চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি নিয়ে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আচরণ শুধু আইনবিরোধীই নয়, রীতিমতো মাস্তানি। ঋত্বিক ঘটক শুধু বাংলা চলচ্চিত্রে নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্রে সামনের কাতারের একজন নির্মাতা।
দেশভাগের যন্ত্রণা ছিল তাঁর চলচ্চিত্রের প্রধান এক উপজীব্য। মেঘে ঢাকা তারা, অযান্ত্রিক, তিতাস একটি নদীর নাম, সুবর্ণরেখার মতো কালজয়ী চলচ্চিত্রগুলো সমাজ-রাজনীতি ও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে থাকবে। যেকোনো বিবেচনায় ঋত্বিকের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি সংরক্ষণ বর্তমান ও উত্তর–প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাড়িটি ভেঙে ফেলা এবং দখলে নেওয়ার প্রচেষ্টা বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসছিল। বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য রাজশাহীর ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি দীর্ঘদিন ধরে আবেদন জানিয়ে আসছে। আন্দোলনের কারণে বিগত সরকারের আমলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের এক দিন পার হতে না হতেই বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীদের অভিযোগ, রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের লোকজন বাড়িটি ভেঙে ফেলেছেন। আমরা মনে করি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেটাকেই সুযোগ হিসেবে নিয়েছে হোমিওপ্যাথিক কলেজ কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী নগরের মিয়াপাড়ায় ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়িটি অবস্থিত। এ বাড়িতেই শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের একটি সময় কাটিয়েছেন ঋত্বিক ঘটক। ঋত্বিকের পরিবার কলকাতায় চলে যাওয়ার পরে ১৯৮৯ সালে তৎকালীন সরকার এ বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে ইজারা দিয়েছিল। ঋত্বিকের ভিটার উত্তর অংশে গড়ে তোলা হয় হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের আধুনিক ভবন। আর এই ভবনের দক্ষিণ অংশে ছিল বাড়িটি।
ঋত্বিক ঘটকের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভাঙা বাড়ির দেয়ালে তাঁর চলচ্চিত্রের পোস্টার রংতুলি দিয়ে এঁকে অনুষ্ঠান করেন চলচ্চিত্রকর্মীরা। কিন্তু হোমিও কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটায় তাঁর চলচ্চিত্র নিয়ে দেয়ালচিত্র মুছে ফেলার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের কারণ কী জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘এটা আমার সভাপতি বলতে পারেন, তিনি কলেজটা কীভাবে রাখবেন।’
প্রশ্ন হচ্ছে ঋত্বিক ঘটকের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দিয়ে একটা ইতিহাসকে এভাবে বিনষ্ট করে দেওয়ার অধিকার রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কীভাবে পেল? সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে তারা যে আচরণ করেছে, সেটা রীতিমতো ধৃষ্টতা। আমরা মনে করি, বাড়িটি ভেঙে ফেলার পেছনে কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠীর দুরভিসন্ধি রয়েছে। সরকারকে অবশ্যই সেটা তদন্ত করে বের করে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
ঋত্বিক ঘটকের বাড়ির জায়গায় তাঁর নামে চলচ্চিত্র জাদুঘর নির্মাণ করাটাই হবে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের সর্বোত্তম পথ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে, আমরা সেই আশা করি।