সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে অভিবাদন

দেশে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে নাগরিকদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে গড়ে তোলা সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ চাহিদা পূরণ করতে পারছে? বিশেষ করে সুযোগ–সুবিধা, শিক্ষকসংকট ও পাঠদানের মানের ঘাটতির কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অনেক অভিভাবকই সন্তানদের পাঠাতে চান না। সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকলেও অসচ্ছল বা দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের ভরসাই হলো সরকারি প্রতিষ্ঠান। এমন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবার দেশসেরা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে।

আলোচ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম মুহাম্মাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। খুলনা নগরের সীমানাঘেঁষা বিদ্যালয়টির অবস্থান বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নে। এ প্রতিষ্ঠান সারা দেশের ৬৫ হাজার ৬২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় নির্বাচিত হয়েছে। কয়েক বছর ধরে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়ে আসছিল বিদ্যালয়টি। এবার দেশসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করল এ প্রতিষ্ঠান।

বিদ্যালয়টি শহরের একেবারে পাশে হওয়ায় শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া পরিবারের শিশুরা বেশি পড়াশোনা করে। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির সাফল্য নিয়ে প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশের পর ‘গরিবের বিদ্যালয়’ হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি পায় সেটি। সে সময় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় মেঝে, বারান্দায় বসে ক্লাস করত শিশুরা। ছিল না পর্যাপ্ত শৌচাগার। শিক্ষক ছিলেন মাত্র পাঁচজন। এত সংকটের পরও প্রতিবছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ছিল শতভাগ। ট্যালেন্টপুলেও বৃত্তি পেত শিক্ষার্থীরা। এরপর বিদ্যালয়ে নতুন তিনতলা ভবন হয়েছে। শিক্ষকসংকটও কিছুটা নিরসন হয়েছে। পরিবেশ উন্নতির সঙ্গে আরও বড় সাফল্য এল বিদ্যালয়টির।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান বিদ্যালয়ের এই কৃতিত্ব বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি, জেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সবার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় বিদ্যালয় আজকের অবস্থানে এসেছে।

এখনো বিদ্যালয়টির কিছু সমস্যা থেকে গেছে। শিক্ষকসংকট এখনো থেকে গেছে, তা দূর করতে হবে। জমির অভাবে বিদ্যালয়ের মাঠের ব্যবস্থা করা যায়নি। শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় এখনো কক্ষসংকট থেকে গেছে। শিশুদের এখনো গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। আরও একটি নতুন ভবনের প্রয়োজন পড়লেও জায়গা না থাকায় সেটি করা যাচ্ছে না। প্রায় তিন বছর ধরে জমি অধিগ্রহণ ফাইল আটকে আছে।

আমরা আশা করব দেশসেরা প্রতিষ্ঠানটির সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ বিদ্যালয় যে সাফল্য দেখাল, তা নিশ্চয়ই অন্য আরও বিদ্যালয়ের জন্য অনুপ্রাণিত করবে। মুহাম্মাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিবাদন জানাই।