সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বিকল্প জায়গায় বালু ফেলা হোক

ফসলি জমি ছাড়া একজন কৃষক অস্তিত্বহীনই বলা যায়। খুলনার দাকোপ উপজেলার পশুর নদের পারে বাণীশান্তা ইউনিয়নের কৃষকেরা তেমন অস্তিত্বহীনতায় ভুগছেন। কারণ, তঁাদের জমির ওপর মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর নদ খননের বালু ফেলতে চায়।

এর জন্য জেলা প্রশাসন সেখানকার ৩০০ একর জমি হুকুমদখল করেছে, তা–ও কৃষকদের মতামতকে অগ্রাহ্য করেই। তার মানে জোরপূর্বকভাবেই কৃষকদের কাছে এ জমি হুকুমদখল করা হয়েছে। এখন সেখানে বালু ফেলার জন্য কার্যক্রম শুরু করার তৎপরতা চালাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর বিরুদ্ধে কৃষকেরা সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বাণীশান্তা ইউনিয়নের মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষি। আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সেখানকার জমি তিন ফসলি। ফলে সেখানে বালু ফেলতে দিতে কোনোভাবেই রাজি নন কৃষকেরা। হুকুমদখলের জন্য সাইনবোর্ড বসানো ও খননযন্ত্র তোলার চেষ্টা সম্মিলিত প্রতিরোধে ব্যর্থ করে দিয়েছেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে তঁাদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া খনন প্রকল্পটির জন্য মোংলা বন্দরের পর্যাপ্ত জমি নেই। তাই মাটি-বালু ফেলার জন্য বাণীশান্তার এ জমির প্রয়োজন তাঁদের। কিন্তু দাকোপের ইউএনওর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সেসব ভূমি কৃষিজমি।

দুই বছরের জন্য হুকুমদখলের জন্য কৃষকদের ক্ষতিপূরণও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কৃষকেরা সেই ক্ষতিপূরণ নিতে রাজি নন, জমি ছাড়তেও রাজি নন। বাণীশান্তা কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্যরা বলছেন, ‘জীবন দিয়ে হলেও আমরা আমাদের পূর্বপুরুষের কৃষিজমি রক্ষা করতে চাই। বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের ওপর নানা রকম চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে আমরা কেউ পিছু হটতে রাজি নই।’

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বৃহৎ উন্নয়নের স্বার্থে এ কৃষিজমি দরকার। বন্দরের উন্নয়ন হলে এর উপকারভোগী হবে এই অঞ্চলেরই মানুষ। কিন্তু পরিবেশবাদীদের অভিমত, দুই বছরের জন্য হুকুমদখল করা হলেও সেই জমি দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে প্রান্তিক মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম সংস্থান পুকুর, জলাশয়, মৎস্যসম্পদ ও গবাদি প্রাণীও ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ফলে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হবে প্রায় দেড় হাজার সংখ্যালঘু পরিবার।

কৃষকদের দাবি, বিকল্প জায়গায় খননের বালু ফেলা হোক। বিকল্প কিছু জায়গার প্রস্তাবও তারা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দিয়েছে। আরও বড় ব্যাপার হচ্ছে সেখানকার স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান—কোনো জনপ্রতিনিধিই কৃষিজমিতে বালু ফেলার পক্ষে নন।

ফলে এরপরও সেখানে বালু ফেলা একপ্রকার গোঁয়ার্তুমি ছাড়া কিছু নয়। আমরা আশা করব, প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।