সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

গাছতলার বিদ্যালয়

ইকবাল হোসেনের স্বপ্ন পূরণ হোক

শিক্ষা নাগরিকের অন্যতম চাহিদা। রাষ্ট্র সেই চাহিদা পূরণ করতে বাধ্য। কিন্তু রাষ্ট্র কি সর্বত্র নাগরিকের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট? অন্তত পার্বত্যাঞ্চল, চরাঞ্চল কিংবা উপকূলীয় এলাকার মানুষের চাহিদা পূরণে যতটা মনোযোগী হওয়া দরকার রাষ্ট্রের, তাতে যথেষ্ট ঘাটতি আছে। এসব এলাকায় সমাজসেবী কোনো ব্যক্তি নানা পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসেন। মানুষের মধ্যে আশা জাগিয়ে রাখেন। মিরসরাইয়ের উপকূল এলাকায় ইকবাল হোসেন তাঁদের মতোই একজন। সুযোগবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি।

১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ থেকে ভেসে আসা অনেক মানুষ মিরসরাই উপকূলের বেড়িবাঁধের দুই পাশে গড়ে তোলেন জনবসতি। সাগরে মাছ ধরে আর বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে এসব মানুষের অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা হলেও শিক্ষার আলোবঞ্চিত ছিল তাঁদের ঘরে থাকা শিশুরা। ২০১৩ সালে উপকূল এলাকায় বেড়াতে গিয়ে সেখানকার শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের দেখে স্থির থাকতে পারেননি ইকবাল। নেমে যান কিছু একটা করতে। সেখান থেকে জন্ম নেয় ‘সোনালি স্বপ্ন’ নামের একটি অস্থায়ী বিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামে এক যুগ আগে মাত্র ১৪ জন নিয়ে শুরু হয় সেই অস্থায়ী স্কুল। বর্তমানে স্কুলটির শিক্ষার্থী শতাধিক। এ স্কুলে শুক্র ও শনিবার সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস নেওয়া হয়। অবকাঠামো না থাকায় গাছতলায় ঘাসের ওপর বসে পড়ালেখা করে শিশুরা। এ জন্য এটি গাছতলার স্কুল নামেও পরিচিত। মূলত শিশুদের বর্ণপরিচয়ের সঙ্গে পড়তে ও লিখতে শিখিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির উপযোগী করা হয়। স্কুল ভর্তিতে সহায়তা, পোশাক ও শিক্ষাসামগ্রীর ব্যবস্থাও করা হয় তাঁর বিদ্যালয় থেকে। তাঁকে সহায়তা করে থাকে স্থানীয় শিক্ষা অনুরাগী ব্যক্তি ও সংগঠন।

ইকবালের এ বিদ্যালয় ওই এলাকার শিশুদের বদলে দিয়েছে। এসব শিশু এখন স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছে তারা। অভিভাবকেরা ইকবালের বিদ্যালয়ের মাধ্যমে সচেতন হয়েছেন বাল্যবিবাহ ও স্বাস্থ্য বিষয়ে। ইকবাল হোসেন বলেন, স্থায়ী কোনো অবকাঠামো না থাকায় বর্ষাকালে প্রায় সময় বন্ধ রাখতে হয় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। আর সমুদ্রের একেবারে কাছে হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিপন্ন হয়ে ওঠে বেড়িবাঁধ এলাকার মানুষের জীবন। তাই এলাকায় একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করলে ঘূর্ণিঝড়ের সময় সেটি যেমন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, তেমনি সেখানে বিদ্যালয়ের কার্যক্রমও চালানো যাবে নির্বিঘ্নে। বিদ্যালয়টির স্থায়ী স্থাপনা হবে, সেটিই স্বপ্ন তাঁর।

আমরা আশা করি, একদিন তাঁর এ স্বপ্ন পূরণ হবে। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় পৃষ্ঠপোষকেরা তাঁর পাশে দাঁড়াবেন। প্রায় এক যুগ ধরে এ নিরলস সমাজসেবার জন্য আমরা ইকবাল হোসেনকে অভিবাদন জানাই।