সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলায় এখন শুধু ধ্বংসের চিহ্ন। একসময় যে টিলা ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের নিদর্শন, এখন তা অবৈধ পাথর উত্তোলনের ফলে ধ্বংসের মুখে। ‘পাথরের খনি’ হিসেবে পরিচিত স্থানটিতে আজ গভীর গর্ত আর ক্ষতবিক্ষত ভূমির চিহ্ন ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই।
পাথর তোলার অনৈতিক কার্যক্রম শুধু টিলা দুটিকে ‘কঙ্কালে’ পরিণত করেনি, এর পরিবেশগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবও স্থানীয় জনগণের জন্য বড় সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব এবং প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। এটি স্থানীয় অর্থনীতি ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। ঘুষের বিনিময়ে পুলিশও এ অবৈধ কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রশাসন দাবি করছে, তারা এখন টিলা এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে এবং অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে বাস্তবতা হলো, দিনের পর দিন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবৈধভাবে পাথর তুলছেন। যেখানে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে, সেখানেও প্রায়ই ট্রাক্টরের মাধ্যমে পাথর সরাতে দেখা যাচ্ছে। এই কর্মকাণ্ড প্রশাসনের নজরদারিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। রাতে চক্রটি তাদের কাজ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। এটি প্রশাসনের দুর্বলতার প্রমাণ।
পরিবেশবিদেরা দাবি করেছেন, যদি পাথরের এই অবৈধ উত্তোলন বন্ধ না করা যায়, তবে আগামী দশকগুলোতে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়বে।
ইতিমধ্যে টিলা ধ্বংস করে পাথর তোলার কাজ স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রাকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করছে। চক্রটি কৃষিনির্ভর মানুষের জীবনকে বিপদে ফেলছে। পাথর তোলায় যে গভীর গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে, তা স্থানীয় জনসাধারণের চলাচলে বিপদ সৃষ্টি করছে এবং স্থানীয় মানুষের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় এখনো সম্ভব। প্রথমত, প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে এবং অবিলম্বে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও গণমাধ্যমের সহায়তা নিয়ে পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং তাদের পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে অধিক জ্ঞান দেওয়া দরকার। তৃতীয়ত, পরিবেশ আইন বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
শাহ আরেফিন টিলা শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থান নয়, এটি পরিবেশ, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। যদি আমরা এ ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে না পারি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা কোনো স্থিতিশীল পরিবেশ রেখে যেতে পারব না।