সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বিদ্যালয়ে পুলিশ ফাঁড়ি

২০ বছরের এই জটিলতার অবসান হোক

শিশুশিক্ষার্থী বনাম পুলিশ। যোজন যোজন দূরে যাদের অবস্থান। শিক্ষার্থী থাকবে বিদ্যালয়ে, পুলিশ থাকবে থানায়। অথচ তাদেরই সহাবস্থান করতে হচ্ছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এমন অনভিপ্রেত ঘটনা আমরা দেখছি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায়।

সেখানকারই একটি বিদ্যালয়ে চলছে পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম। তা-ও টানা ২০ বছর ধরে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় থেকে ঊর্ধ্বতন মহল পর্যন্ত সবাই জানলেও এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০০২ সালে উত্তর হালইসার গোয়ালবাথান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রসহ একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনের প্রতিটি তলায় চারটি করে কক্ষ। সে বছরই পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় স্থানীয় নৌ পুলিশ ফাঁড়ি।

এরপর বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার চারটি কক্ষে স্থানান্তর করা হয় পুলিশ ফাঁড়িটি। সেই থেকে এখনো বিদ্যালয়ের পুরো একটি তলা বা চার-চারটি কক্ষ দখল করে আছে ওই ফাঁড়ি। বিদ্যালয়ে ১৪৯ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য চারটি শ্রেণিকক্ষ ছাড়াও শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ, প্রধান শিক্ষকের জন্য একটি কক্ষ ও একটি ভান্ডারকক্ষ প্রয়োজন। এখন চারটি কক্ষে ফাঁড়ির অবস্থানের কারণে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম একেবারে কোণঠাসা হয়ে আছে বলা যায়।

এখানে সবচেয়ে বড় যে নেতিবাচক বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো, পুলিশি কার্যক্রমের কারণে শিশুশিক্ষার্থীদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়ছে। একে তো পাঠদান বা খেলাধুলা কোনোটাই তারা স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারছে না, অন্যদিকে অপরাধীদের আনা-নেওয়াসহ থানার কার্যক্রমের কারণে শিশুরা ভীতসন্ত্রস্ত থাকে।

শিক্ষকেরা বলছেন, অনেক সময় বিদ্যালয়ের বারান্দায় অনেক আসামিকে বেঁধে রাখা হয়। আসামিদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে শিশুরা ভয় পায়। তখন শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ করে পাঠদান করাতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে ভর্তি করাচ্ছেন না।

পুলিশ বলে থাকে, তারা জনগণের বন্ধু। কিন্তু এই ফাঁড়ির কারণে বিপুলসংখ্যক শিশু পুলিশের প্রতি নেতিবাচক ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠেছে এবং উঠছে, সেটি তাদের বিবেচনায় আসেনি ভেবেই আমরা অবাক হচ্ছি।

কারণ, বিদ্যালয় থেকে ফাঁড়িটি সরিয়ে নিতে নৌ পুলিশের এসপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বারবার চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও নৌ পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলছেন, ফাঁড়ির নিজস্ব ভবন না হওয়া পর্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটি ভাড়াবাড়িতে ফাঁড়ি সরিয়ে নেওয়া হবে।

কিন্তু এর জন্য কত সময় লাগবে তাদের? গত ২০ বছরেও সেটি হয়নি কেন? এখানে নৌ পুলিশ কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাব ও অবহেলার বিষয়টিই প্রতীয়মান হয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।