সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

মহান স্বাধীনতা দিবস

গণতন্ত্রের সংগ্রামেও জয়ী হতে হবে

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয় এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এই স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন, প্রায় এক কোটি মানুষ দেশান্তরিত হয়েছেন, অসংখ্য মা-বোন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

স্বাধীনতার এই দিনে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি সেই বীর সন্তানদের, যাঁরা দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করেছেন। স্মরণ করি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি ধীরে ধীরে একটি জনগোষ্ঠীকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং একাত্তরের ২৬ মার্চ চূড়ান্ত ডাক দিয়েছেন। স্মরণ করি জাতীয় চার নেতাকে, যাঁরা বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।

স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠন, যেখানে দলমত-ধর্ম-সম্প্রদায়নির্বিশেষে দেশের প্রত্যেক মানুষের মৌলিক চাহিদা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হবে। যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, আমরা তাঁদের স্মরণ করব। সেই সঙ্গে স্বাধীনতার লক্ষ্য ও আদর্শকেও হৃদয়-মননে ধারণ করতে হবে।

গত ৫২ বছরে আমাদের অনেক সফলতা আছে। একদা খাদ্যঘাটতির দেশ খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের কাছাকাছি চলে এসেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারিত হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। নাগরিকদের গড় আয় ও আয়ু বেড়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে এসেছি।

এসব সাফল্যের পেছনে যে সাধারণ মানুষের ঘাম ও শ্রম যুক্ত, তাঁদের জীবনমান কতটা উন্নত হয়েছে, তা–ও ভেবে দেখার বিষয়। বাস্তবতা হলো স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও আমরা শ্রমিক-কৃষকসহ সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিশ্চিত করতে পারিনি।

স্বাধীনতার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, পাঁচ দশক পরও আমরা তা থেকে অনেক দূরে আছি। সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ বলে অভিহিত করলেও গণতন্ত্রকে সংহত করা যায়নি।

তাই স্বাধীনতার এই দিনে আত্মজিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন—আমরা কি বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নতি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকব? আমরা কি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভঙ্গুর অবস্থা মেনে নেব, না একে শক্তিশালী করব? আমরা কি সব বিষয়ে রাজনৈতিক বিভাজন ও বৈরিতা জিইয়ে রাখব, না জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐক্যের পথে এগোব? আমরা কি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি আইনের শাসন, মানবাধিকার ও বাক্‌স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হব না?

চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনের বিষয়ে সরকারি ও বিরোধী দল এখন পর্যন্ত বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। এতে জনগণের মধ্যে যেমন প্রচণ্ড হতাশা দেখা দিয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক সংঘাতেরও আশঙ্কা বাড়ছে।

সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান আশা করা যায় না। সংকীর্ণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।

তঁাদের মনে রাখতে হবে, বিভক্ত জাতি কখনো অগ্রসর হতে পারে না। একাত্তরে এ দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছিল বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আজ আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতন্ত্রের সংগ্রামেও জয়ী হতে হবে।