাজে আসছে না। এর মধ্যে বাঁশের সাঁকোটিও ভেঙে গেল। এখন কাঠের সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করে মানুষের দুর্ভোগ নিরসন করা হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।
অন্যদিকে সুন্দরগঞ্জের বেলকা ঘাট এলাকায় তিস্তার শাখা নদীর ওপর একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করছিল এলজিইডি। ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু উজানের ঢলের কারণে নদীতে স্রোত বাড়ায় গত সোমবার নির্মাণাধীন সেতুটি দেবে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেতুর নির্মাণকাজে ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর গাফিলতি ছিল। সেতুর পাটাতনে সিমেন্টের স্ল্যাবের পরিবর্তে কাঠ দেওয়া হয়েছে। সেতুর দুই পাশে নিরাপত্তামূলক প্রাচীরও দেওয়া হয়নি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্য, সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। তাই কাজটি শেষ করতে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এখন সেতুটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেল।
বেলকা ঘাট এলাকায় নির্মাণাধীন সেতুটি দ্রুত সংস্কার করে নির্মাণকাজ শেষ করা হোক। আশা করি, সেতু নির্মাণে গাফিলতির অভিযোগও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।