সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ধর্ষণচেষ্টার আসামির মহড়া

ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে নিরাপত্তা দিন

কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিন পাওয়া আসামির জন্য একপ্রকার অধিকার। যদি বাদীপক্ষ বা কারও জন্য হুমকি না থাকে, দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা না থাকে, এমন কিছু কারণ বিবেচনায় আদালত আসামিকে জামিন দিয়ে থাকেন।

কিন্তু সেই জামিন পাওয়া আসামি যদি বাদীপক্ষের বাড়িতে গিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামি জামিন পেয়ে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে উল্লাস করে বাদীর বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ভুক্তভোগীর পরিবার।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত জুলাই মাসে ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে আলেফ শেখ (৭০) নামের এক ব্যক্তি ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ওই দিনই শিশুর মা বাদী হয়ে গোপালপুর থানায় মামলা করেন। রাতেই পুলিশ আলেফ শেখকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। ধর্ষণচেষ্টা মামলায় আলেফ শেখের বিরুদ্ধে সোমবার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তার মতে, তদন্তে আলেফ শেখের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

গত বৃহস্পতিবার আলেফ শেখ আদালত থেকে জামিন পান। সেদিন রাতেই আত্মীয়স্বজন তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন। তাঁরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বিভিন্ন পাড়ায় আলেফ শেখকে নিয়ে নেচেগেয়ে মহড়া দেন। পরে মামলার বাদীর বাড়ির সামনে গিয়ে উল্লাস করেন।

এ সময় ভুক্তভোগীর পরিবারকে তাঁরা গালাগাল করেন এবং এ মামলা করার প্রতিশোধ নেবেন বলে হুমকি দেন। এ সময় আতঙ্কে ওই শিশু এবং তার পরিবারের সবাই ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। এ ঘটনায় বাদীপক্ষ থেকে গোপালপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ওই এলাকা পরিদর্শন করেছে।

এ বিষয়ে প্রতিনিধির মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে আমরা জানতে পারি, দোকানপাট করা নিয়ে স্থানীয়ভাবে কিছু মানুষের মধ্যে কোন্দল তৈরি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটে। তবে বিবাদীপক্ষের দাবি হচ্ছে, শত্রুতাবশত এমন মামলা করা হয়েছে, যা ভিত্তিহীন।

যদিও পুলিশি তদন্ত বলছে ভিন্ন কথা। বিষয়টি যেহেতু বিচারাধীন, আদালতের সিদ্ধান্তেই এর সুরাহা হবে। কিন্তু জামিন পেয়ে কোনো আসামির সদলবল এভাবে উল্লাস করে বেড়ানো খারাপ নজির হয়ে থাকবে। বাদীপক্ষকে এভাবে হুমকি দেওয়াও ধর্ষণচেষ্টার মতো অপরাধকে উসকে দেবে।

স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীদের মতে, এসব কর্মকাণ্ড আইনপরিপন্থী কাজ। তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এই আসামির জামিন বাতিল করাই উচিত হবে। আমরা আশা করব, ডায়েরির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় থানা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং ভুক্তভোগীর পরিবারকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।