সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ডিসি সম্মেলন

রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়

প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলন প্রতিবছর হয়ে থাকে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরাসরি মতবিনিময় হয়।

স্বাভাবিকভাবে এ সম্মেলনে সরকারের নীতি পরিকল্পনা আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়, এবারও যার ব্যতিক্রম হয়নি। আবার জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকেও কিছু প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। 

সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসিদের প্রতি ২৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন, যার মধ্যে অগ্রাধিকার পেয়েছে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনীতি চাপে আছে উল্লেখ করে তিনি অতি জরুরি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ডিসিদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা না থাকলেও তাঁরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিতে পারেন এবং সেই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা তদারক করতে পারেন।

তবে আওয়ামী লীগ সরকার একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর নীতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগের নির্দেশনাগুলো কতটা কার্যকর হয়েছে, সেই প্রশ্নও থাকে। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি (যাদের শতভাগ ক্ষমতাসীন দলের) এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসহযোগিতা ও বিরোধিতার কারণেও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো হয় না। হলেও মানসম্পন্ন নয়। 

তিন দিনের সম্মেলনের শেষ দিনে ডিসিরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাঁদের ক্ষমতার অপব্যবহার না করতে এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়ার কথা বলেছেন। দুর্নীতি উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত বিষয়ে ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আবার ডিসিদের পক্ষ থেকেও কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ভিডিও কলে কারাগারে থাকা কয়েদিদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজনের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা বাড়ানো, রাজস্ব আদায় বাড়াতে সমন্বয় কমিটি গঠন, ২৪ ঘণ্টার শিক্ষা চ্যানেল চালু, অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার কথাও আছে।  

তবে এবারের সম্মেলনে বেশি আলোচিত হয়েছে নির্বাচনে ডিসিদের ভূমিকার বিষয়টি। সম্মেলনের শেষ দিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান তাঁদের নির্বাচনসংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেশবাসী চাইছেন। সারা বিশ্বও সেভাবে তাকিয়ে আছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আপনাদের (ডিসি) ভূমিকা প্রাধান্য পাবে, মুখ্য হবে। সে জন্য আপনারা নিজেরা তৈরি থাকুন, যাতে জাতিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারেন।’

এ প্রসঙ্গে যে কথাটি জোর দিয়ে বলা যায় তা হলো, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি ডিসি, এমনকি নির্বাচন কমিশনের ওপরও পুরোপুরি নির্ভর করে না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতের দুটো জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন কিংবা প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ভবিষ্যতে তারা কী করবে, তা অনেকগুলো শর্তের ওপর নির্ভর করে। প্রথমত, নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে কি না? নিলেও ক্ষমতাসীনেরা জনগণের রায় মেনে নিতে প্রস্তুত আছে কি না। মনে রাখতে হবে, একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন শুধু ডিসি ও নির্বাচন কমিশনের নয়, ক্ষমতাসীনদেরও বড় চ্যালেঞ্জ।