সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

মধুপুরে স্থানীয় প্রশাসন কী করছে

উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত—সবার পছন্দের একটি খাবার হচ্ছে কলা। একই সঙ্গে সহজে ক্ষুধা নিবারণ, পুষ্টির জোগান এবং সহজলভ্যতা ও ক্রয়মূল্য হাতের নাগালে থাকায় কম আয়ের মানুষেরা কলা খেতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

দুঃখজনক হচ্ছে, দেশের বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই আমরা রাসায়নিক ব্যবহারের বাইরে রাখতে পারছি না। ফলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এ নিয়ে আইন করা, অভিযান চালানো বা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দিন শেষে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি কোনোভাবেই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

এ কারণে আমরা দেখছি, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় কলা চাষে ধাপে ধাপে ব্যবহার করা হচ্ছে অতিরিক্ত রাসায়নিক। সেই কলাই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষ কিনে খেতেও বাধ্য হচ্ছে।

মধুপুর এলাকা অনেক আগে থেকে কলা চাষের জন্য বিখ্যাত। তবে একসময় সেটি হতো স্থানীয়ভাবে। কিন্তু দুই দশক ধরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কলা চাষ শুরু হয়। সেখানে বাইরে থেকে বড় ব্যবসায়ীরা এসে স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে কলার আবাদ শুরু করেন।

স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্যে প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বাইরে থেকে আসা বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমেই কলা চাষে রাসায়নিকের ব্যবহারের বিষয়টি ঘটছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে সেই প্রবণতা কম। এটি ঠিক, স্থানীয় চাষিদের মাধ্যমেই সেই কাজ করছেন বিনিয়োগকারীরা।

উদ্বেগজনক হচ্ছে, গাছ রোপণ থেকে শুরু করে ফল পাকানো পর্যন্ত কয়েক ধাপে রাসায়নিকের ব্যবহার ঘটছে। কোথাও কোথাও তা মাত্রাতিরিক্ত। গাছ রোপণের সময় রাসায়নিক সার ব্যবহার, গাছ বড় হওয়ার পর বিভিন্ন রোগমুক্ত করতে ছত্রাকনাশক ব্যবহার এবং কলা বড়, সুন্দর ও আকর্ষণীয় করার জন্য আলাদা রাসায়নিক ব্যবহার প্রয়োগ করা হয়।

ফল পাকানোর জন্য প্রতি লিটারে এক মিলি কেমিক্যাল সহনীয়। কিন্তু অতি মুনাফার আশায় লিটারে ১০-১৫ মিলি পর্যন্ত কেমিক্যাল ব্যবহারও করা হচ্ছে।

এ মৌসুমে মধুপুর উপজেলায় ২ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আড়াই লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু সেখানে অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার রোধ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বক্তব্য, কৃষকদের নিয়ম মেনে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং রাসায়নিক ব্যবহার না করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। অথচ অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু কাউকে এখন পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া হয়েছে কি না, তা শোনা যায় না।

এখানে কৃষকদের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করা এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বেশি দরকার। এখানে কি স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে না?