সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এ দেশে কোনো সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে যেভাবে গাছ কাটা হয়, তার নজির বিশ্বের অন্য কোথাও আছে বলে মনে হয় না। সর্বশেষ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় একটি গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে এমনটি ঘটেছে। ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে পরিবেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ তালগাছ একেবারে উপড়ে ফেলা হয়েছে সেখানে। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও এক ইউপি সদস্যকে। বজ্রপাত রোধে তালগাছের প্রয়োজনীয়তার কথা আমাদের কারও অজানা নয়। সেখানে এভাবে তালগাছ উপড়ে ফেলাটা ক্ষমার অযোগ্য বলেই আমরা মনে করি। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নজিবপুর গ্রামে এক সপ্তাহ ধরে এক্সকাভেটর দিয়ে অন্তত ৩০টি তালগাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। তালগাছগুলোর বয়স ছিল ২৫ থেকে ৩০ বছর। তালগাছের পাশাপাশি এ সড়কে বন বিভাগের রোপণ করা বিভিন্ন প্রজাতির আরও অন্তত ৪০টি গাছের চারাও উপড়ে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ফজলু গাজী ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সোবাহান হাওলাদারের নির্দেশে এসব গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। সড়কের পাশে যাঁরা এসব তালগাছ রোপণ করেছেন, তাঁরা ইউপি চেয়ারম্যানের ভয়ে মুখে কিছু না বললেও ভেতরে-ভেতরে ক্ষোভে ফুঁসছেন।

পরিবেশ রক্ষায় ও বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে তালগাছ রোপণ করার জন্য প্রচার চালানো হলেও জনপ্রতিনিধিরা তা মানছেন না। শুধু তাই নয়, প্রকৃতিপ্রেমী সাধারণ মানুষের স্বেচ্ছায় লাগানো তালগাছগুলোও তাঁরা রক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছেন না। উল্টো কেউ কেউ সেগুলোর ক্ষতিই করছেন। বীজ থেকে পরিপূর্ণ গাছ হতে দীর্ঘ সময় লাগে একটি তালগাছের। ফলে অনুমতি নিয়েও তালগাছ কাটার কোনো সুযোগ থাকা উচিত নয়। সেখানে অনুমতি ছাড়াই এতগুলো তালগাছ এক সপ্তাহ ধরে এক্সকাভেটর দিয়ে উপড়ে ফেলা হচ্ছে, কিন্তু কারও কোনো খবর হলো না? এসব গাছ বাঁচাতে বন বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসনসহ কেউই এগিয়ে এল না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। 

বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, ‘গাছ কাটার প্রয়োজন হলে সে জন্য নিয়মনীতি রয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে বন আইনে মামলা দেওয়া হবে।’ এখন তাঁরা কী করছেন, সেটিই দেখার অপেক্ষা। গত জানুয়ারি মাসে রাজশাহীর বাগমারায় ৫০টি তালগাছে কীটনাশক দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন নেতা। এ নিয়ে প্রথম আলো প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। সেটি হাইকোর্টের গোচরে এলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমরা আশা করব, কলাপাড়ার ঘটনায় আরও বেশি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।