সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

অশান্ত পেঁয়াজের বাজার

সিন্ডিকেট ভাঙার দায়িত্ব কার

বাজারে যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে, তখন মন্ত্রীদের কাছ থেকে আমরা দিকনির্দেশনামূলক কোনো বক্তব্য পাচ্ছি না। তাঁরা একেকজন একেক রকম বক্তব্য দেন, যাতে সাধারণ মানুষ আরও বিভ্রান্তিতে পড়েন।

সম্প্রতি শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বাজেটসংক্রান্ত এক কর্মশালায় বলেছেন, ‘আমি দেখেছি, বাজার করতে গিয়ে অনেকে কাঁদছেন। কারণ, বাজারের যে অবস্থা, তাঁদের পকেটে সে টাকা নেই। এটার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট।’ সিন্ডিকেট নিয়ে কথাবার্তা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু ধরা যাচ্ছিল না।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘মন্ত্রীদের মধ্যেও সিন্ডিকেট আছে।’ তিনি সিন্ডিকেটধারী মন্ত্রীদের নাম জানালে দেশবাসী উপকৃত হতো এবং বাজারেও উথালপাতাল অবস্থার অবসান হতো।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি—দুই বাজারেই দেশি পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে গেছে। এ খবর বিচলিত হওয়ার মতো। প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বৃহস্পতিবার খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২ থেকে ১৫ টাকা এবং পাইকারিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়। ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে পেঁয়াজের বাজারে।

অথচ মাস দুই আগে দেশে পেঁয়াজচাষিদের পক্ষ থেকেই পেঁয়াজ আমদানি না করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। আমদানি করলে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। ভারতেও এবার রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে এবং রপ্তানি না হওয়ায় সেখানকার কৃষকেরা ন্যায্য দাম পাননি বলে দাম কম। ভারতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ রুপিতে (এক রুপি সমান ১ টাকা ২৯ পয়সা)।

গত দুই মাসে এমন কী পরিস্থিতি হলো যে পেঁয়াজের জন্য বাজারে হাহাকার দেখা দিয়েছে। তাহলে কি শিল্প প্রতিমন্ত্রীর ভাষায় পেঁয়াজের বাজারেও সিন্ডিকেট ঢুকে পড়েছে? এর আগে চাল, চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজারে সিন্ডিকেটের কথা শোনা গেছে।

পেঁয়াজের বাজার যখন অশান্ত, তখন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আমাদের আশ্বাসবাণী শোনাচ্ছেন যে মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। তাঁর এই বক্তব্যে এটা স্পষ্ট নয় যে সত্যি সত্যি আমাদের পেঁয়াজের ঘাটতি আছে, নাকি সিন্ডিকেটই কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে।

যদি সত্যিই পেঁয়াজের ঘাটতি থেকে থাকে, তবে আগে থেকে সরকার কেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিল না? এখন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিলেও দাম কমতে সময় লাগবে। এরই মধ্যে সিন্ডিকেট (শিল্প প্রতিমন্ত্রীর ভাষায় মন্ত্রীদের মধ্যেও আছেন) ফাউ মুনাফা লুটে নেবে। সরকার এ ধরনের সিন্ডিকেটকে কতবার বাড়তি ও অন্যায্য মুনাফা নেওয়ার সুবিধা দেবে।

যেখানে কলকাতায় প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ রুপিতে বিক্রি হয়, সেখানে আমাদের এখানে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পেঁয়াজের অশান্ত বাজারে ক্রেতাসাধারণ অসহায়।

সরকারের কাছে পেঁয়াজের চাহিদা ও উৎপাদনের সঠিক হিসাব থাকলে এটি হওয়ার কথা নয়।

পেঁয়াজের বাজার নিয়ে দেশবাসীর তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। এ অবস্থায় দেখি কী হয় বলে সময়ক্ষেপণের সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। সামনে কোরবানির ঈদ আসছে, এখনই পেঁয়াজ আমদানি বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসহ বাজার তদারকিও জোরদার করতে হবে।

দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্য কোনো সিন্ডিকেটের কাছে সরকার বারবার আত্মসমর্পণ করবে, এটা হতে পারে না।