সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

পাঠাগার ও বইপ্রিয় মানুষটিকে অভিবাদন

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় জ্ঞানচর্চার ঘাটতির বিষয়টি নানা আলোচনায় উঠে আসে। একই সঙ্গে সুকুমারবৃত্তি ও সৃজনশীলতা চর্চা হ্রাস পাওয়ার বিষয়েও বলতে হয়। একসময় শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি আরও আনুষঙ্গিক ক্ষেত্র ছিল, যার মাধ্যমে এসব বিষয় চর্চিত হতো।

এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাঠাগার। একসময় গ্রামে গ্রামে বা মফস্‌সল শহরে যে পাঠাগার আন্দোলন ছিল, তা অনেকটা হারিয়ে গেছে বলা যায়। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে এখনকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বইবিমুখতা প্রকট।

একটা সময় পারিবারিক পাঠাগার গড়ে তোলার প্রবণতা থাকলেও আগের মতো সেটা দেখা যায় না। তবে পাঠাগার ও বইপ্রিয় অনেক মানুষের সন্ধান মেলে, যাঁরা এখনো সমাজে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তেমনই একজন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা প্রদীপ কুমার চৌধুরী (৭০)। অল্প বয়স থেকে বইয়ের প্রতি যে টান, সেটি এখনো ধরে রেখেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, মানুষকে বইমুখী করে তুলতে এখনো নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ছোটবেলায় পারিবারিক পাঠাগার থেকেই বই পড়ার নেশা তৈরি হয় প্রদীপ কুমারের। তবে বাবার গড়ে তোলা সেই পাঠাগার মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ধ্বংস করে দেয়। বাবা মহেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছিলেন।

বাবার সেই পাঠাগারের স্মৃতি ভুলতে পারেননি প্রদীপ কুমার। বাবার মতো একসময় বই সংগ্রহ শুরু করেন। তিনি সুনামগঞ্জ শহরে তাঁর বাড়িতেই ২০০৫ সালে গড়ে তোলেন আরেকটি পাঠাগার। তাঁর পাঠাগারে চার থেকে পাঁচ হাজার বই আছে। পত্রপত্রিকা আর নানা প্রাচীন, মূল্যবান সামগ্রীর বড় সংগ্রহশালাও সেটি। শুধু তা-ই নয়, নিজের টাকায় বই কিনে তিনি পরিচিতজন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিলি করেন। এভাবে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা ছড়িয়ে দিচ্ছেন সবার মধ্যে। ৪০ বছর ধরে এ কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন তিনি।

বই পড়ার নেশা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন। এরপর গ্রন্থাগারিক হিসেবে যোগ দেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে। চাকরি করেছেন। এখন অবসরজীবনেও তিনি বই ছাড়া থাকতে পারেন না। এ পর্যন্ত তিনি সহস্রাধিক ব্যক্তিকে বিনা মূল্যে বই উপহার দিয়েছেন।

কেবল গত এক বছরে শহরের পরিচিত লেখক-গবেষক, কবি, আইনজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ২০০ জনকে বিভিন্ন ধরনের বই উপহার দিয়েছেন তিনি। প্রদীপ কুমার বলেন, ‘বই পড়তে যেমন ভালো লাগে, তেমনি যাঁরা বইপড়ুয়া, তাঁদের বই উপহার দিয়ে আনন্দ পাই। যত দিন বাঁচি, বইয়ের সঙ্গেই থাকব।’

আমরা প্রদীপ কুমারের মতো এমন বইপ্রেমীকে অভিবাদন জানাই। তাঁর অনুপ্রেরণায় মানুষ বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হোক, বাড়ুক পাঠাগারচর্চা।