সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনে তোড়জোড়

কোনোভাবেই কয়রার বনাঞ্চল ধ্বংস নয়

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড় হানা দিচ্ছে বাংলাদেশে। সামনের বছরগুলোয় ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর ঘূর্ণিঝড় এলে প্রতিবারই খবরের শিরোনাম হয় খুলনার প্রত্যন্ত উপকূলীয় উপজেলা কয়রা। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলা নিয়েই তাদের জীবনযুদ্ধ। কয়রার একেবারে সর্বশেষ ইউনিয়ন দক্ষিণ বেদকাশী। সেখানে আছে সিঙ্গেরটেকের চর, যেটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সেটির চারপাশে বন বিভাগের সাইনবোর্ডও আছে। এখন কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে সেখানে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের তোড়জোড় শুরু করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ট্যুরিজম বোর্ড। এমন কর্মকাণ্ডের ফলে সেখানকার বনাঞ্চল, পরিবেশ, উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য তো হুমকির মুখে পড়বেই, সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আরও বেশি দুর্গতি নেমে আসবে কয়রাবাসীর ওপর। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ছাড়, ঠিকাদার নিয়োগ সবই হয়ে গেছে। অথচ এসবের কিছুই জানানো হয়নি বন বিভাগকে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালাতে হলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। তা না করেই কীভাবে এখানে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে? তা ছাড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এভাবে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেওয়ারও তো প্রশ্ন আসে না। 

একটি জেলায় নদী, বন, পরিবেশ রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা থাকে স্থানীয় প্রশাসনের। আমরা অবাক হচ্ছি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বনাঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্র করার জন্য অতি উৎসাহী ভূমিকা রাখছেন। পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের জন্য দেড় কোটি টাকার বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে। সেই বরাদ্দ দিয়েছে আবার বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে ইউএনও এই পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে সাফাই গাইছেন। পর্যটনকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ ছাড় ও ঠিকাদার নিয়োগ সবই হয়ে গেছে আর তিনি বলছেন গহিন বনে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হবে না, বরং লোকালয়ের কোল ঘেঁষে সড়ক ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। স্থানীয় প্রশাসনের এমন ভূমিকা সন্দেহজনক। আমরা জানি না সেখানে তাদের কী স্বার্থ তৈরি হয়েছে।

খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিনের বক্তব্য, ওই এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। তাহলে কেন আইন না মেনে জোরজবরদস্তি করে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংস করে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও ট্যুরিজম বোর্ড? যেসব পর্যটনকেন্দ্র আছে, সেগুলোর পরিচালনা নিয়েও তো অভিযোগের শেষ নেই তাদের বিরুদ্ধে। এখন কয়রার পরিবেশ ও জনবসতিকে বিপন্নের দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। অবিলম্বে এই পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া বন্ধ করা হোক।