সড়ক সংস্কার ও সেতু নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ নতুন কিছু নয়। এর জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তবে এ নিয়ে নানা সময়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগও ওঠে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে যশোরের অভয়নগরে।
সেখানে একটি সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে চরমভাবে ভুক্তভোগী হয়েছেন জমির মালিকেরা। ক্ষতিগ্রস্তরা মূলত জেলে সম্প্রদায়ের। তাঁরা ক্ষতিপূরণ তো পাননিই, বরং জমিও হারিয়েছেন।
একে তো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, এরপর দরিদ্র জেলে পরিবার—এর জন্য কি তাঁদের বঞ্চিত করা সহজ মনে করা হচ্ছে? বিষয়টি যদি এমনই হয়, তাহলে খুবই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ইছামতী খালের ওপর নির্মিত ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের পুরোনো সেতুটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে এখন প্রায় দ্বিগুণ দৈর্ঘ্যের নতুন সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সেতুটির সংযোগ সড়কের প্রস্থ বাড়ানো হচ্ছে।
কিন্তু নতুন সেতুর এক পাশের বর্ধিতাংশ পড়েছে স্থানীয় জেলেপাড়ার বাসিন্দাদের জমিতে। নতুন সেতু নির্মাণ ও সড়ক সম্প্রসারণের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা তা পাননি। সাধারণত জমি অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণ আগেই পরিশোধ করা হয়। অথচ অভয়নগরে সেতু নির্মাণ প্রায় শেষের পথে, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি। জমি হারিয়ে ক্ষতিপূরণের আশায় নানা জায়গায় ধরনা দিচ্ছেন তাঁরা।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কয়েকজনের ভাষ্য, নতুন যে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, তার দক্ষিণ প্রান্তের জমিতে তাঁদের ভিটেবাড়ি ও দোকান আছে। সেতুর বর্ধিত অংশে তাঁদের প্রায় ৩২ শতাংশ জমি চলে গেছে। ক্ষতিপূরণের আশায় তাঁরা এলজিইডি কার্যালয়ে বারবার ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। আদৌ ক্ষতিপূরণ পাবেন কি না, এ নিয়ে তাঁদের শঙ্কা আছে। এমনকি ক্ষতিপূরণের নামে সেতুর কাজে বাধা দিলে চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হবে বলেও তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্য, ক্ষতিগ্রস্ত জমিমালিকদের ৩২ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রধান কার্যালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদনের পর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।
তাঁর বক্তব্যেই স্পষ্ট যে জমি অধিগ্রহণ না করেই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। সেতু নির্মাণের কাজও শেষের পথে। প্রশ্ন হলো, সেতু নির্মাণের আগেই কেন জেলেরা ক্ষতিপূরণ পেলেন না? দরিদ্র জেলেদের সঙ্গে এমন আচরণের কোনো অর্থ থাকতে পারে না। আশা করছি, এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বিষয়টির দ্রুত সুরাহা করবে।