সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ছাত্রলীগ কি আইনকানুনের ঊর্ধ্বে

অভিভাবক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের উপদেশ কিংবা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সতর্কবার্তা—কিছুই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমলে নিচ্ছেন না। তাঁরা একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েই যাচ্ছেন। তঁাদের রোষানল থেকে ভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী, সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থী কেউ রেহাই পাচ্ছেন না।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) শাখা ছাত্রলীগের ‘নির্যাতনের’ শিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দুই ছাত্রকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে। ওই দুই ছাত্র হলেন জাহিদ হোসেন ওরফে ওয়াকিল ও সাকিব হোসেন। ছাত্রশিবির সন্দেহে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসে তাঁদের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ। একই সময় এস এ রায়হান ও মোবাশ্বির হোসেন নামের অপর দুই ছাত্রকে নির্যাতন করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তঁারা সবাই মেডিকেলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

চমেক সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী ওই চার ছাত্রকে ছাত্রাবাসের নিজ নিজ কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান। পরে তাঁদের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে তাঁদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তাঁদের বাড়িতে চলে যেতে বলা হয়। রায়হান ও মোবাশ্বির বাড়িতে ফিরে যান। জাহিদ ও সাকিব চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে ঘটনা জানাজানি হয়।

অভিযোগের বিষয়ে চমেক ছাত্রলীগের নেতা অভিজিৎ দাশ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁরা (চার ছাত্র) শিবির করেন। গোপনে এই কাজগুলো তাঁরা করে যাচ্ছিলেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মারা হয়নি।’ যদি মারাই না হবে, তাহলে আইসিইউতে ভর্তি হতে হলো কেন? এই চার ছাত্র যদি বেআইনি কোনো কাজ করে থাকেন, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর; ছাত্রলীগের নয়।

চমেকে ছাত্রলীগের দুটি ধারা সক্রিয়। মহিবুলের বাইরে সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের একটি পক্ষ চমেকে সক্রিয়। ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারির পর চমেক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন মারামারিতে মহিবুলপন্থী মাহাদি জে আকিব নামের এক ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছিলেন।

একজন শিক্ষার্থী প্রথম আলোর কাছে ছাত্রলীগের মারধরের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা বুয়েটের আবরার ফাহাদের কথাই মনে করিয়ে দেয়। স্টাম্প, লাঠি ও টায়ারের পাইপ দিয়ে বেদম প্রহার করা হয়েছে তাঁদের। উল্লেখ্য, ফেসবুকে দেওয়া একটি বার্তাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন। বিচারে ছাত্রলীগের ২০ নেতা-কর্মীর মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন হয়।

ভবিষ্যতে যঁাদের চিকিৎসক হওয়ার কথা, যঁাদের প্রকৌশলী হওয়ার কথা, ছাত্রলীগ নামের সংগঠনটি তাঁদের কেন সন্ত্রাসী ও খুনের আসামি বানাচ্ছে? সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ যত শক্তিশালীই হোক না কেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।

বুয়েটে মর্মান্তিক ঘটনার পরও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যে কমেনি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ–কাণ্ড তার প্রমাণ। কয়েক দিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাতে এক নারী সাংবাদিক নিগৃহীত হন।

ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদেরও ওপর ধারাবাহিক হামলা ও হল থেকে বের করে দেওয়ার বহু ঘটনা ঘটলেও খুব কম ক্ষেত্রেই অপরাধীরা শাস্তি পেয়েছেন। চমেকে যঁারা চার শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন, তাঁদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারে সোপর্দ করা হোক।